তিনদিনব্যাপী জি-৮ শীর্ষ সম্মেলন ৯ জুলাই বিকেলে জাপানের হোক্কাইডোর টোয়াকোয় শেষ হয়েছে । জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুকুদা ইয়াসু চেয়ারম্যান হিসেবে সারসংকলন করে শীর্ষ সম্মেলন সফল হয়েছে বলে ঘোষণা করেন । কিন্তু ব্যাপক জনমত মনে করে , জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে কোনো বস্তুগত অগ্রগতি হয়নি । এর অতিসাধারণ সমাপনী থেকে প্রমাণিত হয় যে, ৮টি দেশ যার যার স্বার্থ থেকে যে দাবী তুলেছে তাতে বিরাট মতাভেদ রয়েছে । পাশাপাশি বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর ৮টি শিল্পোন্নত দেশ গ্রুপের প্রভাব আরেকবার সন্দেহের মুখে পড়েছে । পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভাব দিনদিন প্রকট হয়ে উঠছে ।
পরিবেশ সমস্যা এবারের শীর্ষ সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় । স্বাগতিক দেশ জাপান গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন ক্ষেত্রে জি-৮ সম্মেলনের অগ্রগতির মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক প্রভাব প্রমাণ করতে চায় । জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুকুদা ইয়াসুও মনে করেন , ২০৫০ সাল নাগাদ দীর্ঘমেয়াদীনিঃসরন লক্ষ্য সম্পর্কেশীর্ষ সম্মেলনে যে মতৈক্য হয়েছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত সাফল্য । যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮টি দেশ ২০৫০ সালে বিশ্বের গ্রিন হাউসের গ্যাস নির্গমনের মাত্রা অর্ধেকে কমিয়ে আনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যকে সমর্থন করে , কিন্তু তারা নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারেবিস্তারিত কিছুই বলে নি । তারা শুধু বর্তমানের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছে যা অনেকটা ফাঁকা বুলির মতো । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বেশি আকর্ষণ করা মধ্যমেয়াদী লক্ষ্য সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের নেতারা শুধু নিজ নিজ দেশের বাস্তব অবস্থা অনুসারে ব্যবস্থা নেওযার কথা বলেছেন । নিঃসন্দেহে নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয় ।
তেল ও খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধির সমস্যায় ৮টি দেশ কোনো বাস্তবপ্রস্তাব উত্থাপন করেনি । তারা জোর দাবি তুলেছে , তেল সরবরাহকারী দেশগুলোকে অল্প সময়ের মধ্যে অশোধিত তেল উত্পাদনের পরিমাণ ও তেলের চাহিদা মেটানোরসামর্থ্য বাড়াতে হবে । ভোক্তা দেশগুলোকে জ্বালানী শক্তি ব্যবহারের দক্ষতা উন্নত করতে হবে । খাদ্যশস্য মূল্য সমস্যায় বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা বলেন , খাদ্যশস্য দ্রুত মূল্য বৃদ্ধি থেকে সৃষ্ট নানা সংকট মোকাবেলার জন্য তারা সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেবেন । কিন্তু জনমত লক্ষ্য করেছে , ৮টি দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অস্তিত্বের সংকট নিয়ে কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব পেশ করেনি ।
আফ্রিকার উন্নয়ন সম্পর্কে ৮টি দেশ বলেছে, তারা অব্যাহতভাবে জাতিসংঘের সহস্রাব্দের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালাবে এবং আফ্রিকার উন্নয়নে সমর্থন যোগাবে । কিন্তু তারা কোনো বিস্তারিত নতুন উপায় বের করেনি ।
বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সমস্যায় ৮টি দেশের শীর্ষনেতারা কোরিয় উপদ্বীপের ও ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন , কোরিয় পরমাণু সমস্যায় অর্জিত অগ্রগতির ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন, কোরিয় পরমাণু সমস্যা সম্পর্কিত ৬' পক্ষীয় বৈঠককে আরেকবার সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছেন এবং ইরানকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে । শীর্ষ সম্মেলনেফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি আলোচনা এবং ইরাক ও আফগানিস্তান পরিস্থিতিসহ নানা সমস্যা সম্পর্কে কিছু না কিছু উল্লেখ করা হয়েছে ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন , শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সমস্যা ও স্বার্থের পার্থক্য এবারের শীর্ষ সম্মেলনে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি না হওয়ার মূল কারণ । যেমন, যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশ সমস্যার পরিবর্তে কোরিয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যার অগ্রগতির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে " পণবন্দী" সমস্যাকে কীভাবে সামনে আনা যায় এ বিষয়ে জাপান বেশি মনোযোগ দিয়েছে । নিজের রণনৈতিক নিরাপত্তা ও জাপানের মধ্যে ভূভাগের বিবাদ সমস্যার ওপর রাশিয়া বেশি গুরুত্ব দেয় । …
যখন প্রধান প্রধান শিল্পোন্নতদেশ শীর্ষ সম্মেলনে বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি তখন আমন্ত্রিত হয়ে শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহনকারী উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষ করে চীন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও জাপানে পৌছে যে ধারাবাহিক তত্পরতায় অংশ নিয়েছেন এবং ভাষন দিয়েছেন তা বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । বেশ কিছু দেশের সংবাদমাধ্যমও বলেছে , এবারের শীর্ষ সম্মেলনে পরিবেশ , খাদ্যশস্য অথবা জ্বালানী সম্পদের মধ্যে যে কোনো একটির সমাধান চীনকে ছাড়া হবে না । জি -৮ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে । --চুং শাওলি
|