সার্কের দু'দিনব্যাপী ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন ৩ আগষ্ট শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে শেষ হয়েছে। সম্মেলনে " কলম্বো ঘোষণা" গৃহীত হয়েছে। ঘোষণাটিতে সন্ত্রাস ও আন্তর্জাতিক অপরাধের ওপর আঘাত হানার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে সার্কের কাঠামোর দু'টি গুরুপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারত ও পাকিস্তান সত্যিই সত্যিই হাতে হাত মিলিয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে পারবে কি না তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি করেছে।
" কলম্বো ঘোষণায়" বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্কের বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় যে অগগ্রতি অর্জিত হয়েছে তাতে সদস্য দেশগুলোর নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি তারা জোর দিয়ে বলেন, সার্কের বিভিন্ন প্রকল্প ও কাঠামোর কার্যকারিতা অব্যাহতভাবে সুসংবদ্ধ করা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের নেতারা সর্বসম্মতভাবে মনে করেন , আঞ্চলিক অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি সহ নানা ক্ষেত্রের উন্নয়ন তরান্বিত করা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য সার্কের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা উচিত। এছাড়া এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য এ সব দেশের অবদান রাখা উচিত। শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে সার্কের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সার্ক উন্নয়ন তহবিল স্থাপন চুক্তি, অপরাধী সংক্রান্ত পারস্পরিক সহায়তা চুক্তি, দক্ষিণ এশিয়ার অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলে আফগানিস্তানের অন্তর্ভূক্তি সংক্রান্ত চুক্তি ও দক্ষিণ এশিয়ার মানদন্ড সংস্থার গঠন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়া সন্ত্রাস দমন ছিল এবারকার শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় । " কলম্বো ঘোষণায়" " সব ধরনের সন্ত্রাসী ও বর্বরোচিত তত্পরতার নিন্দা করা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান সার্কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সুতরাং সন্ত্রাস দমন বিষয়ে এ দু'টি দেশের নেতাদের অবস্থান বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণের বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়া সময় বলেন, সন্ত্রাসী তত্পরতা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সামাজিক উন্নয়নের হুমকি দানকারী প্রধান শত্রু হিসেবে সারিভূত হয়েছে। তিনি বিশেষ করে জোর দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসী তত্পরতা দমনের ক্ষেত্রে সার্কের সংশ্লিষ্ট সদস্যগুলো আরো বেশী দায়িত্ব পালন করা উচিত। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তার ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান স্বয়ং সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় শিকার। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছে। তিনি আশা করেন, সার্কের বিভিন্ন দেশ পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে সত্যি সত্যিই হাতে হাত মিলিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী সংগ্রামে বিজয় অর্জনের চেষ্টা চালাবে।
এ কথা ষ্পস্ট যে, সম্প্রতি সংঘটিত ধারাবাহিক সন্ত্রাস ও সহিংসতার জের টেনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা এ ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেন। ৭ জুলাই আফগানিস্তানে ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে দু'জন ভারতীয় কূটনীতিক সহ ৫০জনেরও বেশী লোক নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে ভারত , কিন্তু পাকিস্তান এর সত্যতা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। জুলাই মাসের ২৫ ও ২৬ তারিখে ভারতের ব্যাংগালোর ও আহমেদাবাদে ধারাবাহিক বোমা হামলায় প্রায় ৫০জন নিহত ও ২০০জন আহত হয়। ভারতের প্রচার মাধ্যমে এ সব ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিয়োগ করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান বারবার তা অস্বীকার করেছে।
২ জুলাই কলম্বোতে একটি বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা বলেছেন, দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এতক্ষণ আজকের প্রতিবেদন শুনলেন।
|