v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-07-23 19:53:00    
আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জনক পিয়েরে দ্য কুবার্তিন(ছবি)

cri

     পিয়েরে দ্য কুবার্তিনের মূর্তি

    আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস এক শ' বছরেরও বেশি । শতাধিক বছরের ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত মানুষ অলিম্পিকের জন্য বড় অবদান রেখেছেন । ফ্রান্সে আমাদের সংবাদদাতা ফ্রান্সের অলিম্পিক কমিটির কর্মকর্তা ও শহরবাসীকে তাদের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত অলিম্পিক ব্যক্তিত্বেরনাম জিজ্ঞেস করলে সবাই এক বাক্যে একটি নামই বলেছেন। তিনি হলেন আধুনিক অলিম্পিক গেমসের পিতা পিয়েরে দ্য কুবার্তিন।

    ১৮৬৩ সালে প্যারিসের একটি অভিজাত পরিবারে কুবার্তিনের জন্ম। তিনি অন্যান্য অভিজাত পরিবারের ছেলেদের মতো কূটনীতি , রাজনীতি বা সামরিক পেশায় কাজ করতে পারতেন । তবে তিনি তখনকারের নিম্ন পর্যায়ের পেশা --ক্রীড়া চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন । ফ্রান্সের জাতীয় ক্রীড়া জাদুঘরের সাবেক প্রধান , বিশ্ব অলিম্পিক বিশেষজ্ঞ জাঁ দুরী মনে করেন , কুবার্তিনের ক্রীড়া চর্চার দুটি পর্যায় রয়েছে । প্রথম পর্যায় প্যারিসে আর দ্বিতীয় পর্যায় সুইজারল্যান্ডে। তিনি বলেন , প্রথম দিকে কুবার্তিন আশা করেন , শরীর চর্চার মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যের মান উন্নত হবে । কারণ তখন ফ্রান্স যুদ্ধে পরাজয়ের কালো ছায়ার মধ্যে ছিল । পরে তার ধারণার কিছু পরিবর্তন ঘটে। তিনি সুইজারল্যান্ডে বাসবাস করতে শুরু করেন এবং ১৯১৫ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদর দপ্তর লোসানে স্থানান্তরিত করেন । সারা জীবন তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করেছিলেন এবং নিজের সব অর্থ ব্যয় করেছিলেন । তাই শেষ বয়সে কুবার্তিনের জীবন বেশ কষ্টকর ছিল ।

    কুবার্তিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন । তিনি দেখেছেন সেখানে ক্রীড়াকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । ১৮৮৭ সালে কুবার্তিন ' ফ্রান্স ও বৃটেনের মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা' শিরোনামেরএকটি প্রবন্ধে ফ্রান্সের মাধ্যমিক স্কুলে ক্রীড়া চর্চা যোগ করার প্রস্তাব করেন । তবে তার এ প্রস্তাব তখন ব্যাপক সমর্থন পায় নি । জাঁ দুরি বলেন , সেই আমলে ফ্রান্সে তথা গোটা পৃথিবীতে ক্রীড়া জনপ্রিয় ছিল না । ক্রীড়ার ভূমিকা সম্পর্কে অনেকে বেশ সন্দেহগ্রস্ত ছিলেন । কুবার্তিনমনে করেন ,ক্রীড়ার বিশ্বায়ন বাস্তবায়নের জন্য সবার মনের সন্দেহ দূর করা দরকার । এর জন্য আধুনিক অলিম্পিক আন্দোলন পুনরুদ্ধার করতে হবে । ১৮৯০ সালে কুবার্তিন অলিম্পিক আন্দোলনের উতপত্তি স্থল—গ্রীসের অলিম্পিয়া সফর করেন । তিনি অলিম্পিয়ার স্টেডিয়ামের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাচীন অলিম্পিক চেতনার শক্তি অনুভব করেন । তিনি মনে করেন অলিম্পিকের ঐক্য , বন্ধুত্ব ও শান্তির বার্তাতখনকার ক্রীড়া জগতের বিশৃঙ্খল অবস্থা দূর করতে পারবে ।

    ফ্রান্সের লা সবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর জ্যাক ওলিভিয়ার বুতোঁ বলেন , কুবার্তিনমনে করেন , ক্রীড়া মহাসম্মীলনী আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদদের পারস্পরিক বিনিময় ও যোগাযোগ বাড়বে , এটা বিশ্বশান্তি ও সংহতির জন্য হিতকর । ঠিক এই ধারণা পোষণ করে তিনি আধুনিক অলিম্পিক আন্দোলন পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান ।

    ১৮৯২ সালের ২৫ নভেম্বর প্যারিসের লা সবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রান্সের ক্রীড়া ফেডারেশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি অধিবেশনে কুবার্তিন তার অলিম্পিক পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত বিখ্যাত ভাষণ দেন । তিনি তার ভাষণে আনুষ্ঠানিকভাবে আধুনিক অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রস্তাব করেন । তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৮৯৪ সালের ১৮ জুন ইউরোপ ও আমেরিকার বারোটি দেশের ৭৯জন প্রতিনিধি প্যারিসের লা সবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়ে অলিম্পিক গেমস পুনরুদ্ধারের বিষয় আলোচনা করেন । এ অধিবেশন আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জন্য ভিত্তি প্রস্তরস্থাপন করে । জাঁ দুরী বলেন , ( রেকর্ডিং ৪ ) এই অধিবেশনে আধুনিক অলিম্পিক গেমস আয়োজনের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । যেমন অলিম্পিক গেমস প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হবে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় শহরে পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে । অধিবেশনে এটাও স্থির করা হয় যে , অলিম্পিক গেমসে বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে ।

    অলিম্পিক গেমসের পতাকাও কুবার্তিনের একটি বড় অবদান । ১৯১৪ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ১৬তম অধিবেশন প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় । সেই বছর ছিল কুবার্তিনেরআধুনিক অলিম্পিক গেমস পুনরুদ্ধার প্রস্তাবের বিংশতিতম বার্ষিকী । ১৬তম অধিবেশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান কুবার্তিন তার নিজের তৈরী একটি পতাকা অধিবেশনে উপস্থিত সবাইকে দেখান । এই সাদা রংয়ের পতাকার উপর জড়ানো নীল , হলুদ , কালো , সবুজ ও লাল রংয়ের পাঁচটি রিং আছে। এই পতাকাই পরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির পতাকায় পরিণত হয়।

    এখন ফ্রান্স ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কুবার্তিনের নাম ছড়িয়ে রয়েছে। বিশ্ববাসী আধুনিক অলিম্পিতের জন্য ব্রতে তার বিরাট অবদানের কথা কখনো ভুলবে না । (ফাং সিউ ছিয়ান)

পিয়েরে দ্য কুবার্তিনের কবর