চেন সিয়াও ছি'র সংগীত কর্ম বিষয়ক সংগীতানুষ্ঠান
২০১২ সালের মে মাসে কুয়াংশি হোচৌ সাহিত্য ফেডারেশন 'হাক্কা সংস্কৃতি' সম্পর্কে একটি গান লেখার জন্য চেন সিয়াও ছিকে অনুরোধ করে। সে সময় চেন সিয়াও ছির মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জুন মারা যান। মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে চেন সিয়াও ছি মাকে নিয়ে একটি গান লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, 'আমার মায়ের বাড়ি চিয়ে শিতে। তিনি হাক্কাবাসী নন, তবে আমি মেই চৌতে বড় হয়েছি। আমি অনেক হাক্কা আম্মা দেখেছি। আমি মনে করি, হাক্কা আম্মাও মহান আম্মা। তিনি দিনের অর্ধেকটা সময় ব্যয় করে 'হাক্কা আম্মা' গানের কথা লেখেন। চার পাঁচ দিন সময় ব্যয় করে তিনি এ গানটির সুর করেন। বন্ধুরা, শুনুন গায়ক হান ওয়েইয়ের গাওয়া 'হাক্কা আম্মা' নামে গান।
গানে বলা হয়েছে, 'সে বছর তোমার দৃষ্টিতে আমি বাসা ত্যাগ করি। আমার ব্যাগের মধ্যে তোমার স্নেহ ও মমতা ভরে আছে। তুমি আমাকে বলো, হাক্কাবাসীদের কোনো ভয় নেই। পর্বত বা সড়ক সবই আমাদের পায়ের নিচে। এক দিন তোমার জন্য আমি বাসায় ফিরে এসেছি। তোমার চুল সাদা হয়েছে। তুমি আমাকে বলো, হাক্কাবাসীর মন বিশ্বের সীমানায়, এ পুরোনো ঘরের মধ্যে আটকে থাকবে না। মা, আমার প্রিয় মা, আমি তোমার চোখের জল দেখতে পেরেছি। আমি বুঝেতে পেরেছি, তোমার ভালোবাসা কত গভীর।'
চেন সিয়াও চি 'চীনের সেরা দশজন গীতিকার পুরস্কার', 'চীনের শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ পুরস্কার', 'চীনের স্বর্ণ ডিস্ক পুরস্কার' পেয়েছেন।
গান রচনার পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন নাটকও তৈরি করেন। ১৯৯৮ সালে তার প্রযোজিত বিশ পর্বের টেলিভিশন নাটক 'বোন' চীনের স্বর্ণ ঈগল পুরস্কার পায়। তা ছাড়া, চেন সিয়াও ছি একজন হস্তলিপিকারও। ১৯৯৭ সালে কুয়াংতুং চিত্র প্রদর্শনী কেন্দ্রে চেন সিয়াও ছির ব্যক্তিগত হস্তলিপিকর্মের প্রদর্শনী হয়।
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'আজকের জন্য উল্লাস' নামে গান। গেয়েছেন লিন পিং।
চীনের পপ সংগীত উন্নয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে চেন সিয়াও ছি বলেন, চীনের পপ সংগীত শুরু হয়েছে কুয়াংতুং প্রদেশ থেকে। ১৯৭৭ সালে কুয়াংতুংয়ে প্রথম হালকা সঙ্গীত ব্যান্ড গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে সংগীত ক্যাফে আবির্ভূত হয়। কুয়াংতুংয়ের সর্বপ্রথম পপ সংগীত হালকা সঙ্গীত ব্যান্ড আর সংগীত ক্যাফে থেকে শুরু হয়। প্রথম দিকে সংগীত ক্যাফে মূলত হংকং ও তাইওয়ানের গান প্রচার করতো। পরে আস্তে আস্তে মূলভূখণ্ডের পপ সংগীতও প্রচারিত হয়। চীনের মূলভূখণ্ডের পপ সংগীত সৃষ্টির প্রথম উন্নয়ন সামিট বেইজিংয়ে হয়। তারপর কুয়াংতুংয়ে চলে যায়। সে সময় কুয়াংতুংয়ের গান এবং গায়ক-গায়িকা চীনে খুব জনপ্রিয় ছিল। যেমন মাও নিং ও ইয়াং ইয়ু ইং।
বন্ধুরা, এখন আপনারা ইয়াং ইয়ু ইংয়ের কণ্ঠে 'আমি বলতে চাই না' নামে গান শুনছেন। এ গানটি বিংশ শতাব্দীর ৯০'র দশকে 'দর্শকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশনের গান' নির্বাচিত হয়।
ইন্টারনেট প্রচলিত হওয়ার পর চীনের সংগীত জগতের পরিবেশও অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। সংগীত সৃষ্টি এখন আগের মতো কেবল পেশাদার ব্যক্তিদের কাজ নয়। সাধারণ মানুষ সংগীত পছন্দ করলে ইন্টারনেটে নিজের কণ্ঠে গান প্রচার করতে পারে।
চেন সিয়াও ছি বলেন, 'এখন প্রতি বছর চীনে এক লাখ দুই লাখ নতুন গান বের হয়। অতীতে এমন অবস্থা ভাবা যেতো না। তবে এত বেশি সংগীত কর্ম একসাথে থাকার কারণে ভালো কর্মের জনসাধারণের দৃষ্টি অর্জন করাও অনেক কঠিন। আগে কোনো নতুন গান বা নতুন কণ্ঠশিল্পী বাজারে প্রবেশের আগে ডিস্ক কোম্পানির প্রযোজক পরীক্ষা করে যাচাই করতেন। এখন ইন্টারনেট যুগে এ সুযোগও নেই।'
বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের কাছে চীনের বিখ্যাত গীতিকার চেন সিয়াও ছির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছি। অনুষ্ঠানটি আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/টুটুল)