20160302yinyue.mp3
|
প্রিয় বন্ধুরা, চিন ইয়োং, গু লোং এবং লিয়াং ইয়ু শেং হলেন চীনের মার্শাল আর্ট উপন্যাসের তিন জন শীর্ষ লেখক। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন চিন ইয়োং। তার আসল নাম চা লিয়াং ইয়োং। তিনি ১৯২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি চেনচিয়াং প্রদেশের হাইনিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কেবল মার্শাল আর্ট উপন্যাস লিখে সুনাম অর্জন করেছেন তা কিন্তু নয়, তিনি আধুনিককালের একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, শিল্পপতি এবং সমাজকর্মীও বটে। তিনি ছিলেন 'হংকংয়ের মৌলিক আইনের' অন্যতম প্রধান খসড়া প্রণয়নকারী ব্যক্তি।
চিন ইয়োং
আমি মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় চিন ইয়োংয়ের লেখা অনেক উপন্যাস পড়েছি। তখন তার সৃষ্ট মার্শাল আর্ট সম্পর্কিত বিশ্বের নানা কাহিনী পড়ে এতো মুগ্ধ হয়েছি যে, প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম আমি নিজেও মার্শাল আর্টের মাস্টার হয়েছি।
বন্ধুরা, আজ আপনাদের কাছে মার্শাল আর্ট ঔপন্যাসিক চিন ইয়োংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরবো এবং তার উপন্যাস থেকে সৃষ্ট নানা টেলিভিশন নাটকের গানগুলো শোনাবো।
১৯৩৯ সালে ১৫ বছর বয়সী চিন ইয়োং তার সহপাঠীদের সঙ্গে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটি ছাত্রদের মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার নির্দেশনা নিয়ে লিখিত।এ বইটি চীনের মূলভূখণ্ডে প্রকাশিত এ ধরণের প্রথম বই এবং চিন ইয়োংয়ের প্রকাশিত প্রথম বই।
বিংশ শতাব্দীর ৫০'র দশকের শেষ দিক থেকে ৭০'র দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত তিনি মোট ১৬টি মার্শাল আর্ট উপন্যাস লিখেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি লেখা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেন।
তার উপন্যাসগুলোর মধ্যে আমার পড়া প্রথম উপন্যাস হলো 'শকুন ধ্বংস করা বীরের কাহিনী'। এ উপন্যাসের নানা চরিত্র, রহস্যময় চীনা কুংফু, রোমান্টিক প্রেমের আবেগ ও ইতিহাসের কথাসহ নানা দিক আমাকে মুগ্ধ করে।
এখন পর্যন্ত চীনের মূলভূখণ্ড, হংকং, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের শিল্পীরা এ উপন্যাসকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫টি টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন।
১৯৮৩ সালে হংকংয়ের টেলিভিশনের প্রযোজিত ৫৯ পর্বের টিভি সিরিজ এ নাটকগুলোর প্রতিনিধিত্ব কর্ম বলা যায়। এখন শুনুন এ টিভি সিরিজের প্রধান গান। গেয়েছেন চেন নি ও রো ওয়েন।
টিভি নাটক 'শকুন ধ্বংস করা বীরের কাহিনী'
'শকুন ধ্বংস করা বীরের কাহিনী'-তে প্রাচীনকালে সোং, জিন ও মঙ্গোলিয়া-এ তিন রাষ্টের মধ্যকার যুদ্ধের পটভূমিতে কুও চিং, হুয়াং রোং, ইয়াং খাং আর মু নিয়েন ছি এ চার জন প্রধান চরিত্রের গল্প বলা হয়েছে।
এ নাটক প্রচারের সাথে সাথে নাটকের গানগুলো চীনাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এ বছর হংকংয়ের সিনেমা পরিচালক স্টেফেন চৌ নতুন সিনেমা 'মত্স্যনারী'তে ঐ এ টিভি নাটকের 'এ বিশ্বে তুমি সবসময় ভালো' নামের গানটি ব্যবহার করেন।
এ গানের সুর কানে ভেসে আসার সাথে সাথে বহু চীনা দর্শকের পুরনো দিনের স্মৃতি কাছে ফিরে আসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়। বন্ধুরা, এখন আমরা একসাথে 'এ বিশ্বে তুমি সবসময় ভালো' নামের গানটি শুনবো, কেমন?
চিন ইয়োং অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি। তিনি চীনের প্রাচীন মার্শাল আর্ট উপন্যাসের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নতুন ধরণের উপন্যাস সৃষ্টি করেন। তার উপন্যাসের মধ্যে ইতিহাস, রাজনীতি, প্রাচীন দর্শন, ধর্ম, সাহিত্য, শিল্পকলা, কবিতা, জ্যোতির্বিদ্যা, যুদ্ধের কৌশল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে। তার সাহিত্যকে মর্যাদা এবং স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বহু দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। তার উপন্যাসগুলো চীনের কয়েক প্রজন্মের পাঠকদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'হাসি মুখে অসিযোদ্ধার পৃথিবীতে থাকা' নামে চলচ্চিত্রের গান।
২০০১ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র 'হাসি মুখে অসিযোদ্ধার পৃথিবীতে থাকা' নামে উপন্যাসের ভিত্তিতে ৪০ পর্বের একই নামের টিভি নাটক তৈরি করে। তত্কালীন চীনের মূলভূখণ্ডের অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রী এ নাটকে অভিনয় করেন। নামকরা কণ্ঠশিল্পী লিউ হুয়ান ও ওয়াং ফেই এ নাটকের প্রধান গানে কণ্ঠ দেন। গানে বলা হয়েছে, "ন্যায়ের কখনো পরাজয় নেই। মানুষ চলে গেলেও পড়ে থাকে মন। অসি হাতে নিয়ে বিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। মুখে হাসি থাকে সবসময়।' শুনুন তাহলে।
টিভি নাটক 'হাসি মুখে অসিযোদ্ধার পৃথিবীতে থাকা'