20160415yinyue.mp3
|
চীন প্রাচীনকাল থেকে একটি বহুজাতিক দেশ। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রীয় সরকার মোট ৫৬টি জাতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। হান জাতি চীনের বৃহত্তম জাতি। চীনের অন্যান্য জাতির জনসংখ্যা কম বলে সাধারণত সংখ্যালঘু জাতি বলা হয়। চীনের সংখ্যালঘুজাতিগুলো প্রধানত সিনচিয়াং, সিছুয়ান, কানসু এবং ইনার-মঙ্গোলিয়াসহ নানা অঞ্চলে বসবাস করেন। জাতিগত অঞ্চলের স্বশাসন ব্যবস্থা হচ্ছে চীন সরকারের দেশের বাস্তব অবস্থা অনুসারে নির্ধারিত এক মৌলিক নীতি। চীনে মোট ১৫৫টি জাতিগত স্বশাসন অঞ্চল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ৫টি, স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ ৩০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত জেলা ১২০টি। চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘুজাতির মধ্যে ৪৪টি জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল রয়েছে। বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতির নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে। তাদের পোশাক ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন, দৈনন্দিন জীবনের রীতিনীতিও ভিন্ন।
দাই জাতির পানি ছিটানো উত্সব
বন্ধুরা, এখন আপনারা 'দাই' জাতির পানি ছিটানো উত্সবের সংগীত শুনছেন। পানি ছিটানো উত্সব দাই জাতির নববর্ষ এবং তাদের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সব। দাই জাতির লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন। তারা মনে করেন, পানি সবচেয়ে পবিত্র। এ উত্সবের তিন চার দিনে পরস্পরকে পানি ছিটানোর মাধ্যমে নতুন বছরের সুখ শান্তি কামনা করা হয়।
প্রিয় বন্ধুরা, তিব্বতী জাতি প্রধানত চীনের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে বসবাস করেন। তাদের নিজস্ব ভাষা ও অক্ষর আছে। তিব্বতী জাতি হি-না-ইয়ানা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। খ্রিস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম ভারত থেকে তিব্বতে প্রবেশ হয়। তিব্বতী জনগণ সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, চিত্র, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যসহ নানা ক্ষেত্রে প্রচুর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সৃষ্টি করেছে।
তিব্বতী জাতির নববর্ষ
তিব্বতী জাতির নিজেদের ক্যালেণ্ডার আছে। তিব্বতী ক্যালেণ্ডার এবং চীনের হান জাতির চান্দ্র পুঞ্জিকা কাছাকাছি। সাধারণত হান জাতির বসন্ত উত্সবের কয়েক দিন পর তিব্বতী পুঞ্জিকার নববর্ষ আসে। নববর্ষের আগের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে প্রতি পরিবার বাড়ির নোংরা পানি ও আবর্জনা বাইরে ফেলে দেয়। এর অর্থ পুরোনো জিনিস বিদায় করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো। নতুন বছরে সমৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য শুভ কামনা করা হয়।
বন্ধুরা, চুয়াং জাতি হচ্ছে চীনে সবচেয়ে জনবহুল সংখ্যালঘু জাতি। অর্থাত্ চীনের দ্বিতীয় বড় জাতি। এ জাতি প্রধানত কুয়াংশি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল, ইয়ুননান প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, কুয়াংতোং, কুইচৌ আর হুনান ও কুয়াংশি প্রদেশের সংলগ্ন স্থানে বসবাস করে। ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলেও এ জাতির লোক আছে। এ জাতির প্রায় ৯০ শতাংশ লোক চুয়াং ভাষা বলেন।
চুয়াং জাতির মেয়েরা
চুয়াং জাতি এবং হান জাতি একই সময় বসন্ত উত্সব পালন করে। বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতে চুয়াং জাতির লোকেরা এক ফুট লম্বা ও প্রায় তিন কেজি ওজনের ওয়ানপা নামের এক ধরনের বিশেষ খাবার রান্না করেন। বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন সূর্য ওঠার আগে লোকজন ঘুম থেকে উঠে নতুন কাপড় পড়ে পটকা ফুটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। নারীরা নদী বা কুয়ায় 'নতুন বছরের নতুন পানি' আনতে যান। এভাবে তাদের নতুন বছরের জীবন শুরু হয়। এখন আপনারা শুনুন চুয়াং জাতির গায়ক আলোংয়ের গাওয়া 'আজ নববর্ষ' নামের গানটি।
ঈ জাতি চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে অপর একটি বড় জাতি। এ জাতি প্রধানত ইয়ুননান, সিছুয়ান, কুইচৌ এবং কুয়াংশি এ কয়েকটি প্রদেশে বসবাস করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং ফ্রান্সেও অনেক ঈ জাতির লোক রয়েছেন।
ঈ জাতির ছেলেরা
ঈ জাতির নববর্ষ হচ্ছে চীনের চান্দ্র পুঞ্জিকার দশম মাসের শেষ দিকে। কোনো কোনো অঞ্চলে চান্দ্র পুঞ্জিকার দশম মাসের ৩০ তারিখে নববর্ষের আগের দিন নির্ধারিত হয়। যারা গেল বছরে কোনো দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বা অসুস্থ হয়েছে তারা নতুন বছরের ওপর অনেক ভরসা রাখেন এবং নির্ভর করেন। যদি নতুন বছর শুরু হওয়ার পর আরো দুর্যোগ ঘটে বা মহামারি হয়, তাহলে ঈ জাতির লোকেরা বছরের মাঝামাঝি সময় আরেকবার নববর্ষ উদযাপন করেন। তখন শিশুরা কাঠিকে অস্ত্র হিসেবে হাতে নিয়ে গ্রামের মোড়ে নির্মিত দৈত্যের ভবনে আক্রমণ চালায়। ঠিক যেন দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করার মতো। অবশেষে শিশুরা দৈত্যের ভবন ধ্বংস করে ফেলে। এভাবে গ্রামের অধিবাসীদের মনে নতুন ভরসা সৃষ্টি হয়। বন্ধুরা, এখন শুনুন লি ইউয়ান পাংয়ের কণ্ঠে 'ঈ জাতির কিশোর' নামে একটি গান।