২৮ জুলাই ঘটনা ইরাকের বিভিন্ন স্থানে টানা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরাঞ্চলের তেল কেন্দ্ কিরকুকে বোমা বিস্ফোরণে ২০জন এবং রাজধানি বাগদাদে সংঘটিত ৩দফা বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মানুষ হতাহত হয়েছে। চলতি বছরের মে থেকে মাস দু'য়েকের জন্য ইরাকের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। চলতি জুলাই মাসে ইরাক আবারো সন্ত্রাসী হামলার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই অব্যাহত সহিংসতা থেকে এটা স্পষ্ট যে ইরাকে সহিংসতার মূল কারণগুলো এখনো উত্পাটিত হয়নি।
গত ২৮ জুলাইয়ের বিস্ফোরণগুলো ছিল ভয়াবহ। কিরকুকের হামলার লক্ষ্য বস্তু ছিল সরকারের সামনে যে সেদিন পার্লামেন্টে গৃহীত প্রাদেশিক পর্যায়ের নির্বাচন সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে কিরকুকে বিক্ষোভরত স্থানীয় কুরদিশ অধিবাসীরা। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানি বাগদাদের ৩টি বিস্ফোরণই ঘটিয়েছে নারী আত্মঘাতীরা । হামলার লক্ষ্য বস্তু ছিল বাগদাদে ধর্মীয় উত্সবে অংশগ্রহণকারী শিয়া মুসলমানেরা।
গত ১৫ জুলাই ইরাকের উত্তরাঞ্চলের দিয়ালা ও নিনেভা প্রদেশে বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা হয়। এতে শবাধিক মানুষ হতাহত হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে সব হামলা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে এ দিন। তবে গত ১৫ এপ্রিলে বাকুরার হামলাটি ছিল আররো ভয়াবহ। সেদিন শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ৪০জন নিহত এবং ৭০জনেরও বেশি লোক আহত হয়।মাঝখানের ৩ মাস কিছুটা শান্তিপূর্ণ থাকলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ইরাক পুনরায় বিস্ফোরোমুখ হয়ে উঠেছে ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরাকের পুনরায় সহিংসতা থেকে স্পষ্ট যে, সেখানকার পরিস্থিতি আদৌ শান্ত নয়। ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মৌলিক পরিবর্তনের কথা আসলে সঠিক নয়। কারণ কয়েক মাসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সত্যিকারভাবে স্থিতিশীল হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধের ৫ বছরেও কেন সেদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এলো না? বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর অন্যতন মূল কারণ হচ্ছে ৫ বছর ধরে ইরাকের সহিংসতা পরিস্থিতির মূলে আরও অনেকগুলো উপাদান রয়ে গেছে।
প্রথমতঃ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন প্রশাসনের অতীত রাজনৈতিক কাঠামে ভেঙে কেন্দ্র নির্ভর দেশ অর্থাত্ " পশ্চিমা গণতান্ত্রিক" দেশে পরিণত হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে ইরাকের ধর্ম ও জাতি দ্বন্দ্ব প্রকট আকারে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। ফলে ইরাকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি-- সুন্নি শিয়া এবং কুর্দিশ অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ স্থায়ী রূপ পেয়েছে। এছাড়াও, বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপের কারণে করায় ইরাক একটি সন্ত্রাসী এলাকায় পরিণত হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ ইরাক যুদ্ধের পর সাদ্দামের রাজনৈতিক প্রভাব দূর করার জন্য ইরাকের অতীত রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে তছন্ছ করে দেওয়া হয়েছে। ইরাকের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী ভেঙে দেয়া ছাড়াও নতুন করে সরকারও নির্বাচিত হয়েছে। নতুন ইরাক সরকার শুধু নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোয় মতৈক্য হয় না। সুতরাং , ক্ষমতাসীনদের শক্তি ব্যাপকভাবে খর্ষ হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সমর্থনও হয়তো তাদের পক্ষে নেই।
তৃতীয়তঃ ইরাকে দীর্ঘ স্থায়ীভাবে ব্যাপক মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রাখা । সেখানকার সহিংসতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ইরাক যুদ্ধ ইরাকের স্থানীয় জনগণের জন্য বিশাল ক্ষতি বয়ে এনেছে। হামলায় কেবল যে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে তাই নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও অব্যাহত তত্পরতা চলছে। ইরাকের বহু সহিংসতা শুধু এ কারণেই ঘটছে। সুতরাং বিদেশী সেনাবাহিনী ইরাকে মোতায়েনের সমস্যা সমাধান না হলে ইরাকে স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এমন কি, সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণে বুশ সরকারের বিরোধিতাও ইরাকের অব্যাহত সহিংসতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ইরাকের সহিংসতার মূল কারণগুলো নির্মূল না করতে পারলে সেখানে সত্যিকার স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।--ওয়াং হাইমান
|