চিন ইয়োং প্রায় বিশ বছর ধরে উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসগুলোর জনপ্রিয়তার কারণে অনেক প্রকাশনা সংস্থা গ্রন্থস্বত্ব না পেয়েও বেআইনিভাবে প্রকাশ করতো। এতে এ ধরনের উপন্যাসে অনেক ছাপানোগত ভুল থাকতো। এর ফলে চিন ইয়োং ঘোষণা করেন, তিনি আর কোনো উপন্যাস লিখবেন না। এরপর তিনি দশ বছর সময় দিয়ে তার ১৬টি উপন্যাসের নানা ভুল ত্রুটি আবার ঠিক করেন। তিনি প্রায়ই তার মেয়েকে বলতেন, নিজের কাজে কখনো অন্যকে অনুকরণ করবে না। মানুষের জন্য স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
'স্বর্গীয় তলোয়ার আর ড্রাগন আকারের ছুরি' হচ্ছে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এ উপন্যাস নিয়ে চীনের হংকং, তাইওয়ান ও মূলভূখণ্ডের শিল্পীরা দশটি ভিটি নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। এখন শুনুন ১৯৯৪ সালে তাইওয়ানে তৈরি একই নামের টিভি নাটকের গান। গানের নাম 'ক্ষমতার চেয়ে সুন্দরীকে বেশি ভালোবাসি'।
২০০৩ সালে বেইজিংয়ের একটি নাটক কোম্পানি 'স্বর্গীয় তলোয়ার আর ড্রাগন আকারের ছুরি' উপন্যাসটি অবলম্বনে ৪০ পর্বের টিভি নাটক তৈরি করে।
এ নাটকের মূল বিষয় হলো, ইউয়ান রাজবংশের শেষ দিকে গোটা সমাজ ছিলো বিশৃঙ্খল। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পক্ষের লোকেরা স্বর্গীয় তলোয়ার আর ড্রাগন আকারের ছুরি কেড়ে নেওয়ার জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হতো। চাং উ চি হলো এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। উপন্যাসে বেশ কয়েকজন মেয়ে তাকে ভালোবাসেন। তিনি সবাইকে ভাই বোনের মতো আদর করেন, সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। নানা ঝুঁকি ও বিপদের পর এক এক মেয়ে বাধ্য হয়ে তাকে ত্যাগ করে চলে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেন কে তার আসল ভালোবাসা।
কণ্ঠশিল্পী মাও আমিন এ নাটকের প্রধান গান 'চাং উ চিকে ভালোবেসেছে' গানটি গেয়েছেন। গানে প্রেমিক ও প্রেমিকার পরস্পরকে ভালোবাসার কথা বর্ণিত হয়েছে।
গানে বলা হয়েছে, 'আমি তার সাথে প্রেমে পড়তে চাই, যাতে সে আজীবন আমার জন্য ভুরু আঁকবে। প্রথমে ব্যথা বুঝতে পারলে কেবল ভালোবাসার অর্থ বুঝতে পারবে। তোমার ভবিষ্যত তার হাতে দাও। তার পাশে আর কোনো মেয়ে থাকতে দেবে না।'
চিন ইয়োং
২০০৫ সালে ৮১ বছর বয়সী চিন ইয়োং ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য গবেষণা নিয়ে পিএইচডি করা শুরু করেন। তার পরিকল্পনা ছিলো পিএইচডি শেষ করে তিনি চীনের ইতিহাস সম্বন্ধে বই লিখবেন।
তিনি বলেন, 'ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কেবল একজন সাধারণ ছাত্রের মতো থাকতে চাইতাম। তবে অনেক লোক আমার কাছে এসে ছবি তুলতে বা সই করার অনুরোধ করতেন। আমি বলতাম, না, না এখন আমি লেখক নই। আমি কেবল ছাত্র। যখন আমি আবার লেখক হবো, আপনার সঙ্গে কফি খাবো, চা খাবো, আপনার জন্য সই করবো।' ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা তাকে অনেক সম্মান করতেন। তারা চিন ইয়োংকে অধ্যাপক চা ডাকতেন।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে চিন ইয়োং চীনের লেখক কমিটির সপ্তম জাতীয় কমিটির অনারারি সহ-সভাপতি হন এবং একই সালে তিনি ২০০৮ সালে বিশ্বে প্রভাবিত চীনা ব্যক্তির আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান। আগামী ১০ মার্চ চিন ইয়োং এর ৯২তম জন্মবার্ষিকী। এখন থেকেই তার পাঠক ও অনুরাগীরা নানা পদ্ধতিতে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন। আজ আমি এ 'সুর ও বানী' আসরের মাধ্যমে আমার শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করছি তার প্রতি। (ইয়ু/টুটুল)