কিছু দিন আগে চীনের বিখ্যাত সুরকার ছেন ইর সৃষ্ট সিমফোনি সুরের একটি সংগীতানুষ্ঠান পেইচিংয়ে আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত চারটি সিমফোনি ছেন ই গত কয়েক বছরে রচনা করেছেন । বিদেশে এ চারটি সিমফোনি বেশ কয়েকবার বাজানো হয়েছে , তবে চীনে এটাই ছিল সিমফোনিগুলোর প্রথম পরিবেশনা ।
' লোনসেন হুয়া ইউন' নামে এ সংগীতানুষ্ঠানে পরিবেশিত প্রথম সুরের নাম ' চার ঋতু ' । এটি একটি অর্কেস্ট্রাল সুর । ২০০৫ সালে ছেন ই এ সুর সৃষ্টি করেন । এই সুরটিতে সংগীতানুষ্ঠানের ভুমিকা বলা যায় । এতে ছেন ইর সৃষ্ট সুরের শৈলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । সুরটি চীনের প্রাচীন কবিতা অবলম্বনে রচিত হয়েছে । সুরকার ছেন ই সুরটিতে চীনের ঐতিহ্যিক শিল্পে কবিতা , বইপত্র , বাদ্যযন্ত্র ও ছবি আঁকার মাধ্যমে শিল্পীর মনের ভাব প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন । তার অন্য তিনটি সুর শৈলীও চীনের ঐতিহ্যিক রীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত । নিজের সৃষ্ট সুরের শৈলী সম্পর্কে ছেন ই বলেন , রচিত সুর আমার ভাষা । এ ভাষা চীনের সংস্কৃতির ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে । আমার রচিত সুরে আমার নিজের অনুভূতি ও বৈশিষ্ট্য আছে । আমি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের জন্য সুর সৃষ্টি করেছি । তাই প্রতিটি সুরে চীনের সংস্কৃতির প্রতি আমার উপলব্ধি ও অনুভূতি রয়েছে ।
এ বছর ছেন ইর বয়স ৫৫ বছর । দক্ষিণ চীনের কুয়াং চৌ শহরের এক সংগীত অনুরাগী পরিবারে তার জন্ম । তিন বছর বয়স থেকেই ছেন ই বেহালা শিখতে শুরু করেন । পাঁচ বছর বয়সে তিনি পিয়ানো শিখতে শুরু করেন । গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে তিনি চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটের সুর রচনা বিভাগে পড়াশুনা করেন । ইন্সটিটিউটে পড়াশুনার পাঁচ বছরে তিনি অনেক সংগীতের বই পড়েছেন এবং কড়া প্রশিক্ষণ পেয়েছেন । এটা তার সুর রচনার জন্য মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে । স্নাতক হওয়ার আগে তার রচিত ভিওলা সুর শিক্ষক ও সহপাঠীদের দৃষ্টি আকষর্ণ করেছিল । স্নাতক হওয়ার পর স্নাতকোত্তর ছাত্র হিসেবে তিনি চীনের বিখ্যাত সুরকার উ চু ছিয়ানের কাছ থেকে সুর রচনা শেখেন এবং তার নিজস্ব রীতি স্থির করেন । তিনি বলেন , আমি প্রফেসর উ চু ছিয়ানের কাছে তিন বছর ছিলাম। আমি তার সাহায্যে অনেক সুরকারের রচিত সুর গবেষণা করেছি । আমি মনে করি , আমার রচিত সুরে নতুন যুগের চেতনা থাকার পাশাপাশি নিজ দেশের সংস্কৃতির উপাদান থাকতে হবে । এ ধরনের সুর খুঁজে বের করা কঠিন ব্যাপার । তা ছাড়া আমার রচিত সুর দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করাও সহজ ব্যাপার নয়।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছেন ই যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুর রচনা শেখেন । সেখানে তিনি পাশ্চাত্য দেশের নানা ধরনের সংগীত ও সুর নিয়ে গবেষণা করেছেন । তিনি চীনের ও বিদেশের সুরগুলো থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে নিজের সুরের রীতি ওশৈলী স্থির করেন । ছেন ইর রচিত সুরের বৈশিষ্ট্য হলো চীনের ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর সুর এবং ঐতিহ্যিক ও আধুনিক সুরের সমন্বয় । ১৯৯৯ সালে তার রচিত সুর ' চীনের অলীক কাহিনী' যুক্তরাষ্ট্রে পর পর তিনটি অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শকদের ভীড় জমে ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছেন ইর রচিত চেম্বার মিউজিক ও সমবেত কন্ঠের সুরের জনপ্রিয়তা বেশি । তার রচিত সুরগুলোর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ছেন ই বলেন , সুরগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সুরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকার পাশাপাশি দশর্কদেরকাছে গ্রহনযোগ্য হতে হবে । এটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার । কারণ বিশ্বে বিভিন্ন দেশের অনেক জাতি আছে । সংগীতের কোনো সীমানা নেই । ভালো সুর সবদেশের মানুষ শুনতে পছন্দ করেন । আজকের যুগ তথ্যের যুগ , ভালো জিনিসের মূল্য বিশ্বের সব মানুষই দেন , এটা বর্তমান যুগের প্রবণতা । আমার রচিত সুর পৃথিবীর অনেক জাতি ও দেশের মানুষ গ্রহণ করেছেন এবং আমার সুরের শৈলীকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর জন্য আমি খুব শান্তি পেয়েছি । এটা আমার একার অবদান নয় , সুর রচনার সময় আমি অনেক মানুষের আন্তরিক সাহায্য পেয়েছি । ছেন ইর রচিত সুরে চীনের ঐতিহ্যিক সুরের উপাদান আছে । তবে ঐতিহ্যিক বিষয় তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে প্রকাশের চেষ্টা করেন । ফলে তার রচিত সুরে ঐতিহ্য ও আধুনিক উপাদানের চমত্কার সমন্বয় ঘটেছে।
ছেন ই একজন পরিশ্রমী সুরকার । তার অনেক সুর বিমান যাতায়াতের সময় লিখেছেন । সুর রচনা ছাড়া তিনি সংগীত মহলের নানা কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। তিনি চীনের ও বিভিন্ন দেশের সংগীত সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্য বা উপদেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বিচারক কমিটির সদস্যা । তিনি প্রায়ই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত উপভোগ সম্পর্কিত ভাষণ দেন এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তার একক সুরের সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করেন । এর পাশাপাশি ছেন ই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনের লোকসংগীত প্রচারের চেষ্টা করছেন। তিনি তার রচিত সুর দিয়ে শিল্প ও শিক্ষার মধ্যে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশগুলোর সংস্কৃতি বিনিময়ের একটি সেতু গড়ে তুলেছেন এবং বিশ্বের ভিন্ন সংস্কৃতির জাতিগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সমঝোতা এবং বিশ্বশান্তির জন্য সক্রিয় অবদান রেখেছেন। (ফাং সিউ ছিয়েন)
|