v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-08-05 21:51:00    
মিয়াও জাতির নারী লু ওয়ানসিয়াং

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত মিয়াওজাতি ও তুং জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে মিয়াওজাতি সহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘুজাতি বসবাস করে । লাংত্যচেন থানার উপপ্রধান একজন মিয়াওজাতির নারী । তার বয়স ৩০ বছর । তার নাম লু ওয়ানসিয়াং ।

    মিয়াওজাতির মানুষ যেমন নাচগানে পারদর্শী তেমনি আন্তরিকতাপূর্ণ । লাংত্যচেন থানার উপপ্রধান মিয়াওজাতির মেয়ে লু ওয়ানসিয়াংও ব্যতিক্রম নন ।২০০২ সালে লু ওয়ানসিয়াং কুইচৌ জাতিগত ইনস্টিটিটিউট থেকে স্নাতক হন । তিনি নাচগান পছন্দ করেন । প্রফুল্ল ও হাসিখুশি মেয়ে লু ওয়ানসিয়াং ভাবতেও পারেননি তিনি নিম্ন পর্যায়ের জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন । ২০০৬ সালে থানার উপপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি লাংত্যচেন থানার ছোট বড় ৪১টি গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছেন । তিনি বলেন, আমি প্রায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেখানকার অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার অবস্থা পরিদর্শন করি । গ্রামবাসীদের ঝগড়া মীমাংসা করতে সাহায্য করি । বর্ষাকালে সহজে পাহাড় ধসে পড়ে । এজন্য সবসময় সেখানে যাওয়া দরকার ।

    লাংত্য থানার লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার । পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত থানাটি যুগ যুগ ধরে মিয়াও জাতি পাহাড়ে কাঠ দিয়ে দোতলা বাড়ি তৈরী করে আসছে । কাঠের বাড়ি এবং রান্নার সময় কাঠ ব্যবহারের কারণে বাড়িঘরে সহজে আগুন ধরে যায় । গ্রামবাসীর জানমাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য লু ওয়ানসিয়াংয়ের পরামর্শে অনেকে বিদ্যুত লাইন ও রান্না ঘর সংস্কার করেছেন । গত বছরের শেষ দিক থেকে তিনি প্রায় প্রতিদিন গ্রামে সবাইকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন । এপর্যন্ত প্রায় ১৩৮টি পরিবার বিদ্যুত লাইন পরিবর্তন করেছে । ১০টি পরিবারের রান্না ঘরে নতুন সাশ্রয়ী চুলা বসানো হয়েছে । এর ফলে শুধু কাঠ ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে তা নয়, নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়েছে ।

    গ্রামবাসীরা যাতে বিদ্যুত লাইন ও রান্না ঘর সংস্কার করেন লু ওয়ানসিয়াং তার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়ে আসছেন । গ্রামবাসীরা নির্মান দলকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চান না । লু ওয়ানসিয়াং গ্রাম সম্মেলন , বেতার প্রচার এবং অগ্নি কান্ড নির্বাপন ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দেখানো ও প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে গ্রামবাসীদের পরামর্শ ও শিক্ষা দেন । এ সম্পর্কে চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির লাংত্যচেন থানা কমিটির উপসম্পাদক ইয়াং শংসিং বলেন , তাদের প্রচেষ্টায় জনসাধারণ বিদ্যুত লাইন ও রান্না ঘর সংস্কারকে গ্রহণ করেছেন । সবাই জানেন , এটা আমাদের মিয়াওজাতি অধ্যুষিত গ্রামের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত । লাংত্য থানায় আগুন নেভানোর ব্যবস্থা , ভোজ্য পানি ও আগুন নেভাতে ব্যবহার্য পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে । এতে মাদাম লু ওয়ানসিয়াংয়ের অবদান রয়েছে ।

    লু ওয়ানসিয়াংয়ের শ্রেষ্ঠ কাজ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিও পেয়েছে । লেইশান জেলার উপপ্রধান চিয়াং দাচুন প্রশংসা করে বলেন, তিনি চমত্কার কাজ করেছেন । আমরা তার ওপর যে দায়িত্ব ভার ন্যস্ত করি তিনি আমাদের অনুরোধক্রমে পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মত প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করেন । আমাদের থানায় তিনি একজন দক্ষ নারী ক্যাডার । তার কাজে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ।

    মিয়াওজাতির নিরাপত্তা ও সুখশান্তির জন্য লু ওয়ানসিয়াং ব্যাপক কাজ করেছেন । গ্রামে গ্রামে ব্যবধান বেশি । একই গ্রামের মানুষরা পরস্পরের কাছ থেকে অনেক দূরে থাকেন । পাহাড়ের গিরি পথে শুধু পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় বলে যখন গ্রামে যান তখন পথে লু ওয়ানসিয়াংকে ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটতে হয় । তিনি বলেন, কোনো কোনো গ্রাম পাহাড়ের উপরে অবস্থিত । তাই নিচ থেকে উপরে যেতে কমপক্ষে এক ঘন্টা আর বেশি হলে তিন ঘন্টা লাগে ।

    তিনি বলেন, শরীরের ক্লান্তিকে আমি ভয় করি না । কিন্তু যখন আমার চেষ্টাকে গ্রামবাসীরা গ্রহণ করেন না তখন আমার খুব কষ্ট হয় । যেমন শিক্ষার বিষয় । সরকার ন' বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলেও অনেক স্কুলবয়সী ছেলেমেয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি । লু ওয়ানসিয়াং প্রায় প্রতিদিন প্রতিটি স্কুলবয়সী ছেলের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের পরামর্শ দিতেন । এখন লুংত্য থানার সকল স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে । কিন্তু মাধ্যমিক স্কুলের কিছু ছাত্র এখনো স্কুলচ্যুত রয়েছে ।

    লু ওয়ানসিয়াং বলেন , কাজের গোটা প্রক্রিয়া আমার একটি মানসিক সম্পদ । এটা আমাকে আনন্দ দেয় । যখন আমার কাজ গ্রামবাসীদের প্রশংসা পায় তখন আমি মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব । জনসাধারণের প্রশংসা আমার সবচেয়ে বড় পাওনা ।