v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-07-23 16:39:24    
ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত

cri
সরকারের ওপর আস্থা ভোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভার দু'দিনব্যাপী বিশেষ অধিবেশন ২২ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ৮টায় নয়াদিল্লীতে শেষ হয়েছে। আস্থা ভোটে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) সরকার জয়ী হয়েছে। সরকারের পক্ষে ভোট পড়ে ২৭৫টি এবং বিপক্ষে ২৫৬টি। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকার ক্ষমতা অব্যাহত রাখার বৈধতা পেলো।

২০০৬ সালের মার্চ মাসে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত বেসামরিক পরমাণু জ্বালানী সহযোগিতা চুক্তি ভারতের এবারের রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত 'পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি' স্বাক্ষর না করা অবস্থায়ও যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু জ্বালানী ও প্রযুক্তি সহযোগিতা পাবে। একই সময় ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা বেসামরিক ও সামরিক পরমাণু খাত আলাদা রাখবে এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের দেয়া পরমাণু প্রযুক্তি ও উপকরণ সামরিকভাবে ব্যবহার করবে না। এছাড়া তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ'র তত্ত্বাবধান মেনে নেবে। এই চুক্তি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়ে। রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ভারত একটি পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ১৯৯৮ সালের মে মাসে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালায়। কিন্তু পরমাণু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের মেধাশক্তি ও অবকাঠামো যথেষ্ট নয়। সুতরাং বাইরের সাহায্য ভারতের জন্য খুব জরুরী। ২০০৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ওয়াশিংটনে সাক্ষাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা সংক্রান্ত আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। কঠিন ও জটিল আলোচনার মধ্য দিয়ে ২০০৬ সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ভারত সফরকালে দু'দেশের মধ্যে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

কিন্তু এই চুক্তি ভারতে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে। বামদলগুলো মনে করে, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকার বাধ্য হবে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আইএইএ'কে ভারতের বর্তমান পরমাণু স্থাপনা পরীক্ষা করার অনুমতি দিলে ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদার জন্য বড় হুমকি ডেকে আনা হবে। বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টি অভিমত প্রকাশ করে যে, বহু বছর ধরে অন্যান্য দেশগুলোর প্রথম শ্রেণীর প্রযুক্তিতে 'অংশগ্রহণের নামে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ কার্যকর' করার নীতি অনুসরণ করে আসছে। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির আওতায় ভারতের পরমাণু পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তির শাখায় পরিণত হবে। যুক্তরাষ্ট্র এর সুযোগ নিয়ে ভারতের উন্নয়ন কার্যক্রমে ঢুকে পড়বে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পড়বে।

৯ জুলাই, ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টিসহ ৪টি বামদল আনুষ্ঠানিকভাবে মনমোহন সিং সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে ক্ষমতাসীন ইউপিএ পার্লামেন্টে সংখ্যালঘিষ্ঠ দলে পরিণত হয়। ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবিলম্বে লোকসভার বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করে সিং সরকারের প্রতি আস্থা ভোট গ্রহণের অনুরোধ জানায়।

২১ ও ২২ জুলাই লোকসভার অধিবেশনে দু'দিনব্যাপী তুমুল বিতর্ক হয়। পার্লামেন্টের বাইরে দু'পক্ষের সমর্থকরা বিভিন্ন মাত্রায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দল বা ক্ষমতাসীন জোট পার্লামেন্টের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে, ক্ষমতাসীন থাকার বৈধতা পাবে। ভোটের চুড়ান্ত ফল অনুযায়ী, সিং সরকার ২৭৫ ভোট পেয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সিং সরকার তার পুরো কার্যমেয়াদ সম্পন্ন করতে পারবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিং সরকার আস্থা ভোটে উতরে গেলেও ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি যে ভারতের পার্লামেন্টে সুষ্ঠুভাবে অনুমোদিত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ অধিবেশনে আস্থাভোটকে কেন্দ্র করে ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় এই চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। প্রবল জনরোষ ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহ আরো বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।