চীনা গল্প: নিউলাং ও জিনুই'র কাহিনী
  2017-02-12 17:02:38  cri

এদিকে একদিন জিনুই রান্না করছিল আর তখন নিউলাং দৌঁড়ে আসে। তাঁর চোখ লাল আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলার স্বরে স্ত্রীকে বলল, "গরু ভাই মারা গেছে। মৃত্যুর আগে আমাকে বলল, তার মৃত্যুর পর যেন তাঁর চামড়া কেটে ভালোভাবে সংরক্ষণ করি। কেননা একদিন তার চামড়ার পিঠে চড়েই আকাশে উড়ে যেতে পারবো।"

নিউলাংয়ের কথা শুনে জিনুই বুঝতে পারলো এই গরুটি আর কেউ নয়, স্বয়ং স্বর্গের তারা টরাস। স্বর্গে তাদের প্রেমের পক্ষে কথা বলা জন্য তাকেও স্বর্গভ্রষ্ট হতে হয়েছিল। কিন্তু সে কেন হঠাত্ মরে গেল তার রহস্য বুঝতে পারে না কিছুতেই। এদিকে নিউলাং গরুর কথার মতো তার চামড়াটি সংরক্ষণ করে রাখে।

ঠিক এসময় আকাশে হঠাত্ প্রবল ঝড় শুরু হলো, চারদিক ঘোর অন্ধকার হয়ে যায় নিমিষেই। এরই মধ্যে তুমুল বেগে একদল স্বর্গের সৈন্য এসে কোন কথা না শুনে জিনুইকে জোর করে স্বর্গের পথে তুলে নিয়ে যায়। স্বর্গের দিকে উড়তে উড়তে জিনুইয়ের কানে ভেসে আসলো নিউলাংয়ের বেদনার্ত কণ্ঠস্বর। "জিনুই, আমিও আসছি, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো।"

জিনুই পিছনে ফিরে দেখলো নিউলাংয়ের কাঁধে বাঁশের তৈরি দুটি বড় ঝুড়ি রয়েছে। ঝুড়িতে বসে আছে তার দুই সন্তান। তারা গরুর গায়ের চামড়ায় ভেসে ভেসে তাদের পিছু নিয়েছে। তারা প্রায় জিনুইয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে, জিনুইও এবার তাদের স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। বাচ্চারা এবার হাত খুলে চিত্কার করে ডাকতে শুরু করলো, "মা, মা।" নিউলাংও যেন এবার প্রায় জিনুইকে ধরে ফেলবে, এমন সময়ে- স্বর্গের রাণী একটি শুভ মেঘ নিয়ে এসে দাঁড়ায় নিউলাং ও জিনুইয়ের মাঝখানে। তারপর তিনি মাথার সোনালী চুলের কাটা দিয়ে মেঘের ওপর এক লাইন আঁকে। অমনি তাদের মধ্যে সৃষ্টি হল এক বিশাল নদী । নিউলাং এবার আর সে নদী পার হতে পারলো না।

জিনুই আকাশের নদীর ওপারের আর নিউলাং ছেলেমেয়েদের নিয়ে এপারে। নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে মা, বাবা আর ছেলেমেয়েদের কান্নায় সমস্ত আকাশ বাতাস যেন ভারী থমথমে হয়ে উঠল। বাচ্চাদের কান্না আর 'মা, মা' ডাক শুনে আশেপাশে দাঁড়ানো সব পরী আর স্বর্গীয় দেবতাদের মনও যেন কেঁদে উঠলো। প্রেম আর সন্তানদের এমন ভালবাসার দৃশ্য দেখে স্বর্গের রাণীর মন প্রীত হয়, মুগ্ধ হয় খাঁটি ভালবাসার এই অপূর্ব দৃশ্য দেখে। তাই তিনি নিউলাং ও বাচ্চাদের স্বর্গে থাকতে অনুমতি দেয় তবে তারা নদীর ওপারে থাকবে এবং প্রতি বছর একবার অর্থাত্ সপ্তম মাসের সাত তারিখেই কেবল বাবা মা আর সন্তানেরা একত্রে মিলিত হতে পারবে। তখন থেকে নিউলাং ও তার ছেলেমেয়ে আকাশে থাকে।

শরত্কালের রাত্রে আকাশে ঝিকিমিকি করা তারাগুলোর মধ্যে দুটি অপেক্ষাকৃত বড় তারা হচ্ছে জিনুই তারা আর ছিয়াননিউ তারা। আর সেই আকাশের নদীটি হচ্ছে, যাকে বলি আমরা ছায়াপথ। আকাশ-নদীর দুই পাড়ে অর্থাত্ ছায়াপথের দু'পাড়ে থাকে জিনুই আর ছিয়াননিউ। ছিয়াননিউ তারার সাথে আরো দুটি ছোট তারা রয়েছে। এ দুটো হচ্ছে তাদের ছেলে মেয়ে।

চীনের চান্দ্র পঞ্জিকার সপ্তম মাসের সাত তারিখে দল বেধে অসংখ্য দোয়েল এসে তাদের জন্য এক বিশাল সেতু তৈরী করে। এরপর নিউলাং আর জিনুই সেই সেতুর ওপর মিলিত হয়ে পরস্পরকে ভালবাসে আর বাচ্চাদেরকে আদর আলিঙ্গনে ভরিয়ে দেয়।

সেই থেকে প্রতি বছরের সপ্তম মাসের সাত তারিখে নিউলাং ও জিনুইয়ের পুনর্মিলনের দিনে চীনা মেয়েরা চাঁদের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশের ছায়াপথের দু'পারের নিউলাং তারা ও জিনুই তারাকে খুঁজে বেড়ায়। সবাই এ দুই প্রেমিক ও প্রেমিকার পুনর্মিলন দেখতে অধীর আগ্রহ প্রকাশ করে অপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে। আর স্বর্গের দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করে যেন, তাদের জীবনটাও জিনুইয়ের আর ছিয়াননিউর মতো খাঁটি প্রেমময় হয়ে ওঠে। যেন তারাও তাদের জীবনে খুঁজে পায় সত্যিকার ভালবাসার মানুষটিকে। সেই থেকে এদিনটি চীনের ভালোবাসা দিবসে পরিণত হয়েছে।


1 2
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040