v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-07-22 20:41:31    
থাং ছিনের মৃদু হাসি

cri
    থাং ছিনের বয়স ১০ বছর । সে সিছুয়ান প্রদেশের সিফাং শহরের প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী । সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পে তার একটি পা ভেঙে গেছে । কিন্তু ভিডিও ক্যামেরার সামনে সে ব্যথা লুকিয়ে হাসিখুশি মুখে উপস্থিত হয় । তার হাসি মুখ অজস্র মানুষকে মুগ্ধ করে। তার হাসিতে সবাই আশা ও শক্তি দেখতে পায় । সবাই এই মৃদু হাসিকে " ভূমিকম্পের সবচেয়ে সুন্দর হাসি" বলে থাকে ।

    ১২ মে দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে থাং ছিন ও তার দশ-বারোজন সহপাঠী তিন তলার ক্লাস-রুমে নাচ শিখছিল । ঠিক এই সময় তাদের ক্লাস-ভবন কেঁপে ওঠে । উপস্থিত সকলেই আতংকে স্তব্ধ হয়ে যান । ভবনটি আবার কেঁপে ওঠে , এ সময় সবাই বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন । থাং ছিন সবার শেষে ক্লাস-রুম থেকে বেরিয়ে আসে । সে সিঁড়ির দিকে রাখার সঙ্গেসঙ্গে গোটা তিন তলার ক্লাস-রুম ধসে পড়ে । ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে ভয়ঙ্কর চিত্কার ও কানাকাটির আওয়াজ ভেসে আসে । সিমেন্টের পাত থাং ছিনের বাম পায়ের ওপর এসে পড়ে । আটকে গিয়ে সে আর নড়াচড়া করতে পারে না ।

    থাং ছিনের বাড়ি হোং-পাই থানার বেশির ভাগ বাড়িঘর মুহূর্তে ভেঙে পড়ে । নিতান্ত ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকদের সর্বপ্রথমে স্কুলের কথা মনে পড়ে । ভূমিকম্পের সময়ে থাং ছিনের দাদা , ৬০ বছর বয়সী থাং ছুয়ানপিন চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন । তিনি লোকদের সঙ্গে থানার প্রাথমিক স্কুলের দিকে ছুটে যান । কয়েক মিনিট পর থাং ছিন ধ্বংসস্তুপ থেকে অভিভাবকদের কাতর আওয়াজ শুনতে পায় । সিমেন্টের পাতের ফাঁক দিয়ে থাং ছিন বাইরে দেখার চেষ্টা করল । সে দাদাকে দেখেছে । কিন্তু দাদা তার কন্ঠস্বর শুনতে পাননি ।

    দাদা দুর্বল শরীর নিয়ে দুই হাত দিয়ে ধ্বংসস্তুপে খুঁজতে থাকেন । হঠাত তিনি থাং ছিনকে দেখতে পেলেন । সিমেন্টের পাতের ফাঁক থেকে থাং ছিনকে বের করার চেষ্টা করতে থাকলেন । কিন্তু কোনোভাবেই তিনি থাং ছিনকে বের করতে পারছিলেন না । এ সময় অন্য এক অভিভাবক দাদাকে একটি কাস্তে দেন । দাদা কাস্তে দিয়ে থাং ছিনের প্যান্ট কেটে দিয়ে তাকে উদ্ধার করেন । "দাদা খুব সাহসী । তিনি আমাকে কোলে নিয়ে খেলার মাঠে রেখে আবার ধ্বংসস্তুপে ফিরে অন্য ছেলেমেয়েকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেন । " থাং ছিন সে কথা স্মরণ করে বলে ।

    ভূমিকম্প হওয়ার সময় থাং ছিনের মা বাড়িতে ছিলেন । যখন তিনি স্কুলে গিয়ে পৌঁছান ততোক্ষণে থাং ছিন উদ্ধার হয়েছে । ধসে পড়া স্কুল ভবন ও মেয়ের গায়ের রক্ত দেখে থাং ছিনের মা চিত্কার করে কেঁদে উঠলেন । " মা কেঁদো না , আমার কিছু হয়নি । আমি ভালই আছি ।" বাম পায়ে তীব্র ব্যথা হলেও থাং ছিন মাকে সান্ত্বনা দিয়ে এ কথা বলে ।

    পাহাড় ধসে পড়ায় সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৪ মে সকাল নাগাদ থাং ছিনকে কুয়াং হান শহরের ৪ নং গণ হাসপাতালে পাঠানো হয় । ডাক্তার বলেন, থাং ছিনের অবস্থা অনেক উন্নতি হয়েছে । তিন-চার সপ্তাহ পর সে বিছানা ছেড়ে হাঁটার অনুশীলন করতে পারবে । ভূমিকম্পের কালো ছায়া থাং ছিনের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । আকস্মিক কোনো আওয়াজ শুনলে তার ভয়ে লাগে । ডাক্তার বলেন, "সে অনুভব করে , যে কোনো সময় বাড়িঘর ধসে পড়তে পারে। রাতে সে প্রায় দুঃস্বপ্ন দেখে এবং ভয়ে জেগে ওঠে "

    ডাক্তার আরও বলেন, থাং ছিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর একবারও কাঁদেনি । চিকিত্সার সময় ব্যথা হলে সে দাঁতে দাঁত চেপে মুঠো শক্ত করে থাকতো । সারাক্ষণ তার মুখে মৃদু হাসি লেগে আছে । ডাক্তাররা তাকে ছোটো সুন্দর মেয়ে বলে প্রশংসা করেন । সবাই তার সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন । তার মৃদু হাসি চিকিত্সকদের জন্য সান্ত্বনার মতো । " তার হাসি মুখ দেখে আমাদের ভারাক্রান্ত মন থেকে কিছুটা ভার লাঘব হয় ।" এটি একজন ডাক্তারের কথা ।

    ব্যস্ততার কারণে কুয়াং হান শহরের ৪ নং গণ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ইন্টারনেট কিংবা ও পত্রিকা পড়ার সময় নেই । ২৫ মে নার্স লি ওয়েনইয়েন সংবাদপত্রে ইন্টারনেটে বাছাইকৃত" সবচেয়ে সুন্দর হাসি" ছবিটি দেখেছেন । তিনি বলেন, ইন্ফুশিন গ্রহণকারী মেয়েটির মৃদু হাসি দেখে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি । তিনি খুব মনোযোগের সঙ্গে ছবির মেয়েটিকে দেখলেন । হঠাত তিনি মনে করেন, মেয়েটি যেন তার পরিচিত , যেন তাকে কোথায় দেখেছেন । " এটা থাং ছিন না? দেখো দেখো , আমাদের ছোটো সুন্দরী মেয়ে তারকা হয়েছে ।" লি ইয়েনের হাতের সংবাদপত্র দেখে সহকর্মীরা খুশী হলেন ।

    ছবিটি দেখে থাং ছিনের মা চিনতে পেরেছেন যে , ছবিটির মেয়ে সত্যিই থাং ছিন ।

    নিজের ছবি দেখে থাং ছিন খুশি হয়ে হেসেছে । তার মনে আছে, সিফাং মাধ্যমিক স্কুলে থাকার সময় যখন সংবাদদাতারা ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তোলেন তখন সে সাধারণ সময়ের মতো হাসে । সে নিজেও ভাবতে পারেনি , তার এই হাসির জন্য সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারকা নির্বাচিত হবে । " শিক্ষক আমাদের বলেছিলেন , হাসি মুখে সব অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে । " থাং ছিন বলল ।" বড় হলে আমি পুলিশ হতে চাই" । টেলিভিশনে আমি দেখেছি , উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের সময় তাদের কি সাহসি !