সম্প্রতি চীনের ইন্টারনেটের তথ্য কেন্দ্র ২০০৮ সালে চীনের গ্রামীণ ইন্টারনেটের উন্নয়ন বিষয়ক একটি বিবরণী প্রকাশ করেছে । তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ চীনের গ্রামাঞ্চলে নেট নাগরিকদের সংখ্যা ৫ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়িয়েছে । তার বার্ষিক বৃদ্ধি হার হচ্ছে ১২৭.৭ শতাংশ । চীনের ইন্টারনেট যে এত দ্রুত প্রসারিত হয়েছে , তার মূলে রয়েছে চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ এবং গ্রামীণ ইন্টারনেট উন্নয়নের ওপর সরকারের গুরুত্ব আরোপ ও সহায়তা । ফরে গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেটের সুষ্ঠু বিকাশের অন্তর্নিহিত শক্তি ফেটে উঠেছে ।
গ্রামীণ ইন্টারনেট উন্নয়ন সংক্রান্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে , চীনের গ্রামীণ ইন্টারনেট এখন দ্রুত বিকাশের সময়পর্বে রয়েছে । তার বৃদ্ধি হার শহরকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে । গ্রামীণ ইন্টারনেট এখন চীনের ইন্টারনেটের টেকসই বৃদ্ধির নবোদিত শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে । জরিপ থেকে জানা গেছে , ২০০৭ সালে ৭ কোটি ৩০ লাখ নতুন নেট নাগরিকের ৪০ শতাংশ অর্থাত্ ২ কোটি৯১ লাখ ৭০ হাজার লোকই গ্রামাঞ্চলের ।
বিবরণীতে বলা হয় , চীনের শহর ও গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান এখনো রয়েছে । শহরগুলোতে অধিবাসীদের ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা ২৭.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু গ্রামাঞ্চলের জনপ্রিয়তা মাত্র ৭.১ শতাংশ । গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট উন্নয়নের গতি যে পিছিয়ে গেছে , তার মূলে রয়েছে গ্রামীণ অধিবাসীদের নিম্ন পর্যায়ের শিক্ষা ও আয়ের মান । গ্রামীণ নেট নাগরিকদের আয়ের অভাব । সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তাদের ইন্টার ক্যাফে প্রয়োগ করতে হয় । এ ছাড়াও একটি জরিপ থেকে জানা গেছে , তাদের মধ্যে ৫৩.৩ শতাংশ লোকের কাছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট অচেনা এবং ২৩.১ শতাংশ লোকের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনো সরঞ্জাম নেই ।
জরিপ থেকে জানা গেছে , ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামাঞ্চলের নেট নাগরিকদের মধ্যে অনেক বেশি পাথর্ক্য আছে । গ্রামীণ নেট নাগরিকরা সাধারণতঃ জনপ্রিয় ও আমোদ-প্রমোদের বিষয়কে পছন্দ করেন । কিন্তু শহরের নেট নাগরিকরা উর্ধ্বতন পর্যায়ের বিষয় নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ভালবাসেন । বেশির ভাগ গ্রামীণ নেট নাগরিকরা ইন্টারনেটকে কথাবার্তা ও আমোদ-প্রমোদের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করেন ।
গ্রামীণ নেট নাগরিকের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য ব্যবহার্য গ্রামীণ তথ্য সম্পদের দরুণ অভাব দেখা দিচ্ছে । থানা পর্যায়ের সরকারী তথ্যায়ন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ।
তথ্য সরবরাহের ব্যাপক ব্যবধানের কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যও বেশি ব্যবধান ডেকে এনেছে । সুতরাং সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলে টেলি-যোগাযোগ ও ইন্টারেনেট গড়ে তোলার একটি কর্মসূচী চালু করা হচ্ছে । ২০০৭ সালের জুন মাস থেকে থানায় থানায় ওয়েব সাইট এবং তথ্যায়নের প্রকল্প চালু হয়েছে । এ গণ কল্যাণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারের সাহায্য পেয়েছে । বর্তমানে চীনের চার ভাগের এক ভাগ অঞ্চলে গ্রামীণ ইন্টারনেট ও তথ্যায়ন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করে তোলার একটি অভিযান চালানো হচ্ছে ।
ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলের জন্য বহু গভীর পরিবর্তন বয়ে আনবে । চীনের ইন্টারনেট তথ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা সুং স্যু স্যু মনে করেন , চীনের গ্রামাঞ্চলের অদ্বিতীয় জীবনধারা ও পরিবেশের দিক থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে গ্রামীণ ইন্টানেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে , তাতে গ্রামীণ ইন্টানেটের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিকাশ ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে ।
ইন্টারনেটে কৃষকদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়েছে । এর পাশাপাশি কৃষকদের ঐতিহ্যবাহী উত্পাদন ও ব্যবস্থাপনার নীতিমালাও রূপান্তরিত হয়েছে । সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে কৃষি সংক্রান্ত আরো বেশি তথ্য প্রকাশ করতে হবে । গ্রামীণ নেট নাগরিকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেমন দ্রুত তথ্য অর্জন করতে পারবেন , তেমনি তার সাহায্যে কৃষি পণ্য ও নানা রকম পরিসেবার কথাও প্রচার করতে পারবেন । এ পদ্ধতি বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার পণ্যদ্রব্য বিক্রির জন্য উপযুক্ত ।
সুং স্যু স্যু বলেন , কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ইন্টারনেটের কারণে আরো সহজ ও সুবিধাজনক হবে । ইন্টারনেটের শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামবাসীরা কৃষি প্রযুক্তি শিখতে পারবেন । কৃষকদের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী । ইন্টারনেটে কৃষকরা নিজেদের চাহিদা অনুসারে যার যার লেখাপড়ার বিষয় চালু করার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন । তারা বিশেষজ্ঞ ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারবেন । এতে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এবং সচ্ছল হওয়ার জন্য তাদেরকে আরো ভালভাবে সাহায্য করা হয়েছে ।
এ ছাড়াও ইন্টারনেটও এমন এক ধরনের প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে থানা সরকারের প্রশাসনের কাজ আরো সহজ ও সুবিধাজনক হয় । গ্রামীণ অধিবাসীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে গ্রামবাসী ও থানা সরকারের মধ্যে মত বিনিময়ের সুযোগ আরো বেশি পাওয়া যাবে । ইন্টারনেটের সাহায্যে কৃষকদের মতামত প্রকাশের ব্যয় অনেক কমে গেছে । ইন্টারনেট দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলা এবং সম্প্রসারিত করার ফলে বর্তমানে বহু অঞ্চলের সরকারী বিভাগ ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রশাসনের কাজ চালানোর চেষ্টা করছে । গ্রামীণ ইন্টারনেটের উন্নয়নে গ্রামীণ প্রশাসনের কাজ ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করা হবে ।
এখন গ্রামীণ বাজারে ইন্টারনেটের কাজ দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে । এ ক্ষেত্রে প্রচার কাজ জোরদার করা হলে গ্রামীণ ইন্টারনেটের উন্নয়ন অবশ্যই প্রবলভাবে ত্বরান্বিত করা হবে এবং নতুন গ্রামাঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ দ্রুততর করা হবে ।
এখন চীনের কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের জ্বালানী সাশ্রয় ও বর্জ্য পদার্থ কমানো সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
গত কয়েক বছরে চীনের কৃষি ও গ্রামাঞ্চলের জ্বালানী সাশ্রয় ও বর্জ্য পদার্থ কমানোর ক্ষেত্রে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে । গ্রামাঞ্চলে মিথেন গ্যাসসহ সৌর শক্তি , বায়ু শক্তি ইত্যাদি নানা রকম পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে । এ পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মিথেন গ্যাসের বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ৮.৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার এবং সৌর শক্তি চালিত উনুনের সংখ্যা ৬ লাখে দাঁড়িয়েছে । ফলে জ্বালানী সম্পদ ব্যবহারের চাপ কমে গেছে এবং গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । কৃষকদের জীবনযাপনের গুণগত উত্কর্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে ।
|