'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী'তে মোট চার শতাধিক চরিত্রের মধ্যে বিশ-তিরিশটি প্রধান চরিত্রের স্বতন্ত্র প্রকৃতি বিশদভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
শ্রোতাবন্ধুরা, এই উপন্যাসকে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের বিশ্বকোষধর্মী রচনাও বলা যায়। সমসাময়িক সমাজের যাবতীয় চিত্র এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। চীনে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিত এই উপন্যাস নিয়ে গবেষণা করেন। তারা ইতিহাস, প্রতিভাবিষয়ক বিদ্যা, মনস্তত্ত্ব, গণ-সম্পর্ক, কৌশল-বিদ্যা, ব্যবস্থাপনা, রণবিদ্যা, শিল্পকলা ও নীতিশাস্ত্রের দিক থেকে এই উপন্যাসের সাংস্কৃতিক মূল্য ও বাস্তব তাত্পর্য অনুধাবনের চেষ্টা চালিয়েছেন।
চু গে লিয়াং হলেন 'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী'র আরেকটি প্রধান চরিত্র। তিনি ত্রি-রাজ্য যুগের একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সমরবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি লিউ পেইকে সাহায্য করে সু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার অনেক সামরিক কৌশল এখনো লোকের মুখে মুখে প্রচলিত আছে। চু গে লিয়াং চীনাদের মনে জ্ঞানের অবতার। তিনি উর্বরমস্তিষ্ক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ নেই। তাকে 'ওয়োলোং সাহেব' বলা হতো। এবার শুনুন তাকে নিয়ে রচিত একটি গান।
চু গে লিয়াং
ইতিহাসে চু গে লিয়াং হলেন আইন প্রশাসনের মাস্টার। এরপর চীনের বিভিন্ন প্রজন্মের বুদ্ধিজীবীরা তাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুসরণ করেন। 'ওয়োলোংয়ের গান' নামের এই করুণ সুরের গানটির মাধ্যমে চু গে লিয়াংয়ের জীবনের বর্ণনা শুনলে চোখে জল চলে আসে।
২০০৮ সালে পরিচালক উ ইয়ু সেন 'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী'র 'ছিবি যুদ্ধ' নিয়ে একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালের জুলাই ও ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এ চলচ্চিত্রের দুটি পর্ব মুক্তি পায়। বক্স অফিস হিট করা এ চলচ্চিত্র চীনে মোট ৫৮ কোটি ইউয়ান আয় করেছে। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক উ ইয়ু সেন ৬৭তম ভেনিস চলচ্চিত্র উত্সবে স্বর্ণসিংহ পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ১২তম শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে চীনা ভাষায় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
গায়িকা আলান চলচ্চিত্র 'ছিবি'র প্রধান গানটি গেয়েছেন। গানের নাম 'মনের লড়াই'। গানের সুর করেছেন জাপানের বিখ্যাত সুরকার তারো ইওয়াশিরো, কথা লিখেছেন লি চো সিয়াং। আলানের গান পাহাড়ে ছড়ানো আওয়াজের মতো মনস্পর্শী। এ গানে ত্রি-রাজ্যের বীর চরিত্রদের সাহস ও শক্তি প্রতিফলিত হয়েছে। ফুটে উঠেছে মানবজাতির বিরল মৈত্রী ও ভরসার চিত্র। শুনুন 'মনের লড়াই' গড়ানটি।
'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী' প্রাচীনকালের উপন্যাস বলে শুধু বড়দের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তা কিন্তু নয়। চীনে শিশুরাও এ কাহিনী ভালো করে জানে। ফলে শিশুদের জন্য 'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী'র কার্টুন ছবিও আছে। ২০০৯ সালের পয়লা অগাস্ট চীন ও জাপান যৌথ উদ্যোগে তৈরি করে ৫২ পর্বের এই কার্টুন ছবি। 'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী' নামে এ কার্টুন ছবি চীনের টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। এ কার্টুন ছবি যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও রাশিয়াসহ ১৩টি দেশে প্রচারিত হয়েছে।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বানী' আসরে আপনাদের চীনের প্রাচীন উপন্যাস 'ত্রি-রাজ্যের কাহিনী' অবলম্বনে নির্মিত টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের কয়েকটি গান শুনিয়েছি। অনুষ্ঠানের শেষে আপনাদের শোনাতে চাই এই টেলিভিশন নাটকের সমাপ্তি সঙ্গীত 'ইতিহাসের আকাশ'।
এ গানটি আমার ভীষণ প্রিয়। গেয়েছেন মাও আমিন। এ গানে বলা হয়েছে, 'ছুরির আলো ও তরবারির ছাঁয়া সবই মিলিয়ে গেছে। রণভেরীর আওয়াজও দূরে চলে গেছে। চোখের সামনে এক একটি প্রাণবন্ত মুখ ভেসে ওঠে। সময় কোনো সুপরিচিত নাম সাথে নিয়ে যাবে না। দেশের সমৃদ্ধি ও ব্যর্থতা কীসের ওপর নির্ভর করে? বেঁচে থাকতে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করো। মৃত্যুর পর কী মূল্যায়ন পাবে তা নিয়ে চিন্তা করো না। ইতিহাসের আকাশে কয়েকটি তারা উজ্জ্বল হয়ে আছে। মানবজাতির বীরত্বের মর্ম চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে'।
বন্ধুরা, সব জিনিস সময়ের সাথে বিলীন হয়ে যাবে। ইতিহাসের আকাশে কী সংরক্ষিত থাকবে? ঐতিহাসিক কীর্তি। মনে থাকবে পূর্বপুরুষের মহান কাজ। মনে থাকবে আমাদের দায়িত্ব।
বন্ধুরা, সুর ও বানী এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)