চীনা গণ মুক্তি ফৌজের প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক উয়ে উইয়ের বয়স ৮৪ বছর । পক্ককেশ হলে তার শারিরীক ও মানসিক অবস্থা ভাল , বুদ্ধি শক্তিও মন্দ নয় । এর মূলে রয়েছে সুস্বাস্থ্য সুরক্ষা আর দীর্ঘায়ুর উপর তার মনোযোগ দেয়া ।
যখন বৃদ্ধ উয়ে অল্পবয়সী ছিলেন , তখন তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন । তখন যুদ্ধ আর সামরিক অভিযানের জন্য প্রতিদিন আশি নব্বই কিলোমিটার পথ হাঁটতে হতো । এতে যেমন শরীর চর্চা হয়েছে , তেমনি সৈন্য হিসেবে বিশেষ মনোবল ও অধ্যবসায়ও উন্নত হয়েছে । যখন তিনি বয়স্ক হয়েছেন , তখন তিনিও প্রতিদিন হাঁটায় অবিচল থাকেন । রোজ ভোর আর সন্ধ্যায় তিনি পাহাড়ী পথ বেয়ে আধা ঘন্টা করে হাঁটেন । প্রাকৃতিক পরিস্কার পরিছন্ন পরিবেশে গভীর শ্বাস নিলে সারা দিনের ক্লান্তি আর চিন্তা দূর হয় ।
বৃদ্ধ উয়ে এমন খাওয়া দাওয়া পছন্দ করেন , যার প্রোটিন বেশী আর চর্বি কম । খাবারের উপর তিনি বেশী মনোযোগ দেন না, সাধারণ মানুষের চেয়ে তার খাবার কোনো ভিন্ন নয়। বয়স্ক হবার আগে তিনি একটু মদ খেতেন , এখন তিনি তা একেবারে ছেড়ে দিয়েছেন ।
জীবনযাত্রার ব্যাপারে বৃদ্ধ উয়ে নিয়ম অনুসরণ করেন । তিনি রাত ১২টায় ঘুমান আর সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেন । দুপুরে একটুক্ষণ বিশ্রাম করেন । রোজ তার ঘুমানোর সময় ৬ থেকে ৭ ঘন্টা পর্যন্ত । সাহিত্য কর্ম ছাড়া বৃদ্ধ উয়ে লিপিকলা, কবিতা রচনা , দাবা খেলা , চা খাওয়া , ফুল গাছ লাগানো প্রভৃতি সখও পছন্দ করেন । এই সব সখ ও কৌতুহলে তিনি ব্যাধি রোধ , স্বাস্থ্য রক্ষা আর দীর্ঘায়ুর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন । তা ছাড়া বৃদ্ধ উয়ে তার বাসার সামনের ছোট প্রাঙ্গনে কৃষি কর্ম চর্চার জন্য একটি ছোট কৃষি জমি গড়ে তুলেছেন । তিনি এই জমিতে শাক শবজি চাষ করেন । এটা ফলনের জন্য নয় , বরং আনন্দের জন্য ।
গত শতাব্দির ষাটের দশকে চীনে রাজনৈতিক মহা বিশৃংখলার সময়পর্ব- অর্থাত্ তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবকালে বৃদ্ধ উয়ে দুঃখজনকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন । তার বহু প্রসিদ্ধ রচনা পার্টি ও জনগন -বিরোধী সাহিত্য কর্ম বলে অভিযোগ করা হয়েছিল । এতে তিনি কোনো ভয় পান নি আর নতি স্বীকার করেন নি , বরং এক ধরনের উদাসীনতা আর নমনীয়তা অবলম্বন করতেন ।
যদিও বৃদ্ধ উয়ে ১৯৯১ সালেই অবসর নিয়েছেন , কিন্তু তিনি এ পর্যন্ত অনবরতভাবে সাহিত্য চর্চা করছেন। বয়স যত বাড়ে , তার সাহিত্য চর্চার আবেগ ততই বেশী । গত কয়েক বছর আগে ১০ খন্ডের ৪০ লক্ষ শব্দ বিশিষ্ট উয়ে উইয়ের রচনা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে । এটা প্রকাশনালয় আর পাঠকদের খুব আকৃষ্ট করেছে । তিনি বলেছেন , বয়স্কদের বস্তুগত চাহিদা মেটানোর বেশী আশা করা উচিত নয় , বরং মানসিক ও সমাজ সেবার দিক থেকে বেশী অবদান রাখা উচিত । জনসাধারনের কাছ থেকে কখনো আলাদা করা উচিত নয় ।
এখন দীর্ঘায়ুর সংগে জড়িত চারটি মূল উপাদান সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসার বহু বছরের অধ্যয়নের মাধ্যমে দীর্ঘায়ু সম্পর্কিত চারটি মূল উপাদান আবিস্কার করেছেন । আপনি একাগ্রচিত্তে তার প্রশ্নপত্রের উত্তর দিলে আপনার আয়ু গনণা করা যাবে ।
ডেভিড ডিমুকো নামে এই প্রফেসার মার্কিন সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুসারে দীর্ঘায়ু সম্পর্কে এই তদন্ত চালিয়েছেন । তার রিপোর্ট থেকে এই রায় পাওয়া গেছে যে , মানুষের আয়ু শুধু জিন আর সৌভাগ্যের সংগে জড়িত , তা মানুষের জীবনধারার উপরও নির্ভর করে । প্রফেসার স্বীকার করেছেন যে , মানুষের দীর্ঘায়ু স্থির করার ৪টি মূল কারণ হলঃ তাত্পর্য সম্পন্ন জীবনধারা , খাওয়া দাওয়ার শ্রেষ্ঠ রীতিনীতি , নিয়মিত শরীর চর্চা আর শারিরীক অবস্থা পরিবর্তনের উপর সতকর্তা অবলম্বন করা ।
এখন মানুষের ভাল মন ও স্বাস্থ্য প্রভাবিত করার কয়েকটি মানসিক কারণ বলা হবে ।
এই সব কারণ হলঃ স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু বরণ , বিবাহ বিচ্ছেদ , পরিবার পরিজনের মৃত্যু , গুরুতরভাবে আহত হওয়া , বেকার হওয়া ও অবসর নেয়া , বসের সংগে ঝগড়া করা ইত্যাদি।
|