v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-07-24 19:38:00    
পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে সারা বিশ্বের একটি ক্রীড়া মহাসম্মীলন : চীনে রুশ রাষ্ট্রদূত

cri

    প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা , ২৯তম অলিম্পিক গেমস আগামী আগস্ট মাসের প্রথম দিকে চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে    অনুষ্ঠিত হবে । এবারের অলিম্পিক গেমস সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা ইয়ান সি চীনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সেরগেই রাজোভের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি আনন্দের সংগে বলেন , পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে সারা বিশ্বের একটি ক্রীড়া মহাসম্মীলন । 

     রাজোভ ২০০৫ সালে চীনে আসেন । তিনি নিজের চোখে চীনের সাম্প্রতিক বছরের বিরাট পরিবর্তন দেখেছেন । তিনি বিশ্বাস করেন , চীনে অলিম্পিক গেমস আয়োজন একটি অত্যন্ত নির্ভুল বাছাই । তার মতে ক্রমবর্দ্ধমান বহুমুখী জাতীয় শক্তি থাকায় চীন একটি সফল ও উচ্চ মানের ক্রীড়া মহাসম্মীলন আয়োজন করতে পুরোপুরি সক্ষম হবে । তিনি বলেন ,

    নিসন্দেহে পেইচিং অলিম্পক গেমস হবে সুসংগঠিত ও ক্রীড়ার নৈপুণ্যের দিক থেকে উচ্চ মানের একটি গেমস । আমার দৃঢ় বিশ্বাস , পেইচিং অলিম্পক গেমস রাজনীতিকরণের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সারা পৃথিবীর একটি ক্রীড়া উত্সব আয়োজন করবে ।বহু আগেই রাশিয়ার শীর্ষ নেতাও তেমন বলেছিলেন ।

     রুশ রাষ্ট্রদূত রাজোভ সবসময় তরুণ সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানোর জন্যে চেষ্টা করে আসছেন । তাই তিনি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শ্লোগান " এক বিশ্ব , এক স্বপ্নের" ভূয়সী প্রশংসা করেন । তিনি বলেন , কেন না , এ শ্লোগান শুনে বিশ্বের জনগণ , বিশেষ তরুণ তরুণী সরাসরি শান্তি ও মৈত্রীর শক্তি অনুভব করতে পারে । অলিম্পিক গেমস আয়োজন যথাযথভাবে তাদের মধ্যে আদান প্রদান ও পারস্পরিক সমঝোতার সুযোগ এনে দেবে । তিনি বলেন ,

    আমি মনে করি , ক্রীড়া প্রথমে তরুণ সমাজের মৈত্রী জোরদার করার একটি উত্তম উপায় । তরুণ তরুণীরা পরস্পরের সংগে সৌহার্দ্যের সংগে সহঅবস্থান করতে পারলে এবং পরস্পরকে উপলব্ধি করতে ও একে অপরের সংগে সহযোগিতা করতে পারলে সারা বিশ্বের জনসাধারণের জীবন নিশ্চয় আরো সুন্দর ও নিরাপদ হবে । সুতরাং তরুণ সমাজের মধ্যে মৈত্রী ও পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো হচ্ছে আমাদের অভিন্ন কর্তব্য ।

    ক্রীড়া অনুশীলনের প্রতি গভীরভাবে ভালোবাসেন বলে রাজোভ সারা পৃথিবীতে পেইচিং অলিম্পিক মশাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় দেখা দেয়া অসংগতিপূর্ণ তত্পরতার নিন্দা করেছেন । তিনি মনে করেন যে , অলিম্পক মশাল শান্তি , মৈত্রী ও পারস্পরিক সমঝোতার প্রতীক । রাজনীতির দ্বারা একে প্রভাবিত করা উচিত ছিল না । রাজোভ বলেন , সারা বিশ্বে পেইচিং অলিম্পিক মশাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ যে উত্সাহ ও উদ্দীপনা দেখিয়েছেন , তাতে অলিম্পিক মশালের পবিত্রতা প্রমাণিত হয়েছে । তিনি বলেন , আমার যতদূর জানা আছে যে , এবারের মশাল হস্তান্তর সুষ্ঠুভাবে চলেছে । যেমন রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবাগে মশাল হস্তান্তরের সময় সম্ভাব্য সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় । সেখানকার অধিবাসীরা এ মশাল হস্তান্তরের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন । বলা যায় , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সংগে সম্পর্কিত সব ব্যাপারে রাশিয়ায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে । এটি হলো এক ধরণের বিনিময় ।

    গত বিশ বাইশ বছরে অলিম্পিক গেমসের অংগণে চীন ও রাশিয়া যেমন বন্ধু , তেমনি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী । আগেকার পদক তালিকার প্রথম সারিতে সবসময় এ দুই দেশের নাম থাকে । ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পক গেমসে চীনা প্রতিনিধিদলের পাওয়া স্বর্ণপদকের সংখ্যা প্রথমবারের মত রাশিয়াকে ছাড়িয়ে স্বণপদকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে । চার বছর পর অনুষ্ঠেয় পেইচিং অলিম্পক গেমসে স্বর্ণপদক জেতার ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়া কি ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ? এ সম্পর্কে চীনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রাজোভ আমাদের সংবাদদাতার সংগে তামাশা করে বলেন , আমরা জানি , চীন উদ্যোগের সংগে এবারের অলিম্পক গেমস আয়োজনের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে । এবার চীন স্বাগতিক দেশ হবে । রুশ ভাষায় একটি প্রবাদ আছে , বাড়িতে থাকলে দেয়াল পর্যন্ত আপনাকে সাহায্য করবে । আমরা প্রায় চীনা বন্ধুদের সংগে ঠাটা করে বলি , আপনারা স্বাগতিক দেশ । তবে রুশ দলের জন্যে যেন কিছু স্বর্ণপদক রেখে দেন ।

    অথচ রাজোভ আমাদের সংবাদদাতার সংগে তামাশা করার পরও পেশাগতভাবে পেইচিং অলিম্পক গেমসে দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন । তিনি মনে করেন , চীন ও রাশিয়ার ক্রীড়া শক্তি খুবই কাছাকাছি । বড় বড় প্রতিযোগিতায় দুই দেশের খেলোয়াড়রা সাফল্য অর্জন করতে পারবেন কি না , তা তাদের মানসিক অবস্থা ও প্রতিযোগিতায় তাদের তাত্ক্ষনিক ক্রীড়া নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করবে । তিনি পূর্বাভাস দিয়ে বলেন , চীন , রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পেইচিং অলিম্পিক গেমসের স্বর্ণপদক জয় করার লড়াইয়ে পুরোভাগে থাকবে । অবশ্য চীনা খেলোয়াড়রা স্বাগতিক বলে তাদের কিছুটা প্রাধান্য থাকতে পারে । তবে পাশাপাশি তারা প্রবলতর চাপের মুখেও পড়বেন । তিনি বলেন , আসলে শক্তি হচ্ছে সবচেয়ে মৌলিক জিনিস । রুশ দল হোক, চীনা দল হোক , উভয়ই স্বর্ণপদের দিক থেকে প্রথম চারটি বা তিনটি স্থানে থাকবে । তারা নিশ্চয় যথাযোগ্য সাফল্য অর্জন করবে ।

    অলিম্পিক গেমসের ওপর রাজোভের পেশাগত বিশ্লেষণ আমাদের সংবাদদাতাকে অবাক করে তুলেছে । তবে কিছু ক্ষণের মধ্যে সবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । কেন না , রাজোভ যেমন একজন পেশাগত কূটনৈতিক , তেমনি একজন ক্রীড়া অনুরাগী । তরুণ বয়স থেকেই তিনি ক্রীড়া অনুশীলনকে পছন্দ করতেন । বেশ লম্বা রাজোভ তাদের সমবয়সীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে একজন অপেশাদার ক্রীড়াবিদ ছিলেন । তখনকার কথা স্মরণ করে রাজোভ বলেন , যখন আমি যুবক ছিলাম , তখন আমি অনেক ধরণের ক্রীড়া পছন্দ করতাম । যেমন ভলিবল , বাস্কেটবল , টেবিল টেনিস , টেনিস , সাঁতার ও ফুটবল । এখন আমি টেলিভিশনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সম্প্রচার দেখতে পছন্দ করি । তবে যদি স্টেডিয়ামে গিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা দেখার সুযোগ হয় , তাহলে আমি স্টেডিয়ামে যেতে খুবই আগ্রহী ।

    রাজোভ আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , এখন তার ক্রীড়া অনুশীলনের সময় কম হলেও তিনি ক্রীড়া সংক্রান্ত তত্পরতায় শরীক হতে ইচ্ছুক । পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কে তিনি বলেন , তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা হচ্ছে , স্টেডিয়ামে গিয়ে এ মহাসম্মীলন দেখতে পাওয়া । এ ছাড়া তিনি নিজের কাঁধে ন্যাস্ত আরেকটি কর্তব্যের কথা আমাদের সংবাদদাতাকে জানান । সেটা হচ্ছে , তিনি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের আয়োজন ও পরিচালনা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৪ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পক গেমস আয়োজনের জন্যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন । তিনি বলেন , বর্তমানে সোচি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে শীতকালীন অলিম্পক গেমসের প্রস্তুতি নিচ্ছে । ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পক গেমস আয়োজনের যোগ্যতা অর্জনের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সরকার অলিম্পিক স্টেডিয়াম ও অন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ হাতে নেয় । সোচি রাশিয়ার দক্ষিণাংঞ্চলে অবস্থিত । সেখানে থাকা ও বিশ্রামের অবস্থা বেশ ভালো । ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ যেমন খেলোয়াড়দের জন্যে সুষ্ঠু পরিবিশ সৃষ্টি করতে পারবে , তেমনি রাশিয়ার দক্ষিণাংঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে ।

    রাজোভ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন , রাশিয়া বড় ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের ক্ষেত্রে চীনের সংগে বিনিময় ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী । তার বিশ্বাস , যোগাযোগের একটি সেতু হিসেবে ক্রীড়া চীন ও রাশিয়া তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের ব্যবধান কমিয়ে আনবে । যাতে তারা সহজে পরস্পরকে উপলব্ধি করতে পারে এবং সম্প্রীতিতে বসবাস করতে পারে । এটি হচ্ছে ক্রীড়া অনুশীলন ও অলম্পিক চেতনার মর্ম । তিনি বলেন ,

    আমি নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে পেইচিং অলিম্পক গেমসের সফল আয়োজনকে কামনা করি । চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সকল শ্রোতাদের সুখ-স্বাচ্ছ্বন্দ কামনা করি