20160518yinyue.mp3
|
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন চীনের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হান হোংয়ের কণ্ঠে 'জলপাই গাছ' নামে গান। বলা যায়, এ গানটি চীনের পপ সংগীত জগতের একটি সর্বোত্কৃষ্ট গান । গানের কথা লিখেছেন তাইওয়ানের বিখ্যাত লেখিকা সান মাও, সুর করেছেন লি থাই সিয়াং। ১৯৭৩ সালে এ গানটি রচিত হয়। এ গানটি তাইওয়ানের চলচ্চিত্র 'হাসিমুখ' এর থিম সং ছিল। এ চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে সাথে 'জলপাই গাছ' নামের গানটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। দীর্ঘকাল ধরে চীনের তাইওয়ান ও মূলভূখণ্ডের অনেক কণ্ঠশিল্পী এ গান গেয়েছেন।
সান মাও
গানে বলা হয়েছে, আমাকে জিজ্ঞেস করো না, আমি কোথা থেকে এসেছি। আমার জন্মস্থান সুদূরে। আমাকে জিজ্ঞেস করো না, আমি কেন একাই ঘোরাঘুরি করছি? আমি আকাশে উড়ন্ত পাখির জন্য, পাহাড়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদীর জন্য, বিশাল তৃণভূমির জন্য, আমি অনেক দূরে ঘোরাঘুরি করি। আরো আছে, স্বপ্নের জলপাই গাছ।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা তাইওয়ানের লেখিকা সান মাওয়ের লেখা 'জলপাই গাছ' নামে গান শুনলেন। সান মাও আমার প্রিয় লেখিকা। তার কাল্পনিক জীবন এবং তার বইগুলো অনেক কিশোর ও কিশোরীকে প্রভাবিত করেছে। যখন আমি মাধ্যমিক স্কুলে পড়তাম, তখন সান মাওয়ের সব বই পড়েছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের কাছে সান মাওয়ের পরিচয় তুলে ধরবো।
সান মাওয়ের আসল নাম চেন মাও পিং, তিনি বাবা-মার দেওয়া এ নামটি পছন্দ করতেন না, তাই তিনি নিজেই তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ছৌংছিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে বাবা-মার সঙ্গে তাইওয়ানে চলে যান। ১৯৬৭ সালে তিনি স্পেনে গিয়ে লেখাপড়া করেন, ওখান থেকে আবার জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র সহ নানা জায়গায় যান। ১৯৭৩ সালে তিনি স্প্যানিশ নাগরিক জোসে মারিয়া রুইজকে বিয়ে করেন এবং স্থানীয় মরুভূমিতে বসবাস করা শুরু করেন। স্থানীয় জীবন নিয়ে তিনি অনেক জনপ্রিয় প্রবন্ধ লিখে সুনাম অর্জন করেন। দুঃখের ব্যাপার, ১৯৭৯ সালে তার স্বামী জোসে উত্তর আফ্রিকায় ডাইভিংয়ের সময় মারা যান। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ১৯৮১ সালে তিনি তাইওয়ানে ফিরে গিয়ে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা শুরু করেন। ১৯৯১ সালের ৪ জানুয়ারি ৪৮ বছর বয়সী সান মাও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এখনো মনে আছে, ১৯৯১ সালের ৫ জানুয়ারি আমি বাসায় ছিলাম, আমার এক বান্ধবী দূর থেকে আমাকে ফোন করে এ খবর জানান। ফোনের ওপারে তিনি শুধু কান্না করতে থাকেন। আমার মনে হয়, সে কয়টি দিন চীনের অনেক পাঠক সান মাওয়ের জন্য চোখের জল ফেলেছেন।
সান মাও আর তার স্বামী
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন চীনের মঙ্গোলীয় জাতির গায়ক থেগেরের গাওয়া 'সান মাও' নামে গান। তিনি সান মাও স্মরণে এ গানের সুর করেছেন, গানের কথা লিখেছেন চাং নান।
তিনি গেয়েছেন, 'সান মাও নামে সে মেয়ে অনেক দূর থেকে এসেছে। তার লম্বা চুলের মধ্যে হালকা বেদনা রয়েছে। সে বলেছে, বাসায় নির্জন, একাকী বোধ করে। ফলে একাই বাইরে আসে। সান মাও প্রত্যেক জনকে জানিয়েছে, বর্ষাকাল আর আসবে না। সান মাও বিদায় নিয়ে সুদূরে চলে গেছে। আমি আশা করি, সে ফিরে আসতে পারে।'
সান মাওয়ের ইংরেজি নাম ইকো। সান মাও হচ্ছে তার ছদ্মনাম। কারণ তিনি চীনের লেখক চাং লো পিংয়ের 'সান মাও ভ্রমণের কাহিনী' খুব পছন্দ করেন, ফলে নিজেকে সান মাও নাম দেন। তার পদচিহ্ন সারা বিশ্বে রয়েছে। তার জীবনে ২৪টি নিজের বই ও অনুদিত বই রয়েছে। সারা বিশ্বের চীনা সমাজে তার লেখা অনেক প্রচলিত এবং জনপ্রিয়।
'লাল ধুলো' হচ্ছে সান মাওয়ের লেখা প্রথম চীনা ভাষার নাটক এবং তার শেষ কর্ম। এ নাটকে জাপানের আগ্রসনবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের সময় লেখিকা শেন শাও হুয়া এবং বিশ্বাসঘাতক চাং নেং ছাই এর প্রেম বর্ণিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক ইয়ান হাও এ নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপদান করেন। তত্কালীন বিখ্যাত অভিনেত্রী লিন ছিং সিয়া, চাং মান ইয়ু এবং অভিনেতা ছিন হান এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর সমাজে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি হয়। এখন শুনুন এ চলচ্চিত্রের প্রধান গান। গানের নাম 'লাল ধুলো'।