পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির টিকিট কেন্দ্র জানিয়েছে , ২৭ জুলাই নাগাদ পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সব টিকিটের বিক্রি হয়ে গেছে । ২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে অলিম্পিক গেমসের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে মোট ৭০ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে ।
ওয়াং সুই চুন একজন গর্ভবর্তী নারী । তিনি গত বছরের ১৫ এপ্রিল ইন্টারনেটে টিকিট কেনার জন্য নাম নিবন্ধন করেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , তার সবচেয়ে বড় আশা হলো ২০০৮ সালে নিজের নবজাত সন্তানকে নিয়ে জাতীয় স্টেডিয়াম বার্ড নেস্টদেখা । তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । ওয়াং সু চুন প্রথম পর্যায়ের টিকিট বিক্রিতে ১১০ দশ মিটার হার্ডলসের চুড়ান্ত প্রতিযোগিতার একটি টিকিট পেয়েছেন। তিনি বলেন , ২০০৮ সালে নিজ দেশে অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা দেখার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি । আমি আশা করি , আমি আমার সন্তানকেনিয়ে অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা দেখতে পারবো ।
জানা গেছে , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের ৭০ লাখ টিকিটের মধ্যে অর্ধেক চীনারা পেয়েছেন। চীনের লোকসংখ্যা বেশি এবং ৫৮ শতাংশ টিকিটের দাম এক শ' ইউয়ানের নীচে বলে সব চীনা দর্শকের টিকিট পাওয়ার আশা পূরণ করা অসম্ভব । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের টিকিট কেন্দ্রের কর্মী রোন চুন বলেন , যারা টিকিট কিনতে চান , তারা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের টিকিট কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে নাম নিবন্ধন অথবা পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির নির্ধারিত চায়না ব্যাংকের এক হাজারটি শাখায় টিকিট নিবন্ধন ফর্ম জমা দিতে পারেন । বিদেশের দর্শকরা নিজ দেশ ও অঞ্চলের অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির কাছে টিকিটের খোঁজখবর নিতে পারেন ।
২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ছিল অলিম্পিক গেমসের টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় পর্যায় । এ পর্যায়েও নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হয় এবং যারা আগে নিবন্ধন করেছিলেন , তাদের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি । এ পর্যায়ে এতো বেশি মানুষ টিকিট কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের ঢোকেন যে বাধ্য হয়েএক ঘন্টার মধ্যেই টিকিট কেন্দ্রের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয় । আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাকস রগে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন , অলিম্পিক গেমসের প্রতি চীনাদের ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
পেইচিংবাসী লি লি দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকিট বিক্রির সময় অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দুটি মূল্যবান টিকিট পেয়েছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , আমি পেইচিংয়ে থাকি । নিজের জন্মস্থানে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিজের চোখে দেখা আমার আন্তরিক আকাংখা । দ্বিতীয় পর্যায়ে ইন্টারনেটে টিকিট অর্ডার দেয়ার সময় আমি কাজের জন্য পেইচিংয়ের বাইরে ছিলাম । আমি সেই শহরের একটি সাইবার ক্যাফে থেকে টিকিটের জন্য নিবন্ধন করেছি । অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিজের চোখে দেখার সুযোগ পাচ্ছি বলে আমি সত্যিই ভাগবান ।
২০০৮ সালের ২৫ জুলাই ছিল অলিম্পিক গেমসের শেষ পর্যায়ের টিকিট বিক্রির দিন । এ পর্যায়ে দর্শকরা সোজা টিকিট কেন্দ্র থেকে গেমসের টিকিটগুলো কিনতে পারেন । সেদিন পেইচিং অলিম্পিক স্টেডিয়ামের টিকিট কেন্দ্রের সামনে দশ হাজার লোক লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কোনো কোনো মানুষ টিকিট পাওয়ার জন্য সারা রাত সেখানে ছিলেন ।
ওয়াং লি না ৪৫ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর ডাইভিং প্রতিযোগিতার দুটি টিকিট পেয়েছেন । তিনি উত্সাহের সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , আমি স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতা দেখতে আগ্রহী । সেখানে অলিম্পিক গেমসের পরিবেশ অনুভব করতে পারবো । চীনে অলিম্পিক গেমস আয়োজন চীনাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন, এখন এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে । তাই আমি টিকিট পাওয়ার জন্য এতো বেশি কষ্ট সহ্য করেছি ।
বিদেশেও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের টিকিট পাওয়া সহজ ব্যাপার নয় । আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ২০৫টি সদস্যের মধ্যে ১৮৫টি সদস্যের অলিম্পিক কমিটি পেইচিংয়ের অলিম্পিক গেমসের টিকিটের অর্ডার দিয়েছে । তাই এ কথা বলা যায় , পেইচিং অলিম্পিক গেমস বড় অলিম্পিক পরিবারের একটি মহাসম্মীলনী ।
|