v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-07-08 20:57:27    
অলিম্পিক মশালবাহক--সঙ্গীতের বিখ্যাত পরিচালক চেন সিয়াওইং

cri
    প্রায় ৮০ বছর বয়সী চেন সিয়াওইং চীনের প্রথম সিনফোনি সঙ্গিত ক্ষেত্রের নারী পরিচালক । তিনি এখন সিয়াম্যান শহরের আইইয়ো সঙ্গীত দলের প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন । কিছু দিন আগে তিনি পেইচং অলিম্পিক মশাল বাহক নির্বাচিত হন । তিনি বলেছিলেন , তিনি সিমফোনি সুরের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে চীনের সংস্কৃতির কথা প্রচার করবেন ।

    আপনারা যে যন্ত্রসঙ্গীত শুনচ্ছেন তা চীনের সিয়াম্যান শহরে আইইয়ো সঙ্গীত দলের বাজানো " থু জাতির বাড়িঘরের প্রতিধ্বনী" নামক একটি সিমফোনির সুর । দলের প্রধান পরিচালক , প্রায় ৮০ বছর বয়সী বিখ্যাত নারী সঙ্গীত পরিচালক চেন সিয়াওইং তাদের পরিচালনা করছিলেন । অলিম্পিক গেমস চলাকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীত দল নতুন জাতীয় থিয়েটারে এই যন্ত্রসঙ্গীত বাজবে । যন্ত্রসঙ্গীত সম্পর্কে তিনি বলেন, চীনা জাতির একটি অংশ হিসেবে খ্যচিয়া জাতির মানুষরা ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে সংগ্রাম চালিয়ে যে মধ্য চীনের সংস্কৃতির সম্প্রসারণ করছেন সঙ্গীতটিতে তা বর্ণনা করা হয় । খ্যচিয়া জাতির মানুষের মন অনেক বড় । তারা চীনা জাতির মনোবলের প্রকৃষ্ট নিদর্শন । একজন পরিচালক হিসেবে আমার দায়িত্ব হল ভালভাবে চীনা যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করা ।

    খ্যচিয়া জাতির বাসগৃহ মূলত দক্ষিণ পূর্ব চীনের উপকূলীয় ফুচিয়েন প্রদেশের এক ধরণের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঘর । মাদাম চেন সিয়াওইংয়ের বাবা ফুচিয়েন প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের একজন খ্যচিয়া লোক ।চীনের প্রথম নারী পরিচালক হিসেবে তিনি চীনের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালকের মর্যদা পেয়েছেন । ১৯৯৭ সাল কেন্দ্রীয় অপেরা হাউসের প্রধান পরিচালক হিসেবে তিনি অবসর নিয়েছেন । তার পর তিনি সিয়াম্যান শহরে আইইয়ো সঙ্গীত দল গঠন করেন । এ পর্যন্ত সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীত দলের ইতিহাস ১০ বছরের । দেশবিদেশের সঙ্গীতশিল্পীরা মনে করেন, সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীত দলের মান চীনে এখন শীর্ষ স্থানের । দলটির উন্নয়ন সম্পর্কে চেন সিয়াওইং অত্যন্ত সন্তুষ্ট । তিনি বলেন, সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হল এই যে , নিজের ইচ্ছানুযায়ী আমি সিয়াম্যান শহরে এক সঙ্গীত দল পরিচালনা করছি বলে এই দল দ্রুত উন্নতি হয়েছে । দিনে দলটি ৫ ঘন্টা মহড়া করে এবং সপ্তাহে প্রাচীন, রোমান্টিক , আধুনিক এবং চীনের লোক সঙ্গীত সহ নানা নতুন সঙ্গীত পরিবেশন করে ।

    স্থানীয় সরকারের সমর্থন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বন্ধুদের আন্তরিক সাহায্যে সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীতদল দিনদিন উন্নতির পথে চলে সিয়াম্যান শহরের সংস্কৃতির অন্যতম দলে পরিণত হয়েছে । মাদাম চেন সিয়াওইংয়ের চার পাশে বিপুল সিমফোনিপ্রিয় যুববাদক আছেন । দলটির এক নম্বর বেহালাবাদক হুয়াং থিওয়েন সংবাদদাতার কাছে তাঁর চোখে মাদাম চেন সিয়াওইং সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন , তিনি অতি স্নেহপূর্ণ ও দয়ালু মানুষ । তবে মহড়ার সময় তিনি কঠোরভাবে সবার কাছে দাবী জানান । মহড়া শেষে তিনি নানির মতো সবাইকে স্নেহ করেন ।

    গত দশ বছরে এই কঠোর এবং মায়ামমতাপূর্ণ নানি চেন সিয়াওইংয়ের নেতৃত্বে সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীত দলের শিল্পীরা দেশের ত্রিশটিরও বেশি শহরে কয়েকশ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেছেন । বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে , গত কয়েক বছরে দলটি বিশ্বের চল্লিশটিরও বেশি শহরে বিদেশী দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য " থুজাতির বাড়িঘরের প্রতিধ্বনি" নামক সঙ্গীত বাজিয়েছেন । বিশেষভাবে সিয়াম্যান আইইয়ো সঙ্গীতদলের জন্য তৈরী সঙ্গীতটি বিদেশী বন্ধুদের মধ্যে প্রবল আলোড়ন জাগিয়ে তুলেছে । এ সম্পর্কে মাদাম চেন সিয়াওইং বলেন, আমি দল নিয়ে বিশ্বে প্রায় চল্লিশটি দেশে পরিবেশন করেছি । চীনের বিরাটাকারের সিমফোনি সঙ্গীত কখনো বিদেশে এতো বেশি বার পরিবেশন করেনি । আমরা যেদেশে যাই সে দেশের স্থানীয় সমবেত কন্ঠে গাওয়া দলকে কাজে লাগাই । জাপান, ইটালি , ফ্রান্স ও জার্মানরা খ্যচিয়া জাতির ভাষায় গানটি গেয়েছেন । গানটি তাদের এতো ভাল লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ।

    "থু জাতির বাড়িঘরের প্রতিধ্বনি" সিমফোনিটিতে পাশ্চাত্য মানুষের পরিচিত চারুশিল্প আকারের মাধ্যমে সুন্দরভাবে চীনা সংস্কৃতির আসল মর্মবস্তু প্রতিফলিত হয়েছে । সঙ্গীত ক্ষেত্রে গানটি দেশবিদেশের একটি উল্লেখযোগ্য আদর্শ । মাদাম চেন মনে করেন , সিমফোনি দেরীতে চীনে আনা হলেও চীনা সঙ্গীত শিল্পীরা অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে অজস্র শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত রচনা করেছেন । তিনি বলেন , বিদেশে গেলে আমি চীনা সঙ্গীত নিয়ে যাবই । আমি মনে করি , শুধু বিদেশী সঙ্গীত শিল্পীদের রচনা পরিবেশন করা কোনো তাত্পর্য নেই । পাশ্চাত্য দেশ যাতে জানতে পারে চীনারা কী করছেন , চীনারা সিমফোনির মাধ্যমে কী সৃষ্টি করেছেন তার জন্য আমি সব কিছু করব । আমি বিশ্ব সংস্কৃতি ভান্ডারের জন্য অবদান রাখছি ।

    কিছু দিন আগে মাদাম চেন সিয়াওইং আমন্ত্রিত হয়ে পেইচিং অলিম্পিক মশালবাহক হয়েছেন । তিনি বলেছিলেন , সুন্দর ও মধুর সঙ্গীত সৃষ্টির জন্য আমার হাত প্রতিদিন আন্দোলিত হয়ে থাকে । আজ আমার হাত শান্তি ও কল্যাণের প্রতীকপূর্ণ অলিম্পিক মশাল তুলে ধরবে । বয়স হলেও তিনি মশাল রিলে প্রস্তুতির জন্য শরীরচর্চা করছেন । তার ছাত্রছাত্রীরা বলেছেন , তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষক চেনকে উত্সাহ দেবেন । বেহালাবাদক চাং ইয়েন বলেন , আমরা সবাই যাব । বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাকে উত্সাহ দেব ।

    একজন মশালবাহক হতে পেরে মাদাম চেন সিয়াওইং খুবই গর্বিত । তিনি বলেন , মশালটা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষদের রিলের মাধ্যমে আমার হাতে পৌঁছুবে । আমি অত্যন্ত গর্বিত । এ সময় গোটা বিশ্ব আমাদের ওপর নজর রাখছে । এটা চীনা জনগণের গৌরব ও সাফল্য । এতে ঐক্য, শান্তি, অগ্রগতি, মৈত্রী ও সুষম সমাজ প্রতিফলিত হয়েছে। যে কোনো সুন্দর সুন্দর ভাষা দিয়ে তাকে প্রশংসা করলেও যথেষ্ট নয় । আমি ভালভাবে আমার সেই ২০০ মিটার দৌড়ে অলিম্পিক গেমসের ওপর চীনা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের আশা ও সমর্থন দেখাব ।