১৯তম হারবিন আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্য মেলা গত ১৯ জুন বিকেলে শেষ হয়েছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের একটি বার্ষিক আর্থ-বাণিজ্য মেলা হিসেবে এবারের মেলায় চীন, রাশিয়া জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চল থেকে প্রায় ১২ হাজার ব্যবসায়ীঅংশ নিয়েছেন। "রাশিয়াকে প্রাধান্য দেয়ার ভিত্তিতে" এ মেলায় উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দু'টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়াও এবারের মেলায় বড় আকারে অংশ নিয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা হারবিনের আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্য মেলার বিস্তারিত খবর জানাবো।
রাশিয়া চীনের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গেসংলগ্ন । রাশিয়ার সঙ্গে এ অঞ্চলের প্রদেশগুলোর বিশাল আর্থ-বাণিজ্যিকআদান-প্রদান রয়েছে। হারবিনের আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্য মেলা দু'টি দেশের ব্যবসায়ীদেরকে একটি আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম যুগিয়েছে । এ জন্য রুশ ব্যবসায়ীরা এ মেলার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১২ হাজার ব্যবসায়ীর মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিলেন রুশ ব্যবসায়ী। রাশিয়ার জুইশ স্বায়ত্তশাসিত অবলাস্ত, প্রিমরস্কি ক্রায় এবং জাবাইকালস্কি অঞ্চলে পৃথকভাবে বিশেষ পরিচিতি মেলা আয়োজন করা হয়।
রাশিয়ার জাবাইকালস্কিঅঞ্চলের প্রশাসক রাভিল ফারিতভিচ জেনিয়াতুলিন বলেছেন, তিনি দশ বারেরও বেশি হারবিন আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছেন। প্রতিবারই তিনি ভালো ফল পেয়েছেন। এ মেলা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আর্থ-বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
আমরা আশা করি, এ প্ল্যাটফর্মেরমাধ্যমে আরও বহু জায়গাকে আমাদের এই সীমান্ত অঞ্চলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। আমি জানি চীনের দক্ষিণ অঞ্চলের শিল্পোন্নতপ্রদেশের ব্যবসায়ীরা ছাড়াও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরাও এ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।আমার বিশ্বাস বহু বার দেখা সাক্ষাত্ হলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষে মানুষে সখ্য গড়ে ওঠে এবং তাতে সাফল্যও আসে।
বর্তমানে রাশিয়া চীনের ৭ম বাণিজিক অংশীদার। ২০০৭ সালে চীন ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ান মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রাভিল ফারিটোভিচ রাজ্যের প্রশাসক মনে করেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থ-বাণিজ্য সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষত আছে। এ বছলে রাশিয়ার প্রেসিডেণ্ট ডমিদ্রি মেভেদেভ চীন সফর করেছেন। চীন ও রাশিয়ার নেতারা ২০১০ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এ লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। জাবাইকাস্কাই অঞ্চল এ লক্ষ্যের বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
২০০২ সালে চীন ও জাবাইকলস্কি অঞ্চলের মধ্যে বছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০০৯ ও ২০১০ সালে এ পরিমাণ ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
চীন ও রাশিয়ার মধ্যে শুধু সরকারী বাণিজ্যিক আদান-প্রদানই নয়,দু'দেশের শিল্প মহল ও বেসরকারী পর্যায়েআরও ঘন ঘন বাণিজ্যিক আদানপ্রদান হচ্ছে। এ মেলায় আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন, দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোমধ্যে নিয়মিত লেনদেনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বহু প্রদর্শনী টেবিলের মধ্যে "চীন-রাশিয়া সার্বিক তথ্য নেটাওয়ার্ক" নামের একটি টেবিল আছে। চীন ও রাশিয়া যৌথভাব েনেটওয়ার্কটি সংরক্ষণ করে এবং তথ্য যোগান দেয়। এ নেটওয়ার্কের রাশিয়া পক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ম্যাডাম অিলয়া বলেন, চীন-রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বৃদ্ধির ফলে আরও বেশি ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক চাহিদা মোটানোর জন্য এ নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। দশ বছর ধরে এটা চলছে।
এখন আমাদের কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা আছে। তারা বহু বছর ধরে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। নেটওয়ার্টি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সেতু হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যেমন, চীনা ব্যবসায়ীরা যদি রাশিয়ার উত্পাদিত কোনো পণ্য কিনতে চাই অথবা রাশিয়ায় ব্যবসা করতে চায় আমরা তাদেরকে সাহায্য করবো ।একইভাবে রাশিয়ার ব্যবসায়ীরা যদি চীনের পণ্যকিনতে চায় অথবা চীনে ব্যবসা করতে চায় আমরা তাদেরকেও সাহায্য করবো ।
পরিণত আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেএবারের মেলায় রুশ ব্যবসা দিবসে চীন ও রাশিয়ার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানেরমধ্যে অবশেষে ১৮টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তিগুলোর মূল্য ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার। জৈব জ্বালানি প্রকল্প, তেল ও গ্যাস অনুন্ধান ও উত্তোলন, কাপড় আমদানি ও রপ্তানি এবং স্থাপত্য প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প এতে অন্তর্ভূক্ত।
রাশিয়া ছাড়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ড এবং বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ নিজেদের বিশেষ ব্যবসা তত্পরতা চালিয়েছে। উল্লেখ্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এ দু'টি শিল্পোন্নতদেশ এ মেলায় বড় আকারের প্রদর্শনী অঞ্চলজুড়েঅংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে নিজেদের বাণিজ্যিক প্রকল্পেরপরিচয় করিয়ে দিয়েছে। হারবিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছেন তিয়ান ইয়ুন বলেন,
"এবারের মেলায় আমরা দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রদর্শনী অঞ্চল বাড়িয়েছি যাতে তারা আকর্ষন বোধ করে।
জাপানের ইয়ামাগাতা জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিদলের নেতা আটসুশি সুজুকি বলেন, জাপানে হারবিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রভাব দিন দিন বাড়ছে । জাপানের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের এর প্রতি বিশাল আগ্রহ রয়েছে।
ইয়ামাগাতা জেলার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোরপরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং হেই লং চিয়াং প্রদেশে সহযোগিতার সুযোগ খোঁজা হলো আমাদের এবার অংশগ্রহণের লক্ষ্য। প্রধানত দেখবো কৃষি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ আছে কিনা। বর্তমানে "প্রাচ্যের রেশম পথ"নামক জাপান ও চীনের যৌথ সহযোগিতামূলক প্রকল্প হারবিনে শুরু হয়েছে।
মেলা কর্তৃপক্ষের হিসাব থেকে জানা গেছে, এ মেলায় মোট ১০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা গত বারের চেয়ে ৩.৫ শতাংশ বেশি। বার্ষিক এ মেলা বর্তমানে চীন, রাশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ করিয়াসহ উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর একটি সেতুতে রূপ নিয়েছে।
(ওয়াং তান হোং)
|