উইগুর জাতিতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। 'ভালো মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে তোমার ফুল সুন্দর করে ফুটবে'। এখন আব্দুল্লা প্রায় বলেন, দীর্ঘ এ সময়ে তার প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সাহায্য ছাড়া, নান ছাংয়ে তার কোনো কাজ সফল হতো না।
২০১০ সালে আব্দুল্লা একটি ঘর ভাড়া করে তার প্রথম কাবাবের রেস্তোরাঁ খোলেন। সন্ধ্যা বেলায় কাবাবের রেস্তোরাঁয় ভিড় হয়। আব্দুল্লার মেয়ের বয়স তখন ১২ বছর। প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণী পড়তো সে। তার বাবা-মার চীনা ভাষা ভালো না। মেয়ের স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজে কোন সমস্যা হলে বাবা-মা তাকে সাহায্য করতে পারতো না। তখন মেয়ে কাঁদতো। বাবা-মাও কাঁদতেন। এ সময় তার প্রতিবেশী লো কুও লিয়ান এ পরিবারটিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তার মেয়ে লো কুও লিয়ানকে মা ডাকে। লো কুও লিয়ান তাকে চীনা ভাষা শেখায়, গোসল করায়, নুডুলস রান্না করে খাওয়ায়। বসন্ত উত্সবের সময় তাকে দেশের বাড়িতে নিয়ে যান লো কুও লিয়ান।
আব্দুল্লা বলেন, গেল বছরগুলোতে অনেক লোক তাকে সাহায্য করেছেন। তিনিও বাবা-মার কথা সবসময় মনে রেখে অন্যকে যথাসাধ্য সহায়তা করে আসছেন। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে তিনি খাসির মাংস ও টাকা নিয়ে নান ছাংয়ের ১৫টি দরিদ্র পরিবার, অসহায় বয়স্ক মানুষ এবং প্রতিবন্ধীদের দেখতে যান।
তিনি বলেন, "আমরা নান ছাংয়ে আসার সময় হাতে মাত্র ৪০ ইউয়ান ছিলো। তখন ভালো খাবার খাওয়ার মতো অবস্থা ছিলো না। এক বেলায় হয়তো মাত্র দু'টি ভুট্টা খেতাম। এখন আমার টাকা আছে। নান ছাংয়ে কোন বন্ধু, ভাই, বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধীর সমস্যা দেখলে আমার কষ্ট হয়। সবাই আনন্দে থাকলে আমি প্রকৃত আনন্দ বোধ করি। তাই আমি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি।"
আব্দুল্লার চারটি সন্তান আছে। তার বড় ছেলে মাইমাইডির বয়স এখন ২০ বছর। সেও বাবার রেস্তোরাঁয় কাজ করে। সে জানায়, বাবা-মা প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক সভার আয়োজন করেন। সন্তানদের বলেন, স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে এবং অন্যকে সাহায্য করতে।
এখন আব্দুল্লার মা ৭৯ বছরে পা দিয়েছেন। তিনি এখনো সিনচিয়াংয়ে আছেন। আব্দুল্লা বলেন, মার বয়স দিন দিন বাড়ছে। প্রথমদিকে আমরা তিন বছরে একবার সিনচিয়াংয়ের বাসায় ফিরে যেতাম। তখন আমাদের হাত টাকা খুব কম ছিলো। আসা-যাওয়ায় অনেক খরচ হতো। এখন আমরা প্রতি বছর মাকে দেখতে বাসায় যাই।
এখন নান ছাংয়ে আব্দুল্লার ১১টি রেস্তোরাঁ আর ১০টি খাবার স্টল আছে। তার রেস্তোরাঁয় অনেক কর্মী সিনচিয়াং থেকে এসেছেন। তারা হলেন স্বদেশি ও আত্মীয়স্বজন।
বর্তমান চীনে এমন ভাসমান জনসংখ্যা ২৪ কোটির বেশি। অর্থাত্ প্রতি ছয় জন চীনার মধ্যে একজন দেশের বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করছেন। তারা শহরের নির্মাণকাজে অংশ নেন। পরিবারের জন্য তারা পরিশ্রম করেন। ব্যস্ত শহরের বুকে তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করছেন। তারা কখনও জন্মস্থানের কথা ভুলে যান না। তারা জানেন, বিশাল ওই আকাশের নিচে তাদের জন্যও সুখী জীবন অপেক্ষা করছে! (ইয়ু/ তৌহিদ)