কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠকের দ্বিতীয় নেতৃ সম্মেলন ১০ জুলাই পেইচিংয়ে শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংশ্লিষ্ট ছয় দেশের প্রতিনিধি দলের নেতারা দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচী বাস্তবায়নের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী উ তা ওয়ে বলেন, এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য হল দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচীর সার্বিক বাস্তবায়ন ও ছ'পক্ষীয় বৈঠককে নতুন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অন্য পাঁচটি দেশের প্রতিনিধি দলের নেতারাও কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু অস্ত্র মুক্তকরণ এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করার কথা বলেছেন।
চীন, উত্তর কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই ছ'দেশের প্রতিনিধি দলের নেতারা ৯ মাস পর পুনরায় কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা নিয়ে বৈঠক বসলেন। এবারের নেতৃ সম্মেলনের চেয়ারম্যান, চীনের প্রতিনিধি দলের নেতা ও চীনের উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী উ তা ওয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, 'এবারের নেতৃ সম্মেলনের লক্ষ্য হল দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা। এবারের নেতৃ সম্মেলনের মাধ্যমে ছ'পক্ষীয় বৈঠক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে। আমাদের উচিত বিভিন্ন দেশের নতুন প্রত্যাশা নতুন মতৈক্যে ও নতুন ঘোষণাকে নতুন চালিকা-শক্তিতে পরিণত করা। যাতে এবারের নেতৃ সম্মেলনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যায়।'
উ তা ওয়ে বলেন, চীন এবারের নেতৃ সম্মেলনের চেয়ারম্যান দেশ হিসেবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমঝোতার মাধ্যমে সম্মেলন সফল করার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।
২০০৩ সালের আগষ্ট মাসে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়। ষষ্ঠ দফার এখন ছ'পক্ষীয় বৈঠক দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। গত বছর ৩ অক্টোবর ষষ্ঠ দফা ছ'পক্ষীয় বৈঠকের দ্বিতীয় পর্যায়ে যৌথ ঘোষণার দ্বিতীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যৌথ দলিল গৃহীত হয়। দলিলে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার উচিত গত ৩১ ডিসেম্বরের আগে ইয়ংবিয়ংয়ে পরমাণু নিষ্ক্রীয়করণ সম্পন্ন করা ও তার পরমাণু পরিকল্পনার বিশদ ঘোষণা দাখিল করা। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত উত্তর কোরিয়া ইতিবাচক সারা দিলে দেশটিকে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠ পোষক দেশের তালিকা থেকে বাদ দেয়া ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি 'বৈরী রাষ্ট্র বাণিজ্য আইন' বাতিল করা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের উচিত উত্তর কোরিয়াকে ১০লাখ টন ভারি তেলের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক, জ্বালানী সম্পদ ও মানবিক সহায়তা করা। কিন্তু উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু পরিকল্পনার ঘোষণা নিয়ে মতভেদ থাকায় ছ'পক্ষীয় বৈঠকের দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচী বাস্তবায়নের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। গত ২৬ জুন উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ছ'পক্ষীয় বৈঠকের চেয়ারম্যান দেশ চীনের কাছে পরমাণু পরিকল্পনার ঘোষণা দাখিল করেছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্র, সন্ত্রাসের পৃষ্ঠ পোষক দেশের তালিকা থেকে উত্তর করিয়ার নাম বাদ দেয়া এবং উত্তর কোরিয়ার প্রতি বৈরী রাষ্ট্র বাণিজ্য আইন বাতিল করার ঘোষণা দেয়। ২৭ জুন উত্তর কোরিয়া ইয়ংবিয়ংয়ে পরমাণু স্থাপনা বিস্ফোরণ ঘটায়।
এ পরিস্থিতিতে ৯ মাস পর পুনরায় এবারের নেতৃ সম্মেলন শুরু হয়েছে। চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুন রু মনে করেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক ও জ্বালানী সম্পদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সমস্যা হল এবারের নেতৃ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, অন্যতম এক আলোচ্য বিষয় হবে নিরীক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। কারণ উত্তর কোরিয়ার দাখিলকৃত ঘোষণা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ এক মত হতে পারে নি। আরেকটি আলোচ্য বিষয় হবে তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। তত্ত্বাবধান ব্যবস্থায় শুধু যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বিস্তাররোধ চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা থাকবে তা নয়, বরং বিভিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়াকে অর্থনৈতিক ও জ্বালানী সম্পদের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও তত্ত্বাবধান করা উচিত।'
জানা গেছে, এবারের নেতৃ সম্মেলনের পাশাপাশি উত্তর কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু অস্ত্রমুক্তকরণ দল এবং অর্থনৈতিক ও জ্বালানী সম্পদ সহযোগিতা দল দ্বিতীয় পর্যায়ের তত্পরতা বাস্তবায়নের সমস্যা নিয়ে সম্মেলন করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতা কিম সুক বলেন, 'আমি আশা করি, এবারের সম্মেলন বিশেষভাবে পরীক্ষা ব্যবস্থার সমস্যায় অগ্রগতি হবে।'
ছাই ইউয়ে
|