চীনের 'দুই অধিবেশন' সম্পর্কে বাংলাদেশি গবেষক ড. মোস্তাক আহমেদ গালিবের লেখা
  2018-03-14 17:57:36  cri

৩. প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে তাঁর যে নেতৃত্ব সে সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই।

ড. গালিব: জনাব সি চিন পিং একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও প্রাজ্ঞ দেশনায়ক। বাল্যকালে তিনি চীনের বিভিন্ন দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা এলাকায় একটা বড় সময় কাজ করেছেন, খুব কাছে থেকে তাদের চোখ দিয়ে দেখেছেন তাদের। এটি তার অন্যতম একটি বিশেষ গুন। যার সুবাদে তিনি দ্রুত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলোর গভীরে যেতে পারেন এবং বের করতে পারেন একটি সময়োপযোগী সমাধান।

এ বিষয়ে আমি আমার একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই এখানে । কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকারের আমন্ত্রণে আমার গবেষণাদলের পক্ষ থেকে আমরা গিয়েছিলাম হুবেই প্রদেশের সুইযৌতে অবস্থিত লোইয়িয়াং ছুন গ্রাম পরিদর্শনে। গ্রামটি রুক্ষ ও পাহাড়ি, অধিবাসীরা বেশীরভাগই দরিদ্র। গিংকো গাছ, চেস্টনাট জন্মায় এখানে প্রাকৃতিক ভাবেই। আমরা গিয়ে স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডারদের মারফত জানতে পারলাম বর্তমান সরকার এলাকাটিকে ঘিরে একটি ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে হেমন্তে উজ্জ্বল হলুদ বর্ণ ধারণ করা অনিন্দ্যসুন্দর গিংকো গাছ। ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের কারণে পার্শ্ববর্তী বড় শহরগুলো থেকে এখন অনেক শহুরে লোকই এখানে বেড়াতে আসছেন। একদা ঘুমিয়ে থাকা জনপদে গড়ে উঠছে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি, পিছিয়ে থাকা দরিদ্র কৃষকরা হোটেল, মুদিখানা দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে গেছেন রাতারাতি। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া এখানেও লেগেছে। এখানের পাহাড়ে বুনো মধু ,বুনো রেইশী মাশরুম পাওয়া যায়, এগুলো প্রান্তিক চাষিরা পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে এনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করছে শহুরে ভোক্তার কাছে। এর সাথে থাকছে সহজে ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্তির সুবিধা ও সরকারি দুঃস্থ আবাসন প্রকল্প । আমি গ্রামের মোড়লের বাইকে চেপে দেখে এসেছি ডুপ্লেক্স ধরনের সেই সরকারি আবাসন। এই পুরো বর্ণনাটি অনুধাবন করলে বোঝা যায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কিভাবে সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের পথ খোঁজেন, কিভাবে তাঁরা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে "গরিবি হঠাও" আন্দোলনে পাচ্ছেন অবাক করা সাফল্য।

(মা ছেং শহরের দরিদ্র শিশুদের জন্য খেলনার বাক্স হাতে মা ছেং এর একটি প্রত্যন্ত গ্রামের পার্টি অফিসের গেটে  ড.গালিব)

এর পাশাপাশি তাঁর বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণও নির্ভুল। এক্ষেত্রে তাঁর "এক অঞ্চল, এক পথ" প্রকল্পের কথা না বললেই নয়, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১৪০ টি দেশ কোনও না কোনও ভাবে এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত।তাঁর হাত ধরে "চীনা স্বপ্ন" ছুঁয়ে দেখতে চলেছে এই ব্রহ্মাণ্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ লোক। তিনি চান চীনা জনগণের এই নবজাগরণের সুফল চীনা জনগণের সাথে সাথে সারা পৃথিবীবাসীই ভোগ করুক।

৪. চীন বড় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এই দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের উন্নয়নে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বা তাত্পর্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

ড. গালিব: প্রতিটি দেশ,সমাজ ও জাতি একে অপরের থেকে আলাদা। তাদের প্রত্যেকের সমস্যার ধরন কিংবা সমাধানের প্রকৃতিও এক নয়। চীনা সমাজতন্ত্র যাকে বলা হয় "চীনা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সমাজতন্ত্র" তা বিশেষভাবেই কেবল চীনা জনগণের সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে সৃষ্ট। এটি আসলে চীনা জনগণের যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার এক বিরল মহাকাব্য। আমি মনে করি এখানে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য উন্নয়নশীলদেশের জন্য একটি দিকনির্দেশনা আছে- আর তা হলো দেশের বাস্তব সমস্যাগুলোকে পাখির চোখ করে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চীনাদের সাফল্য একটি বেশ ভাল দৃষ্টান্ত হতে পারে এক্ষেত্রে।

৫. কৃষি,কৃষক ও গ্রামের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় চীন সরকার। গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ সংরক্ষণ ও অবকাঠামো নির্মাণের ওপর বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে টয়লেট বিপ্লব। মানে বর্তমানে শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারী ও পুরুষের টয়লেটের কাঠামো অসম্পূর্ণ এবং গ্রামাঞ্চলের অনেক টয়লেটের পরিবেশ আরো উন্নত করতে হবে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি, এটি কি বাংলাদেশের এ ধরনের উন্নয়নের জন্য কোনো তাত্পর্য বহন করতে পারে?

ড. গালিব: আসলে বিষয়টিকে সাদামাটাভাবে টয়লেট বিপ্লব বলে বোঝানো কঠিন। এটি আসলে জীবনমান উন্নয়নের একটি রূপক। সুস্থ জীবনের সাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশবান্ধব বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ধারণাটি সেভাবেই এসেছে। যেহেতু বর্তমান সরকার গ্রাম ও পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোকে উন্নয়নের আওতায় আনতে চাচ্ছে সেহেতু গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও বিশেষ গুরুত্ববহ। যার ফলশ্রুতিতে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে। পাশাপাশি সরকার গ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন ট্যুরিজম প্রকল্পও হাতে নিচ্ছে, যার মধ্যে স্বাস্থ্যকর টয়লেট অন্যতম।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমস্যাটি আরও ব্যাপক এবং এটি সমাধানে সামাজিক সতর্কতার সাথে সাথে সরকারি সুদৃষ্টিরও বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর টয়লেট সমস্যা আরও ভয়াবহ, যেটি অনেকসময় প্রজননতন্ত্রের অনেক জটিল রোগের কারণও বটে।

৬. চীনের 'দুই অধিবেশন' নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?

ড. গালিব: এবারের 'দুই অধিবেশন' চীনা জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ঐতিহাসিক। আমি মনে করি চীনা জনগণের "চীনা স্বপ্ন" বাস্তবায়নে ও "সমৃদ্ধ সমাজ" (সিয়াও খ্যাং শেহুই) গঠনে এবারের দুই অধিবেশন এক বিরাট মাইলফলক হয়ে রইবে।

(সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন ছাওইয়ানহুয়া সুবর্ণা ও এনামুল হক টুটুল)


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040