20160311yinyue.mp3
|
চীনে আমরা মার্চকে 'বসন্তের মার্চ' বলে ডাকি। এ মাস থেকেই চীনে বসন্তকাল শুরু হয়। বসন্তে বিভিন্ন স্থানে ফুল ফুটবে, ন্যাড়া গাছের ডালে নতুন পাতা গজাবে, শীতের কবল থেকে রেহাই পেয়ে মানুষের শরীর ও মন আবার সতেজ হয়ে উঠবে। বসন্তের সকালে বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে সুন্দর সূর্যালোক দেখে মন আনন্দে ভরে যায়।
বন্ধুরা, এখন শুনছেন সুইজারল্যান্ডের ব্যান্ড বানদারির বাজানো সুর 'বসন্তের একদিন'। এ সুর শুনে অনেকে বসন্তকালে সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা কল্পনা করতে পারেন। দৃশ্যটা এমন হতে পারে: সাদা পোশাক-পরা এক সুন্দরী মেয়ে ফুলের মাঠে হাঁটছে; ফুলের সুগন্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে তার মুখে লাগছে। কোমল এ সুরটি আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করবে। সুরটি শুনতে শুনতে আশপাশের ফুলগাছগুলোর দিকে তাকাতে পারেন, কোথাও বসে খেতে পারেন এক কাপ গরম চা। এভাবে পারেন জীবনের রোমান্টিক ভাব আবিষ্কার করতে।
বন্ধুরা, আমি জানি বাংলাদেশে বছরে ছয়টি ঋতু আছে। তবে চীনে চারটি ঋতু—বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত্ ও শীত। প্রত্যেক ঋতুর ভিন্ন গন্ধ আছে; আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। আমি সব ঋতু পছন্দ করি। তবে বসন্তকে বেশি ভালো লাগে। এর অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে, বসন্তে শীতের মোটা মোটা কাপড়গুলো আলমারিতে তুলে রেখে আরামদায়ক ও সুন্দর পাতলা পোশাক পরা যায়। পায়ের মোটা ও ভারী জুতা খুলে হালকা জুতাও পরতে পারি এই বসন্তে। তখন নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়। মার্চের শুরুতেই শীতের আমেজ পুরোপুরি কেটে যায়, তা কিন্তু নয়। কিন্তু তখন থেকে নতুন ঘাস ও মাটির সুগন্ধ পাওয়া যায়। এটা বসন্তের গন্ধ।
বন্ধুরা, এখন আপনারা আমিনি ব্যান্ডের গাওয়া 'বসন্তের সুগন্ধ' শীর্ষক গান শুনছেন। গানে বলা হয়েছে, 'মাটির নিচ থেকে প্রথম বীজটি অঙ্কুরিত হয়েছে। গাছের ডালের তুষার গলেছে। শীতল বাতাসের সঙ্গে বসন্তের গন্ধ ভেসে আসছে। আর আকাশের মেঘ যেন তোমার মৃদুহাসির মতো। এরা আমাকে দিয়েছে বারতা: সুখ ও আনন্দ আসছে।'
বাংলাদেশে শীতকালে তেমন শীত পরে না। কিন্তু বেইজিংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। সে সময়ের বাতাস মুখে লাগলে মনে হয় কেউ ছুরি দিয়ে হালকাভাবে ত্বকে আঘাত করছে। তাই যখন বসন্তে ঝিরঝিরে বাতাস বইতে শুরু করে, তখন তাকে আমরা স্বাগত জানাই।
বন্ধুরা, এখন শুনছেন ছাই ছিনের কণ্ঠে 'বসন্তের বাতাস আমার মুখে চুমু খাচ্ছে' শীর্ষক একটি গান। তিনি গেয়েছেন, 'বসন্তের বাতাস আমার মুখে চুমু খাচ্ছে; আমাকে জানাচ্ছে, বসন্ত এসেছে। বসন্তকালে চারদিকে ফুল ফোটে। সকালে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বসন্তের দৃশ্য উপভোগ করি।'
বন্ধুরা, বসন্তসম্পর্কিত অনেক কবিতা, গান ও সুর আছে। কোনো কোনো গান বসন্তের প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করে। কেউ কেউ বসন্তকালকে 'প্রেমের কাল' মনে করেন। কেউ কেউ বসন্তকালকে মানুষের জীবনের আরেকটি সূচনা বলে গণ্য করেন।
এখন শুনুন রক সংগীত গায়ক ওয়াং ফাংয়ের গাওয়া 'বসন্তকালে' গানটি। এ গানটির জন্য সংশ্লিষ্ট গীতিকার ২০০৯ সালে চীনের 'শ্রেষ্ঠ গীতিকার' হবার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
গানের কথা বাংলায় অনুবাদ করলে এমন দাঁড়াবে: 'অনেক বছর আগের বসন্তকালের স্মৃতি এখনও মনে আছে। তখন আমার লম্বা চুল ছিল। আমার কোনো ক্রেডিট কার্ড ছিল না। আমার প্রিয় মেয়েবন্ধুও ছিল না। আমার বাসায় ২৪ ঘন্টা গরম পানির সরবরাহও ছিল না। তবুও সে সময় আমি খুবই সুখী ছিলাম। একটি মাত্র পুরাতন গিটার বাজিয়ে আমি রাস্তায়, সেতুর নিচে বা মাঠে গান গাইতাম। যেদিন আমি নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো, সেদিন তোমরা আমাকে কবর দিতে দয়া করে বসন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করো।'