সম্প্রতি পেইচিং অলিম্পিক ক্রীড়া কেন্দ্রে 'অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত, চীনকে প্রশংসা' শীর্ষক বড় ধরনের একটি জনসংগীতানুষ্ঠান হয়েছে। পেইচিংয়ের বিভিন্ন মহলের চার হাজারেরও বেশি মানুষ, খেলোয়াড় ও শিল্পীদের প্রতিনিধিরা সম্মিলিত হয়ে উচ্চ স্বরে গান গেয়ে আসন্ন পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠান আয়োজনের রাতে অলিম্পিক ক্রীড়া কেন্দ্রের স্টেডিয়ামে একটি আসনও খালি ছিল না। শিশু, কৃষক, সৈন্য, ছাত্রছাত্রী ও শ্রমিক নিয়ে গঠিত পাঁচটি বড় দল সমবেত কন্ঠে গান প্রতিযোগিতার মতো করে সংগীতানুষ্ঠানটি শুরু করে। শিশু দল, কৃষক দল, সৈন্য দল , ছাত্রছাত্রী দল এবং শ্রমিক দল যথাক্রমে 'সাত রং আলো', 'মহা চীন', 'স্বদেশ তোমাকে ডাকছে', 'আমি আর আমার স্বদেশ' ও 'সংহতিই শক্তি' নামের পাঁচটি গান গেয়ে অলিম্পিক গেমসের প্রতি তাদের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।
এখন আপনারা সৈন্য দলের গাওয়া 'স্বদেশ তোমাকে ডাকছে' গানটি শুনছেন। এ দল চীনের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর মোট ৩৬০ জন সৈন্য নিয়ে গঠিত। তাদের শরীর ও চেহারা বলিষ্ঠ, তাদের কন্ঠ স্বরও উদাত্ত।
'অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত, চীনকে প্রশংসা' নামক বড় আকারের জন সংগীতানুষ্ঠান হচ্ছে ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস সংক্রান্ত সাংস্কৃতিক উত্সবের ধারাবাহিক কর্মসূচীর অন্যতম।এই অনুষ্ঠানে ক্রীড়া সংগীত, বিশেষ সাক্ষাত্কার, ভিডিও চলচ্চিত্র ও খেলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে নয়া চীনের ক্রীড়া উন্নয়নের প্রক্রিয়া এবং চীনা খেলোয়াড়দের অলিম্পিক স্বপ্নকে ধারণ করা হয়েছে।
তেং ইয়ু হুয়া
এখন আপনারা কন্ঠ শিল্পী তেং ইয়ু হুয়া ও ছাই কুও ছিং এর গাওয়া 'রূপালী বলের ফুল ফুটছে' গানটি শুনছেন। এই গানটি ছিল ১৯৭৩ সালে পেইচিংয়ে প্রথম এশিয়া-আফ্রিকা মৈত্রী আমন্ত্রণী টেবিল টেনিস প্র্রতিযোগিতায় প্রধান গান। প্রবীন কন্ঠ শিল্পী তেং ইয়ু হুয়া তখন এ গান গেয়ে সারা চীনে জনপ্রিয়তা পান। গানের কথা এমন, 'গান ঢেউ এর মতো। ফুল সাগরের মতো। আমার বন্ধু চার দিক থেকে আসছে। ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন বর্ণ। আমরা হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বসন্তকালের মতো মৈত্রী চিরকাল থাকবে।'
আবার 'রূপালী বলের ফুল ফুটছে' নামের গানটি গাওয়ার সুযোগ পেয়ে তেং ইয়ু হুয়া আনন্দিত হয়েছেন। তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন, 'তখন বিশ্বের অনেক দেশ নয়া চীনকে বুঝতো না। এশিয়া-আফ্রিকা মৈত্রী আমন্ত্রণী টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক বন্ধুর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে। আমার গাওয়া এ গানে তত্কালীন চীন জনগণের মনের কথা প্রকাশিত হয়েছে।'
কণ্ঠ শিল্পী ছাই কুও ছিং সংবাদদাতার সঙ্গে সাক্ষাত্কারে বলেন, 'এক গানেই এক যুগ মনে রাখা যায়। এ গানে বিশেষ যুগে চীনা জনগণের অর্জিত গৌরবের কথা মনে রাখা যায়। আমাদের চমত্কার গানগুলো দুই বা তিন প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলেছে। আমার মনে হয়, ইতিহাস এ ধরনের গান কখনো ভুলবে না। বিশেষ করে টেবিল টেনিস হচ্ছে চীনের জাতীয় খেলা। চীনারা টেবিল টেনিস থেকে অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমে গর্ব বোধ করেন।'
'অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত , চীনকে প্রশংসা' নামক জন সংগীতানুষ্ঠানের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দর্শক ও শিল্পীদের মাঝে সীমানা না থাকা। অনুষ্ঠান স্থলের প্রতিটি মানুষ হচ্ছে অনুষ্ঠানের প্রধান চরিত্র। চার হাজার মানুষ একসাথে গান গেয়েছেন।
এখন আপনারা দাই ইয়ু ছিয়াং, থো টিয়ে সিন ও ওয়েই সোং এর গাওয়া 'এশিয়ার প্রবল শক্তি' নামে গান শুনছেন। ১৯৯০ সালে এশিয়া গেমস পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই গানটি এশিয়া গেমসের গান হিসেবে ব্যাপক প্রচার পায়।
কন্ঠ শিল্পী দাই ইয়ু ছিয়াং এক সাক্ষাত্কারে বলেন, 'ভালো গানের চিরকালীণ প্রাণশক্তি আছে। আজ আমরা আবার 'এশিয়ার প্রবল শক্তি' নামের গানটি গেয়ে শরীর রক্তের উত্তাপ টের পেয়েছি। আমি আশা করি, অলিম্পিক গেমসেও এ ধরণের গান তৈরি হবে। সবাই তা গাইতে পারেন।'
অনুষ্ঠানের মাঝখানে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের ক্রীড়া উন্নয়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। ভিডিও চিত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, লস এ্যাজেলেস অলিম্পিক গেমসে শুটার সুই হাই ফাং চীনের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়, চীনের নারী ভলিবল দলের একটানা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জন এবং লিউ সিয়াং চীনা ঝড় ইত্যাদি। এ সব ছবি দেখে দর্শকরা দীর্ঘসময় ধরে হাততালি দেন।
১৯৮১ সালের ১৬ নভেম্বর টোকিওতে চীনের জাতীয় নারী ভলিবল দল প্রথম বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ বছর পর সংগীতানুষ্ঠানে চীনের ভলিবল দলের প্রবীন সদস্য চাং রোং ফাং, হো ইয়ু চু, লি ইয়ে জুন ও ইয়াং শি মঞ্চে ওঠেন। তারা ১৯৮৪ সালে ২৩তম লস এ্যাজেলেস অলিম্পিক গেমসে তাদের প্রশিক্ষণের সময় ব্যবহৃত ভলিবল নিয়ে আসেন। তত্কালীন চীনা ভলিবল দলের নেতা চাং রোং ফাং বলেন, 'আমার হাতে এ বলটির বিশেষ তাত্পর্য আছে। আমাদের দলের সকল কোচ, খেলোয়াড় ও দলের চিকিত্সক সবাই এ ভলিবলের ওপর স্বাক্ষর করেছেন, বলটি পুরোনো হয়েছে, কিন্তু আমরা তাকে সৌভাগ্যের বল বলে সবসময় অলিম্পিক গেমসের মাঠে নিয়ে যেতাম। আজ আমি আর আমার সঙ্গীরা আর নবীন নই, মাঠে প্রতিযোগিতাও করতে পারি না। কিন্তু আমরা আশা করি, আমাদের এই সৌভাগ্য চীনের নবীন খেলোয়াড়দেরকে উপহার দিতে পারবো। আশা করি, তারা চীনের মাঠে ভালো ফলাফল পাবেন এবং স্বদেশের জন্য আরো বেশি গৌরব বয়ে আনবেন।'
এখন আপনারা কন্ঠ শিল্পী ওয়াং চিয়ে শি ও সিয়ে লি স এর গাওয়া 'সবাই ভলিবল খেলতে আসো' গানটি শুনছেন। ১৯৮৪ সালে চীনের নারী ভলিবল দলের লস এ্যাজেলেস অলিম্পিক যাত্রা উপলক্ষে তত্কালীন জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়াং চিয়ে শি ও সিয়ে লি স ভলিবল দলকে বিদায় জানানোর জন্য এই গান গেয়েছিলেন। শুনুন তাহলে।
২০০১ সালে পেইচিং ২০০৮ সাল ২৯তম অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পায়। চীনা জনগণের একশ বছরের অলিম্পিক গেমসের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
গত বছর চীনের সুরকার অনেক অলিম্পিক সংগীত সৃষ্টি করেছেন। 'আমরা প্রস্তুত' এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি গান।
বন্ধুরা, আমরা অলিম্পিক গানের মধ্য দিয়ে শেষ করছি আজকের সুরের ভুবন অনুষ্ঠান। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|