সুর ও বানী : চীনের রক সংগীত
  2016-03-30 19:54:57  cri


চীনের মূলভূখণ্ডে রক সংগীত শুরু হয়েছে ১৯৮৬ সাল থেকে। ১৯৮৬ সালের ৯ মে চীনের সংগীত ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। এ দিন বেইজিং শ্রমিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত 'বিশ্ব শান্তি বর্ষ' বিষয়ক একশ কণ্ঠশিল্পীর অংশগ্রহণে আয়োজিত সংগীতানুষ্ঠানে ছুই চিয়ান প্রথমবার তার সৃষ্টি করা 'আমার কিছুই নেই' শিরোনামে একটি গান পরিবেশন করেন। এ গান গাওয়ার পর দর্শকদের করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা স্টেডিয়াম।

ছুই চিয়ান

তখন থেকে চীনের সংগীত জগতে রক সংগীতের যুগ শুরু হয়েছে। 'আমার কিছুই নেই' গানটি চীনের রক সংগীত ইতিহাসে এক অসাধারণ ক্ল্যাসিকেল গানে পরিণত হয়েছে। চীনের সমাজ উন্মুক্ত, বহুবিধ ও সুষম হওয়ার প্রক্রিয়ায় এ দেশ ছুই চিয়ানকে এবং রক সংগীতকে গ্রহণ করেছে।

'আমার কিছুই নেই' গানটিতে প্রেম ও সংগ্রামের ভাব প্রকাশ করা হয়েছে। গানে তত্কালীন বিরল রক সংগীতের ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ গানের সুরে চীনের শানশি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের লোকসংগীতের ভাবও আছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রথম দিকে চীনাদের কাছে রক সংগীত পরিচিত ছিলো না। অনেকে রক সংগীত শুনলেও স্পষ্টভাবে তা বুঝতে পারতো না। তবে রক সংগীতের প্রবল প্রভাব বিশেষ করে যুবক যুবতীদের মনে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করে।

প্রিয় বন্ধুরা, চীনের মূলভূখণ্ডের রক সংগীত পিতা ছুই চিয়ানের গাওয়া 'আমার কিছু নেই' গানটি শুনুন।

'আমার কিছু নেই' গানে বলা হয়েছে, 'আমি অনেকবার প্রশ্ন করেছি, তুমি কবে আমার সঙ্গে যাবে? কিন্তু তুমি কেন সব সময় আমাকে হাসাও? আমার কিছু নেই। তবে তোমাকে আমি অন্বেষা ও স্বাধীনতা দিতে পারি। তুমি কবে আমার সঙ্গে চলে যাবে? আমি তোমার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। তোমার হাত কাঁপছে, তোমার চোখে জল ঝরছে। তুমি কী আমাকে বলতে চাও, আমার কিছু না থাকলেও আমাকে ভালোবাসে।'

চীনের অনেক কণ্ঠশিল্পী 'আমার কিছু নেই' গানটি গেয়েছেন। অবশ্য ভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে গানটি আমাদের বিভিন্ন রকম অনুভুতি দেয়। হয়তো পুরুষের কণ্ঠে আমরা জীবনের সংগ্রাম ও মনের কষ্ট অনুভব করি। নারীর কণ্ঠে আমরা প্রেমের প্রতি প্রবল আকর্ষণের অনুভুতি পাই। বন্ধুরা, এবার শুনুন তাইওয়ানের কণ্ঠশিল্পী চাং হুই মেইর গাওয়া 'আমার কিছু নেই' গানটি।

আমি জানি, অনেকেই রক সংগীত পছন্দ করেন। কিন্তু আগে আমি সবসময় রক সংগীত এড়ানোর চেষ্টা করতাম। কারণ রক সংগীতে ঢং ঢাং আওয়াজ বেশি। এই শব্দ শুনে মনে শান্তি হয় না। অথচ হৃত্স্পন্দনের গতি বাড়ে। ২০১৪ সালে আমি নেপাল সফর করি। সেখানে আমি নেপালি কণ্ঠে চীনা গানের প্রতিযোগিতায় পাঁচ ছয়জন নেপালি ছাত্রদের গাওয়া 'লজ্জায় লুকিয়ে রাখতে চাই' নামের একটি গান শুনেছি। তাদের পরিষ্কার কণ্ঠে গাওয়া গানটি সকল দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তাদের গান শোনার পর আমি দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন গায়কের গাওয়া এ গানটি বার বার শুনেছি। তখন থেকে আমি উপলব্ধি করেছি, রক সংগীতও আমাদের মন জয় করতে পারে।

চৌ সিয়াও ও

শ্রোতাবন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন 'লজ্জায় লুকিয়ে রাখতে চাই' নামের গানটি। গেয়েছেন চৌ সিয়াও ও। এ গানে বলা হয়েছে, 'মানুষের সাগরে আমি আবার তোমাকে দেখেছি। তুমি আগের মতো সুন্দর আছো। ভবিষ্যতে নিশ্চয় একদিন তুমি আমাকে বুঝতে পারবে। আমি অতীত স্মরণ করবো না। আমি লজ্জায় সব লুকিয়ে রাখতে চাই।'

চীনের রক সংগীতের কথা বলতে গেলে হংকংয়ের বিয়ন্ড ব্যান্ডের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এক সময় বিয়ন্ড ব্যান্ড ছিল চীনা সংগীত মহলের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যান্ডদল। এ ব্যান্ডের নামের অর্থ 'অতিক্রম করা'। কেবল হংকং, তাইওয়ান ও চীনের মূলভূখণ্ডেই তাদের ভক্ত আছে তা নয়। জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশেও তাদের অনেক সমর্থক রয়েছে। এ ব্যান্ডের গানগুলোতে মূলত বাস্তব জীবন সম্পর্কে নিজের মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ গান তাদের নিজেদের সদস্যদেরই লেখা। প্রথম দিকে এ ব্যান্ডে পাঁচজন সদস্য ছিল। ১৯৯৩ সালে প্রধান সদস্য হুয়াং চিয়া জু আকস্মিক দুর্ঘটনায় জাপানে মারা যান। এরপর তারা দলে আর নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেন নি। ২০০৫ সালে বিয়ন্ড ব্যান্ড সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের পর ব্যান্ডটি ভেঙ্গে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এত দিন পরও তাদের জনপ্রিয় গানগুলো শ্রোতাদের মনে রয়ে গেছে। চীনের নানা সংগীতানুষ্ঠান ও গানের প্রতিযোগিতায় শিল্পীরা বার বার তাদের গানগুলো নতুন করে পরিবেশন করেন।

হুয়াং চিয়া জু

বন্ধুরা, ১৯৯০ সালে বিয়ন্ড ব্যান্ড কেনিয়ায় গিয়ে সেখানকার যুদ্ধ ও দুর্যোগ কবলিত আফ্রিকানদের কষ্টকর জীবন দেখেছে। হংকংয়ে ফিরে আসার পর এ ব্যান্ডের প্রধান গায়ক হুয়াং চিয়া জু'র পত্রিকায় জেলখানায় বন্দি হওয়া নেলসন ম্যান্ডেলার গল্প পড়ে মনে একই আবেদন জেগে ওঠে। হুয়াং চিয়া জু'র চোখে ম্যান্ডেলা হচ্ছেন সংগ্রাম ও ভরসার প্রতীক। এ বিষয়ের ভিত্তিতে তিনি 'উজ্জ্বল সময়' নামের গানটি লেখেন। এ গান শুনে কঠিন অবস্থায় পড়া যে কোনো মানুষ ভরসার আলো দেখতে পান। মনে আবার নতুন করে শক্তি পান। ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর এ গানটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। গানটি বিয়ন্ড ব্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মের অন্যতম। যত ঝড়বৃষ্টি আসুক না কেন বিয়ন্ড ব্যান্ড নিজের উজ্জ্বল স্থান অধিকার করে থাকবেই।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আমরা কেন রক সংগীত শুনি? কেউ বলেন, রক সংগীত শুনে আপনি আরো বেশি স্বাধীনতা পাবেন। কেউ বলেন, রক সংগীত একদম সত্য। তা শুনে নিজেও সত্য মানুষে পরিণত হওয়া যায়। রকের বিশ্ব সহজ সরল। শিল্পীরা শুধু নিজের পছন্দের আসল সংগীত সৃষ্টি করেন। কখনো অন্যজনকে খুশি করার জন্য মিথ্যা কথা বলেন না। কেউ বলেন, রক শুনে আপনার মনের নেতিবাচক চাপ কমানো যায়। স্বাধীনভাবে সংগীতের সুরের সাথে আপনি জোরে জোরে গাইতে পারেন, নাচতে পারেন। আবার কেউ বলেন, রক শুনে আপনার মন দিন দিন আরো নবীন হয়ে যায়। শারীরিক বয়স আর মানসিক বয়স এক নয়। আপনি উপলব্ধি করবেন, জীবনে অনেক মজার ব্যাপার আছে। সবসময় তরুণের মতো বিশ্বকে দেখলে চমত্কার জীবন উপভোগ করতে পারবেন। রক সংগীত শিল্পীরা আমাদের এমন বিশ্ব উপহার দিতে চেষ্টা করছেন।

1 2
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040