বেশ কিছু দিন ধরে সকল চীনা মানুষের মন ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলের দিকে । কোটি কোটি সাধারণ চীনা মানুষ নানাভাবে নিজদের অসাধারণ ভালবাসা প্রকাশ করছেন । মাদাম পান চিয়াংসুয়ে ও তাঁর " সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন"নামের দাতব্য তহবিল সংস্থা কোটি কোটি চীনা মানুষের মধ্যে রয়েছে ।
WWW.adream.org ওয়েইব সাইটটি খুললে চারটি চীনা অক্ষর সবার চোখে পড়ে যার অর্থ হলো "সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন" । ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর পশ্চিম চীনের দরিদ্র্য অঞ্চলের শিক্ষায় সমর্থন দেয়ার লক্ষ্যে "সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন তহবিল"নামের একটি মুনাফাবিহীন দাতব্য তহবিল সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৪ মে বিকেলে সাংহাই শহরে সাক্ষাত্কারে " সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন তহবিল"-এর প্রতিষ্ঠাতা, হংকংয়ে আর্থিক কাজে একদা ব্যস্ত থাকা মাদাম পান চিয়াংসুয়ে বলেছেন, প্রথমে পশ্চিম চীনের শিক্ষায় সমর্থন দেওয়ার জন্য আমাদের তহবিল সংস্থা প্রতিষ্ঠা হয় । বিশেষভাবে তহবিল সংস্থা চালানোর জন্য পান চিয়াংসুয়ে ও তাঁর স্বামী গত বছর পদত্যাগ করেছেন ।
সাংহাই শহরের বেসামরিক ব্যুরোর উপপ্রধান ফাং কোপিং জানিয়েছেন , মাদাম পান প্রায় ৮০০০ তাবু কিনেছেন এবং এই সব তাবু ছেংতু শহরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন । মাদাম পান একজন প্রফুল্ল , দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ । সিছুয়ানের দুর্গত এলাকার জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত গুরুতর দুর্গত আপা এলাকায় আমাদের দুটি " স্বপ্ন কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ভূমিকম্পের খবর জেনে সবার খুব দুঃখ লেগেছে । সে দিন আমরা চাঁদা সংগ্রহ শুরু করি । দুদিনের মধ্যে বন্ধু এবং আমাদের তহবিলের মাধ্যমে আমরা ৫ লাখ ইউয়ান সংগ্রহ করেছি এবং ৮০০০টি তাবু কিনেছি । যততাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব তাবু ছেংতু শহরে পাঠাতে পারবো হবে বলে আমরা আশা করি ।
পান চিয়াংসুয়ে যে আপা এলাকার নাম উল্লেখ করেছেন তার পুরা নাম হলো আপা তিব্বত জাতি ও ছাং জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ । এবারের ভূমিকম্পে জায়গাটি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে অন্যতম । সিছুয়ান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আপা স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ সিছুয়ান প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তিব্বতী জাতি অধ্যূষিত এলাকা এবং চীনে ছাংজাতির প্রধান এলাকা । তার পরিচালনাধীনে রয়েছে ওয়েনছুয়ান জেলা , লি জেলা, মাও জেলা , চিনছুয়ান জেলা , মা আরখাং জেলা এবং সোংপান জেলা । ঐতিহাসিক ১২.৫ হাজার কিলোমিটার লাংমার্চ চলাকালে চীনের শ্রমিক-কৃষক লাল ফৌজবাহিনী এখানকার তুষার আবৃত পাহাড় ও তৃণভূমি অতিক্রম করেছিল । তিনি বলেন, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠাবার জন্য আমি বিমানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি । কারণ আমি জেনেছি, বহু ত্রাণ সামগ্রী এখন ছেংতু শহরের নিকটবর্তী এলাকায় জমা রয়েছে । তু চিয়াংইয়েনসহ বেশ কিছু দূরবর্তী এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো যাচ্ছে না । সাক্ষাত শেষে মাদাম পান জানিয়েছেন , " সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন" ওয়েবসাইটের ব্লগে ত্রাণ সামগ্রীর পরিবহন সম্পর্কিত খবর সময়মত পরিবতর্ন করা হবে ।
তখন থেকে এ পর্যন্ত অনেক দিন পার হয়ে গেছে । এই সব ত্রাণ সামগ্রী দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে কী ? আমরা একসঙ্গে "সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্নের" ব্লগ খুলে দেখি,ব্লগে ত্রাণ সামগ্রী সম্পর্কে ভালবাসার কী কী কথা লেখা আছে ।
২০০৮ সালের ১২ মে দুপুর দুটায় বেসামরিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন পত্র সংশোধন করি। ফিরে আসার পর বন্ধুর পাঠানোর এক মেসেজ থেকে জানতে পারি যে, সিছুয়ান প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে । ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ওয়েনছুয়ান জেলায় । আসুন , আমরা দুর্গত এলাকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করি ।
১৩ মে : আমরা জানতে পেরেছি , দুর্গত এলাকায় জরুরীভাবে তাবু, স্লিপিং ব্যাগ, খাদ্য ও ওষুধসহ নানা ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন । প্রাথমিক খোঁজ খবর নেওয়ার পর আমরা বিকেল ৪টায় বন্ধুদের কাছে চাঁদা সংগ্রহ অর্থাত দুর্গতদের কমপক্ষে ১০০০টি তাবু কেনার অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব করি।
১ ৪ মে রাত ৮টা : " সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন তহবিলের " চাঁদা অর্থে কেনা প্রথম কিস্তির ত্রাণ সামগ্রী-- ৩০০টি তাবু সেনচেন বিমান কোম্পানির একটি যাত্রীবাহী বিমানে উঠানো হয়।
১৫ মে : আমাদের সহকর্মী লিন রোং সেনচেন শহরে আরও ১০০০টি তাবু কেনার ব্যবস্থা করেন । সেনচেনে ত্রাণ কাজে ব্যবহৃত ২৬ হাজার জোড়া বিশেষ দস্তানা কেনা হয় । এছাড়া আরও ৮ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ ইউয়ান সংগ্রহ করা হয় ।
১৬ মে সন্ধ্যার সর্বশেষ খবর : সেনচেনে সংগ্রহীত দ্বিতীয় কিস্তির ত্রাণ সামগ্রী পশ্চিমগামী বিমানে উঠানো হয় । ভালবাসা থাকলে জীবনের আশা থাকবেই ।
১৭ মে গভীর রাত : সাংহাই থেকে পাঠানো ৩৫৩৭টি তাবু , ৪৭২০টি স্লিপিং ব্যাগ ও ১০ হাজার বর্গমিটারের পানি নিরোধীন বস্ত্র সিফাং ও মিয়েনচুসহ ৬টি জেলায় পৌঁছে। ত্রাণকর্মীরা দুর্গতরা আছেন এমন এলাকায় এইসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবেন ।
এছাড়া "সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন" নামের ব্লগে আরও লেখা আছে, ১৬ মে সকালে জানতে পারি , বর্তমানে জরুরী সামগ্রীগুলোর মধ্যে রয়েছে, এককালীন দস্তানা , মুখোশ , বন্ধনের পটি, হাড় জোড়া লাগানোর উপাদান , রক্ত থামানোর ওষুধ, টর্চ , শিশুর গুড়া দুধ এবং তাপদাহজনিত অসুস্থতার ওষুধ ইত্যাদি ।
মাদাম পানের মতো একজন মানুষের শক্তি নগন্য । সত্যিকার ভালবাসা ও স্বপ্ন তহবিলের শক্তিও নগন্য । কিন্তু একের পর এক মানুষ এবং একটির পর একটি সংস্থা থাকার কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর ব্যাপারে আমরা বিশ্বাসী । আসুন , আমরা হাত বাড়িয়ে ত্রাণ কাজে আমাদের অবদান রাখি । যা ধ্বংসস্তুপের ওপর দুর্গত এলাকার মাথা তুলে দাঁড়ানোর আশা জাগিয়ে রাখবে ।
|