২০০২ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিচালক চাং ই মৌর প্রথম মার্শাল আর্ট বিষয়ক সিনেমা 'বীর' মুক্ত পায়। এ সিনেমায় যুদ্ধেলিপ্ত রাষ্ট্রগুলোর যুগের শেষ দিকে তিনজন অসিবিদ মিলে ছিন রাজ্যের রাজাকে গুপ্তহত্যা করার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এ সিনেমাটি মার্কিন 'টাইমস' পত্রিকার নির্বাচিত ২০০৪ সালের বিশ্বের সেরা দশটি সিনেমার মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে। থান দুন এ সিনেমার সংগীত সৃষ্টি করেন।
চলচ্চিত্র 'বীর'
সুপ্রিয় শ্রোতা, একবার চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের এক অনুষ্ঠানে সংবাদদাতা থান দুনকে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি কি?' তিনি উত্তরে বলেন, 'আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পত্তি হচ্ছে মানবজাতির কল্পনাশক্তি। কল্পনাশক্তি থাকলে সবকিছু থাকবে। এ কল্পনাশক্তি প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত। পানি, বাতাস, ঢেউ, তুষারপাত এ সব আওয়াজ শুনতে চাইলে কল্পনাশক্তি দরকার। আপনি বাতাস দেখতে পারেন কিনা, সেটাও কল্পনাশক্তি দিয়েই বোঝা যায়।'
আমরা থান দুনের সংগীতের মধ্যে অসাধারণ কল্পনাশক্তির প্রতিফলন দেখতে পাই।
২০০৬ সালে থান দুন পরিচালক ফাং সিয়াও কাংয়ের সিনেমা 'ভোজ' এর জন্য সংগীত সৃষ্টি করেন। এ সিনেমা শেক্সপীয়ারের বিখ্যাত নাটক 'হ্যামলেট'থেকে কাহিনী নিয়ে তৈরি করা হয়। এ সিনেমার কাহিনী রাজপ্রাসাদের ক্ষমতা নিয়ে সংগ্রাম, ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার লোভ, প্রেম ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।
'ভোজ' সিনেমার প্রধান গানের নাম 'আমি সব কিছুর বিনিময়ে প্রেমের প্রতিদান দেবো'। গানের কথা লিখেছেন, ফান শুয়ে ই, সুর করেছেন থান দুন, পিয়ানো বাজিয়েছেন লাং লাং, গেয়েছেন চাং লিয়াং ইং। এ গানটি ১২তম হংকং গোল্ডেন বৌহিনা পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সংগীত পুরস্কার লাভ করে। বন্ধুরা, শুনুন 'আমি সব কিছুর বিনিময়ে প্রেমের প্রতিদান দেবো' নামে গান।
চলচ্চিত্র 'ভোজ'
থান দুন মনে করেন, শিল্পকলা একটি দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তিনি ছোটবেলায় লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তার মা তাকে বলেছিলেন, 'শিল্পকলা পছন্দ করে না, এমন মেয়েকে বিয়ে করবে না। শিল্পকলা পছন্দ করে না, এমন পরিবারে থাকবে না। শিল্পকলা পছন্দ করে না, এমন দেশে যাবে না। যখন তুমি কোনো দেশের শিল্পকলা পছন্দ করবে, তখন দেখবে সে দেশের চারদিকে ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা রয়েছে। তুমি দেখবে সে দেশের পাহাড়-পাহাড়ী, নদ-নদী, আকাশ ও মাটির মধ্যে আবেগ থাকবে। এটা হচ্ছে শিল্পকলার শক্তি'।
হুনান প্রদেশে থান দুনের জন্ম হয়েছে বলে সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি অর্থাত্ ছু সংস্কৃতি সবসময় তাকে আকর্ষণ করে। তিনি মনে করেন, ছু সংস্কৃতিতে বিশেষ রোমান্টিক ও অদ্ভুত কল্পনার ভাব আছে। ছু সংস্কৃতির ভিত্তিতে আকাশ ও মাটির সাথে কথা বলা যায়। সেখানকার সব জিনিষপত্রে প্রাণ আছে। এমন কি পানি ও পাখির সঙ্গেও আলাপ করা যায়। পাথরও যেন বাতাসের সাথে কথা বলতে পাড়ে। সবকিছুর মধ্যে আত্মার অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি ছু সংস্কৃতি থেকে কল্পনার শক্তি পাই। আমার সংগীত, চলচ্চিত্র এবং ছবিতে এ সংস্কৃতির বেশ প্রভাব পড়েছে।
শ্রোতাবন্ধুরা, ২০০৮ সালে থান দুন বেইজিং অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের জন্য সংগীত সৃষ্টি করেন। ২০১০ সালে তিনি শাংহাই বিশ্বমেলায় সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
২০০০ সালে থান দুন বিশ্বের সহস্রাব্দ টেলিভিশন অনুষ্ঠান '২০০০ সালের আজকে' এর জন্য একই নামে একটি সিমফনি লেখেন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিবিসি, পিবিএস ও সনি ডিস্ক কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রসহ বিশ্বের ৫৫টি নেটওয়ার্ক টেলিভিশন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হয়েছে।
বন্ধুরা, এবার শুনুন '২০০০ সালের আজকে' সিমফনির একটি গান। এ গানের নাম 'আমাদের প্রেম'। প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ চীনের বিখ্যাত সুরকার থান দুনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং তার কিছু সংগীত আপনারা শুনলেন। শোনার জন্য ধন্যবাদ। আমি বেইজিং থেকে বিদায় নিচ্ছি। আপনারা ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)