সম্প্রতি একটি আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সারা পৃথিবীকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে । ২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর সকাল ৮টায় ইন্দোনেশিয়ার সুমাট্রা দ্বীপের নিকটবর্তী সমুদ্রে রিক্টার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূকম্প হয়েছে এবং এ থেকে সুনামি সৃষ্টি হয়েছে । ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেরএশিয় দেশগুলো এমন কি আফ্রিকার সোমালিয়া , কেনিয়া , টাঞ্জানিয়া প্রভৃতি দেশ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সুনামি-কবলিত ৪০টিরও বেশী দেশ আর অঞ্চলে প্রত্যক্ষ নিহতদের সংখ্যা দেড় লক্ষের উপরে দাঁড়িয়েছে । নিখোঁজ আর সুনামি-উত্তর সংঘটিত পরিবেশের দারুণ অবনতির দরুণ হতাহত এবং জানমাল আর পর্যটন শিল্পের গুরুতর ক্ষতি সহ এবার দুর্যোগের পরিনাম অত্যন্ত সাংঘাতিক হয়েছে ।
উল্লেখযোগ্য যে , গতপরশু বছরের একই দিন ইরানের ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি প্রাচীন নগরে রিক্টার স্কেলে ৬.৩ ডিগ্রির ভূকম্প হয়েছে । ফলে ২৬ হাজার লোক প্রান হারিয়েছে। একই ধরনের বিয়োগান্ত নাটক , কিন্তু এবার সুনামিতে যে এতো অভুতপূর্ব দুর্যোগ হয়েছে , তার কারণ কি ? কারণ এই যে , প্রথমতঃ এবার ভুকম্প যে এত মারাত্মক হয়েছে , তা গত এক শো বছর ধরে পাঁচটি বৃহত ভুকম্পের শীর্ষস্থলে রয়েছে । দ্বিতীয়তঃ এবার ভুকম্পের উপরিকেন্দ্র ভু-পৃষ্ঠ থেকে গভীর নয় , মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে । তৃতীয়তঃ এবার সুনামিতে যে এত বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , তার সংগে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জায়গাও যুক্ত হয়েছে ।
আফ্রিকার সোমালিয়ায়ও মানুষ হতাহত হয়েছে ।
এখন গত এক শো বছরে পাঁচটি ভয়াবহ ভুকম্প বিষয়ক তথ্য আপনাদের কিছু বলা হবে ।
১৯৬০ সালে চিলিতে রিক্টার স্কেলে ৯.৫ ডিগ্রির ভুকম্প হয় ;
১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে ভুকম্পের মাত্রা ৯.২ ডিগ্রিতে দাঁড়ায় ;
১৯৫৭ সালে মার্কিন আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে ৯.১ মাত্রার ভুকম্প ঘটে ;
১৯৫২ সালে রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে ৯.০ মাত্রার ভুকম্প হয়; এবং এবার ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভুকম্প ৯.০ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছে ।
যদিও এবার ভুকম্পের মাত্রা উঁচু , কিন্তু বেশীর ভাগ লোক ভুকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামিতে মারা গেছেন । ভুকম্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার । কিন্তু তা রোধ করা যায় না , বর্তমান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত মান অনুসারে ভুকম্পের পূর্বাভাসও অসম্ভব । তবু সুনামি বিস্তারের গতি ভূমিকম্প বিস্তারের গতির চেয়ে তত দ্রুত তা নয় । সুনামির আরম্ভ থেকে সমুদ্র তীরের উপর আঘাত হানা পর্যন্ত একটু সময় লাগে । এবার ভুকম্প হওয়ার অর্ধেক ঘন্টার পরই সুনামি সুমাত্রাদ্বীপের আচেহ্ প্রদেশের সমুদ্র তীর আর দেড় ঘন্টা পরই থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপে পৌঁছল । শ্রীলংকা আর ভারত যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , তা ভুকম্প হওয়ার দেড় থেকে আড়াই ঘন্টা পরই । তবু ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে সুনামি পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক ব্যবস্থার অভাবের দরুণ বহু লোকের প্রান বাঁচানোর সুযোগ হারিয়ে গেছে ।
বর্তমানে বিশ্ব সমাজের উদ্যোগে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ভুকম্প ও সুনামি মোকাবিলা সংক্রান্ত পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । ১৯৪৮ সালে মার্কিন হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হনোলুলুর নিকটবর্তী ভুকম্প পর্যবেক্ষণ আর পূর্বাভাস কেন্দ্রে ভুকম্প ও সুনামি পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ১৯৬০ সালে চিলি আর ১৯৬৪ সালে আলাস্কায় ভয়াবহ সুনামি হওয়ার কারণে নিখিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক ব্যবস্থা স্থাপনেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে । ১৯৬৬ সালে আন্তঃসরকারী সামুদ্রিক কমিটির উদ্যোগে গৃহিত একটি প্রস্তাবেআন্তর্জাতিক সুনামি পূর্বসতর্কতাজ্ঞাপক কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । এ পর্যন্ত যুক্ত রাষ্ট্র , জাপান , চিলি, অষ্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , ফ্রান্স , রাশিয়া সহ মোট ২৬টি দেশ এই কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।
|