20160331yinyue.mp3
|
প্রিয় বন্ধু, আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে? দীর্ঘকাল ধরে অনেকের মনে বাবা সবসময় গভীর, নিরব, কঠোর মূর্তির মত। চীনে বাবারা সাধারণত পরিবার ও চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সন্তানের সঙ্গে মত বিনিময় ও খেলার সময় খুব কম তাদের। আমরা সাধারণত মায়ের আদর বেশি পাই।
২০১৩ সালের অক্টোবরে চীনের হুনান প্রদেশের টেলিভিশন কেন্দ্র 'বাবা কোথায় যাবেন' নামে রিয়্যালিটি শো প্রচার শুরু করে। এ অনুষ্ঠানে সাধারণত পাঁচজন জনপ্রিয় অভিনেতা বা খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। তারা নিজের অল্প বয়সি সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নানা ধরনের কাজকর্ম করেন।
এ অনুষ্ঠানে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি বাবা কীভাবে সন্তানকে শিক্ষা দেন বা দায়িত্ব পালন করেন তা দেখতে পাই। বাবা ও সন্তান একসঙ্গে নানা কাজ করার মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই সন্তানের প্রতি বাবার কঠোর দাবি ও গভীর ভালোবাসা রয়েছে। আমরা বাবার মন ও গভীর স্নেহ উপলব্ধি করতে পারি। এ অনুষ্ঠানটি দেখে বাবার প্রতি অনেক দর্শকদের মনে কৃতজ্ঞতাবোধ জেগে উঠেছে। তারকা বাবাদের শিক্ষাদানের কিছু কিছু পদ্ধতি জনসাধারণ ও শিশু বিষয়ক শিক্ষাবিদদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনাও সঞ্চার করেছে। অনেক তরুণ বাবা-মা এ অনুষ্ঠান থেকে শিশু লালন-পালন করার অনেক নতুন জ্ঞানও অর্জন করছেন।
এ অনুষ্ঠানের প্রধান গান 'বাবা কোথায় যাবে' চীনে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এ গানের চীনা ভাষা আর ইংরেজী ভাষার দুটি সংস্করণ রয়েছে। চীনা ভাষার এ গানে শিশু ও বাবার কথোপকথন শোনা যায়। আর ইংরেজী ভাষার গানটিতে আমোস নামের একজন কন্ঠশিল্পী 'বাবা কোথায় যাবে'-এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বন্ধুরা, তা হলে শুনুন বাবাকে নিয়ে চমত্কার এ গানটি
চীনে বাবা-মা সাধারণত সামনাসামনি নিজের সন্তানকে প্রশংসা করেন না। বিশেষ করে, চীনা বাবা ছেলেমেয়েকে ভালোবাসলেও মুখে তা বলেন না কখনোই। তারা সন্তানকে ভালোবাসার কথা সহজে বলেন না। এমন কী নিজের ছেলেমেয়েকে পছন্দ হলেও অনেকে হয়তো কখনো সক্রিয়ভাবে সন্তানকে চুমুও দেন না। কারণ তাদের এ অভ্যাস নেই।
হংকংয়ের লেখক ওয়াং ওয়েই ওয়ান 'সাইকেল' নামে একটি গান লিখেছেন। তিনি বলেছেন, 'যখন আমি প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম তখন একদিন আমার বাবা আমাকে সৈকতে বেড়াতে নিয়ে যান। বাবার একটি সাইকেল ছিল। আমি সাইকেলের পিছনে বসে বাবার কোমর জড়িয়ে ধরি। বলা যায়, এ সাইকেলের মাধ্যমে আমার জীবনে প্রধমবারের মত বাবাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পাই। তবে দূ:খের ব্যাপার হলো, সে বছর শরত্কাল শুরুর আগেই সাইকেলটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেই গ্রীষ্মকাল অতি স্বল্প ছিল। বড় হওয়ার পর আমি 'সাইকেল' নামে একটি গান লিখেছি। এ গানটি শুধু আমার বাবার প্রশংসার জন্য নয়; আমি বিশ্বের সকল বাবাকে শোনাতে চাই। আমি লেখক হবার পর দশ বছর ধরে প্রায় ৯০০টি গানের কথা লিখেছি। আমার বাবা-মা, আমার ছোট ভাই, কখনো আমার এক বাক্যও প্রশংসা করেনি। ভাল কাজ করতে পরে আমি আরো বেশি প্রচেষ্টা চালাই। আশা করি, বাবা-মা ছাড়া অন্য লোকেরা আমার গানগুলো পছন্দ করবেন। এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এখন শুনছেন চেন ঈ শুনের কণ্ঠে 'সাইকেল' নামের গানটি। এ গানে বলা হয়েছে, 'তুমি এ সব কাজ আমার জন্য করেছ। কেন আমি অনুভব করতে পারি না। তুমি কখনো ভালোবাসার কথা বলনি। কেবল একবার সাইকেলের ওপর বসে তোমার পিঠ জড়িয়ে ধরার স্মৃতি আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। শিশু তার বাবার কাঁধে থাকতে পারলে কি আর নিচে নামতে চায়'!
প্রিয় শ্রোতা, আমরা ছোটবেলায় বাবা-মার কোল ছাড়তে চাইনি। কিন্তু বড় হলে বাবা-মা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলেও অনেক সময় আমরা কাজে ব্যস্ত থাকি। বাধ্য হয়ে নানা কাজের কারণে বাসা থেকে অনেক দূরে যেতে হয়।
চীনের শিল্পী লি চিয়ান 'পিতা' নামে একটি গান লিখেছেন। তিনি বলেছেন, 'এ গান হলো আমার বাস্তব জীবনের রেকর্ড। আমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাকরি ও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় বাবা-মার কাছে থাকতে পারি না। এ কারণে দুঃখবোধ করলেও আত্মমর্যাদার কারণে বাবার কাছে কিছু বলতে পারিনি। এখন এ সব কথা আমার গানের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই'।
তিনি গেয়েছেন, 'নদীর তীরে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে তোমার স্নেহ ও মায়াভরা চোখ আমার মনে পড়ে। তোমার হাতে আমার স্বর্ণ কৈশোর গড়ে উঠেছে। আমাকে মাফ করো, বড় হওয়ার পর আর তোমাকে আলিঙ্গন করিনি। তুমি আমার জন্য গর্ববোধ করো। কিন্তু আমি কখনো তোমার জন্য গর্ববোধ করিনি বাবা। তুমি চলে যাওয়ার বহু বছর পর আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি কত উদার। আমি এ জন্য চিরস্থায়ীভাবে লজ্জিত বাবা। তোমার কথা বলে এখন আমি গর্বিত খুব'।