তিব্বতের আরো বেশী যোগ্য কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য চীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , ১৯৮৫ সাল থেকে চীনের অভ্যন্তরভাগের ১৯টি প্রদেশ ও শহরের বেশ কয়েকটি শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক স্কুলে তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য বিশেষ ক্লাস গড়ে তোলা হবে । এ সব ক্লাস তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে ব্যবস্থা করা হয় । উত্তর চীনের সানসি প্রদেশের রাজধানী থাই ইউয়ান শহরে অবস্থিত সানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে ৬টি তিব্বতী ক্লাস স্থাপন করা হয়েছে । এ ৬টি ক্লাসের ৪ শো ছাত্রছাত্রী তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল থেকে এসেছে । ২০০৬ ও ২০০৭ সালে ১৬৫জন ছাত্রছাত্রী এ মাধ্যমিক স্কুল থেকে পাস করে অভ্যন্তর ভাগের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । আজ এ অনুষ্ঠানে সানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষারত তিব্বতী ছাত্রছাত্রী সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি…
এতক্ষণ আপনারা যে গান শুনেছেন , তাতে শিক্ষকদের কাজের পরিশ্রম ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাদের স্নেহ ও মায়া-মমতা তুলে ধরা হয়েছে । ছাত্রছাত্রীরা তাদেরকে নিজেদের প্রিয়তম মানুষ বলে মনে করে ।
তিব্বতী ছাত্রছাত্রীরা পাই তুং হোং নামে শিক্ষিকাকে নিজেদের মা-এর চোখে দেখেন । গত তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ মাধ্যমিক স্কুলে পড়িয়েছেন । ১৯৮৫ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উদ্যোগে সানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্কুলে তিব্বতী ক্লাস শুরু হয় । তখন থেকে শিক্ষিকা পাই তিব্বতী ক্লাসের প্রথম পরামর্শদাতা শিক্ষিকা হয়েছেন । তার ক্লাসে ৪১জন ছাত্রছাত্রী আছে । শিক্ষিকা পাই তাদেরকে খুব আদর ও স্নেহ করেন । তিনি বলেন ,
তিনি এ সব তিব্বতী ছাত্রছাত্রীকে নিজের ছেলেমেয়ের চোখে দেখেন । ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রীরা তার খুব প্রিয় ও তারা স্ফুর্তিপূর্ণ । তারা নিজেদের সহপাঠী ও ক্লাসকে ভালবাসে । সবাই এক সাথে গান গায় ও নাচে । তাদের ক্লাস স্কুলের নাচ গান প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ।
এ সব ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়া সাহায্য করা এবং তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক চাপ কমানোর জন্য প্রাদেশিক সরকার মাসে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে ৩ শো ইউয়ান ভর্তুকী দেয় । তাদের চিকিত্সার খরচও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার বহন করে ।
সানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে উত্কৃষ্ট মানের লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য তিব্বতী ছাত্রছাত্রীরা খুব খুশি হয়েছে । এর জন্য তাদের পরিবার পরিজনও খুব গৌরব বোধ করছেন । লেখাপড়া করতে বড় শহরে যাওয়ার জন্য তিব্বতীরা তিব্বতী নববর্ষ পালনের মতো তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিদায় সংবর্ধনা জানান । শিক্ষিকা পাইয়ের ক্লাসে সকল সহপাঠীর এ ধরনের অভিজ্ঞতা আছে । ক্ল্সের মনিটর সেরিং বলে ,
লেখাপড়া করতে বড় শহরে যাওয়ার আগে তার আত্মীয় স্বজনও তাকে বিপুল সমারোহে বিদায় সংবর্ধনা জানিয়েছেন । বিশ তিরিশ পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন প্রীতি সম্মিলনীতে মিলিত হয়েছেন । সবাই এক সাথে যবের মদ , খাসি ও গরুর মাংস খেয়েছেন । খাওয়া শেষে সবাই এক সাথে তিব্বতী লোকনৃত্য পরিবেশন করেছেন ।
তিব্বতী ক্লাসে দাওয়া দ্রোলমাকে স্বর্ণ কন্ঠস্বর বলে অভিহিত করা হয় । সে খুব সুন্দরী , সুন্দর গান গাইতে পারে । আগে সে সহপাঠীদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে সক্ষম হতো না । শিক্ষক ও সহপাঠীদের উত্সাহে সে ধীরে ধীরে উদার হয়ে উঠেছে । সে মাধ্যমিক স্কুলে শিল্পকলা , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং চীনা ও ইংরেজী ভাষাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করেছে । ফলে যেমন তার সাহস বেড়েছে , তেমনি তার জীবনযাপনের নানা রকম জ্ঞানও বৃদ্ধি পেয়েছে । যখন সে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়, তখন সে দশজন শ্রেষ্ঠ গায়ক-গায়িকা বাছাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে । এতে সে খুব মুগ্ধ হয়েছে ।
তখন সে প্রথমবারের মতো এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় । উত্তেজনায় সে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে । তার হাতের মাইক্রোফোন কাঁপছিল । কিন্তু সহপাঠীরা তাকে উত্সাহ দিচ্ছে । সবাই তার গান পরিবেশনের জন্য হাততালি দিচ্ছে । এ অবিস্মরনীয় অভিজ্ঞতা সে কখনো ভুলে যাবে না ।
২৩ বছর পার হয়ে গেছে । এ মাধ্যমিক স্কুলের তিব্বতী ক্লাস থেকে বিপুল সংখ্যক তিব্বতী ছাত্রছাত্রী পাস করেছে । তাদের মধ্যে বহু লোক শিক্ষক শিক্ষিকা হয়েছে এবং কেউ কেউ তো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ও নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা হয়েছেন । তারা সবাই এখন বাবা মা হয়েছেন ।
গত ২৩ বছর ধরে সানসি বিশ্ববিদ্যালয় তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জন্য নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ ১ হাজার ৬ শো যোগ্য কর্মী প্রশিক্ষণ দিয়েছে । তাদের মধ্যে চাকরির জন্য প্রায় ১ হাজার স্নাতক তিব্বতে ফিরে গেছে । বহু বছর ধরে তিব্বতী ক্লাসের সাফল্য প্রসঙ্গে এ মাধ্যমিক স্কুলের প্রিন্সিপল ইয়াং সু চেন বলেন ,
নিম্ন মাধ্যমিক ক্লাস থেকে যে চল্লিশ বেয়াল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী পাস করেছে , তাদের মধ্যে তিরিশ বত্রিশ জন জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় কর্মকর্তা হয়েছেন । ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের মাধ্যমিক স্কুল যে সাফল্য দেখিয়েছে , তা বহু লোকের প্রশংসা পেয়েছে ।
চীনের অভ্যন্তর ভাগের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে সব তিব্বতী ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে , তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্ঞান অনেক বেড়েছে এবং দেশের যোগ্য কর্মীতে পরিণত হচ্ছে । ভবিষ্যতে তারা নিজেদের জন্মভূমির নির্মাণকাজের জন্য আরো অবদান রাখবে । ( থান ইয়াও খাং)
|