আব্দুল্লা উলাসিমের গল্প
  2017-07-10 18:50:36  cri


৪৩ বছর বয়সী আব্দুল্লা সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হ্য থিয়ান অঞ্চলের মো ইয়ু জেলার জাওয়া থানার অধিবাসী। তিনি এখন পূর্ব চীনের চিয়াং শি প্রদেশের রাজধানী নান ছাংয়ে ১১টি রেস্তোরাঁর মালিক। আব্দুল্লার বন্ধুরা তাকে 'আবুলাচিয়াং' বলে ডাকেন।

সিনচিয়াংয়ের হ্য থিয়ান আর চিয়াং শির নান ছাংয়ের মধ্যে প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব! ২০ বছর আগে আব্দুল্লা জন্মস্থান থেকে দূরে গিয়ে কাজ শুরু করেন। সে সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'তখন আমরা বেশ গরীব ছিলাম। হাতে মাত্র দশ ইউয়ান পরিমাণ অর্থ থাকতো! পঞ্চাশ ইউয়ানের মুদ্রা খুব কমই দেখেছি! একশ' ইউয়ান তখনও আমি দেখিনি। আমাদের পরিবারে সবাই ছিলো কৃষক। কোন চাকরি ছিলো না। জীবনে কোনো আনন্দ ছিলো না।'

এমন অবস্থায় ২০ বছর আগে একদিন ঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েন আব্দুল্লা। সেবারই প্রথম সিনচিয়াং ছেড়ে বাইরে চলে আসেন তিনি। প্রথমদিকে তার অনেক সমস্যা হয়েছিলো। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা ছিলো অন্যতম। তিনি বলেন, "আমার মা খুব চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলতেন, 'তুমি ম্যান্ডারিন বলতে পারো না, লিখতেও পারো না। সিনচিয়াংয়ের বাইরে হান জাতির বন্ধুদের কথা বুঝতে না পারলে খুব সমস্যা হবে! নিরাপত্তার সমস্যাও রয়েছে। তুমি বাইরে যেও না!' আমি মাকে বলেছি, 'এ বছর আমি বাইরে না গেলে বাসায় থাকতে হবে। আগামী বছরও যেতে পারবো না। তার পরের বছরও না। কিন্তু আমি যদি সাহস করে বাইরে যাই, প্রথম বছরে হয়তো কিছু বুঝতে পারবো না, তবে পরের বছর আমি ঠিকই বুঝতে পারবো।"

এভাবে সাহস সঞ্চয় করে তিনি বাইরে চলে আসেন। প্রথমে তিনি পূর্ব চীনের চিয়াং সু প্রদেশের রাজধানী নান চিং যান। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "১৯৯৭ সালে আমি একা বাইরে যাইনি। তখন বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। আমরা আখরোট, বরই ও আঙ্গুর বিক্রি করতাম। বস্ আমাকে শেখালেন, ক্রেতা এসে যদি প্রশ্ন করে 'আঙ্গুর কীভাবে বিক্রি হয়?' তখন উত্তর দিতে হবে, 'দুই ইউয়ান এক লিয়াং (ওজনের ইউনিট)। রাতের বেলা বার বার এ বাক্য মুখস্থ করতাম। তা ছাড়া, আমি কিছু বলতে পারতাম না। যখন প্রথম ক্রেতা আসলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কোথা থেকে এসেছো?' আমি বলেছি, 'দুই ইউয়ান এক লিয়াং।' যে কোনো ক্রেতা আমাকে যা-ই জিজ্ঞেস করুক-না-কেন, আমি জবাবে বলতাম, দুই ইউয়ান এক লিয়াং।"

এ গল্প বলতে বলতে তিনি নিজেই হেসে ওঠেন। প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও তা খুব আনন্দদায়ক ছিলো। কারণ তিনি পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করেছেন। প্রথম বছর তিনি দু'হাজার ইউয়ান আয় করেন। দ্বিতীয় বছর তিন হাজারের বেশি ইউয়ান আয় করেন। তৃতীয় বছর আয় করেন পাঁচ হাজার ইউয়ান। এ খবর শুনে তার মা খুব খুশি হয়েছেন।

২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে বাসায় ফিরে কিছুদিন বিশ্রাম নেন আব্দুল্লাহ। তারপর আবার বাসা ত্যাগ করেন তিনি। তিনি স্ত্রী রোজ নিশাখনের সঙ্গে সিনচিয়াং থেকে রেলগাড়ি করে চিয়াং শি প্রদেশের নান ছাংয়ে যান। সে বছর তারা নান ছাংয়ে কিশমিশ বিক্রি করে প্রায় ৪০০০ ইউয়ান আয় করেন। ২০০৬ সালে আব্দুল্লা হঠাত্‌ এক সুযোগে চ্য চিয়াংয়ের সিয়াও শানে যান। রাস্তার পাশে এক প্যানকেক স্টলের ভালো ব্যবসা দেখে আব্দুল্লা বেশ অনুপ্রেরণা পান। তিনি সেই প্যানকেক স্টলের মালিকের কাছে তাকে প্যানকেক তৈরির কৌশল শেখানোর অনুরোধ করেন। এতে রাজি হন তিনি। প্যানকেক তৈরি শিখে তিনি আবার নান ছাংয়ে ফিরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্যানকেক তৈরির ছোট একটি স্টল খোলেন। তিনি বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল, এ তিনটি বছর ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। টাকা উপার্জনের পাশাপাশি নান ছাংয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন তিনি। যা পরবর্তীতে তার ব্যবসার জন্য সহায়ক হয়েছিলো।

1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040