সুর ও বানী: পশ্চিম চীনের গানের রাজা ওয়াং লো বিন
  2016-02-24 18:51:34  cri

১৯৪১ সালে ছিনহাই যাওয়ার পথে তত্কালীন সরকার কমিউনিস্ট পার্টির সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে ওয়াং লো বিনকে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন পক্ষের প্রচেষ্টার পর ১৯৪৪ সালের মে মাসে তিনি জেলখানা থেকে মুক্তি পান। তিনি আবার ছিংহাই প্রদেশে ফিরে গিয়ে সংগীত শিক্ষাদান শুরু করেন।

এ সময় ওয়াং লো বিন বিভিন্ন জাতির কিছু লোকসংগীত নতুন করে সাজিয়ে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান সৃষ্টি করেন। যেমন আলামুহান, প্রিয় এক গোলাপ ফুল, ইলালা  ইত্যাদি।

'প্রিয় এক গোলাপ ফুল' এ গানের আরেকটি নাম ছিলো। তা হলো 'দাদুর ও মারিয়া'। এটি মধ্য এশিয়ার তৃণভূমিতে প্রচলিত কাজাখ জাতির একটি লোকসংগিত ছিলো। বিংশ শতাব্দীর ৩০-এর দশকে চীনের সিনচিয়াং অঞ্চলে গানটি ছড়িয়ে পরে। ১৯৩৯ সালে ওয়াং লো বিন কাজাখ জাতির এ লোকসংগীত শুনে তা নতুন আঙ্গিকে কম্পোজ করেন।

এ গানের পেছনে একটি গল্প রয়েছে। রাশিয়ার জার কাজাখ তৃণভূমি দখল করে নেন। রুশ মেয়ে মালিয়া তৃণভূমিতে প্রথম দর্শনেই কাজাখ ছেলে দাদুরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেমকে স্মরণ করার জন্য এ লোকসংগীতটি সৃষ্টি করা হয়েছে। শুনুন তাহলে।

১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়াং লো বিন শিনিংয়ে চীনের গণ মুক্তি ফৌজে যোগ দেন। তিনি এই বাহিনীর সঙ্গে সিনচিয়াংয়ে যান। একই সালের ডিসেম্বরে তিনি সিনচিয়াং সামরিক অঞ্চলের শিল্পকলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তিনি 'সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ গান সংগ্রহ' অনুবাদ করেন এবং সিনচিয়াংয়ের কিছু লোকসংগীত কম্পোজ করেন।

'রূপালি জ্যোত্স্নায়' রাশিয়ার লোকসংগীত। পরে এটি সিনচিয়াংয়ে প্রচলিত হয়। ১৯৩৮ সালে ওয়াং লো বিন এ গানটি চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। গানের সুর ও কথা খুবই চমত্কার।

'সেই সোনালি সৈকতে রূপালি জ্যোত্স্নার আলো ছড়িয়ে পড়ে। অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে স্বপ্নের মতো আর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই মেয়ে আমাকে ত্যাগ করে চলে গেলো। তুমি কোথায় লুগিয়ে আছো! আমি ঘোড়ায় চড়ে তীরের গতিতে তোমার দিকে এগিয়ে যাবো।'

ওয়াং লো বিন বেঁচে থাকলে এখন তার বয়স হতো ১০৩ বছর। বোঝা যায়, তার সৃষ্টি করা গানগুলো বহু বছর আগের। তবে গানের সুর ও কথা আজকে শুনলেও একটুও পুরোনো মনে হয় না। গত শতাব্দীর ৩০'র দশক থেকে এ পর্যন্ত চীনের নানা প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীরা তার গান গেয়ে আসছেন। আমরা এখনো তার গান শুনতে পছন্দ করি। 'যুব নৃত্য' সিনচিয়াংয়ের একটি ক্ষুদ্র সুর ছিলো। ১৯৩৯ সালে ওয়াং লো বিন পশ্চিম চীনের সংগীত সংগ্রহের সময় এ গানটি পেয়েছেন। তিনি এ সুরের জন্য চীনা ভাষায় গান লিখেছেন। শুনুন গানটি।

১৯৮৬ সালের নভেম্বরে সিনচিয়াং সামরিক অঞ্চলের পলিট বিভাগ এবং সিনচিয়াং সুরকার সমিতি যৌথভাবে 'গণ সংগীতজ্ঞ ওয়াং লো বিনের কর্ম বিষয়ক সংগীতানুষ্ঠান' আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে তাকে 'গণ সংগীতজ্ঞ' খেতাব দেওয়া হয়। সিনচিয়াং গণ প্রকাশনালয় ওয়াং লো বিনের ইংরেজী ও চীনা ভাষার গানের সংগ্রহগুলো এক সাথে করে 'সেই সুদূরের জায়গায়' এবং 'রেশম পথের প্রেমের গান' শিরোনামে বই প্রকাশ করেছে। তিনি সাতটি গীতিনাট্য এবং এক হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। তার সংগৃহীত গানগুলো নিয়ে ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

'একটি নদীর পানি' সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৫৯ সালে তৈরি 'পিপাসা' নামের সিনেমার একটি গান। গত শতাব্দীর ৫০'র দশকে ওয়াং লো বিন এ গানটি চীনা ভাষায় রূপান্তর করেন। কিন্তু তখন তা প্রকাশিত হয়নি। ৮০'র দশকে তিনি আবার নতুন করে সাজানোর পর প্রকাশিত হয় এ গান। চীনের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হান হোং এ সুন্দর গানটি গেয়েছেন। শুনুন।

ওয়াং লো বিন একজন লোক সংগীতজ্ঞ। তিনি সারা জীবন তৃণমূলের জনসাধারণের সঙ্গে ছিলেন। তিনি তাদের জীবনযাপন, চিন্তাভাবনা ও আবেগ প্রকাশের উপায় ভালো করে জানতেন। তাদের সুখ-দুঃখ-শান্ত্বনা-বেদনা তার নিজের মতো। তিনি জনসাধারণের জন্য গান লিখেছেন। জনসাধারণের জীবন থেকে তিনি প্রচুর অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তিনি শুধু সুরই করতে পারতেন না, তিনি গানের কথাও লিখতেন। তিনি গানও শিখেছেন। সাবলিল কণ্ঠে তিনি গান গাইতে পারতেন। এ সব অনুকূল উপাদান তিনি মুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের সংগীত রাজ্যে প্রকৃত রাজার মতো চলাচল করেছেন।

১৯৯৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।  (ইয়ু/মান্না)


1 2
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040