জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ৩০ জুন জানিয়েছে, মার্কিন খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ বালটিমোর ৩৭ হাজার টন গম নিয়ে ২৯ জুন উত্তর কোরিয়ার নাম্পো বন্দরে পৌঁছেছে। এটা উত্তর কোরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৫ লাখ টন খাদ্য সহায়তার প্রথম চালান। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কোরীয় পরমাণু সমস্যার নতুন অগ্রগতির সঙ্গে এই খাদ্য সহায়তা সম্পর্কিত , যুক্তরাষ্ট্র এটা অস্বীকার করে আসলেও এটি সত্য।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী বলেছে, ২৮ জুন উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এই তিনপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যশস্য সহায়তা সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী একবছরে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য সহায়তা দেবে। এই সহায়তা বন্টনের দায়িত্ব পালন করবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ।
উত্তর কোরিয়াকে খাদ্যশস্য সহায়তাকারী জাতিসংঘের দাতা দেশগুলোর মধ্যে একটি শীর্ষ স্থানীয় দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে খাদ্যশস্য সহায়তা করেছিল। তবে ২০০৫ সালের শেষার্ধে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধান না থাকার অজুহাত দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে খাদ্যশস্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। গত বছর উত্তর কোরিয়ার গুরুতর বন্যা এবং এ বছরের বসন্তকালে অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে কৃষি উত্পাদন ব্যাহত হওয়ায় সেখানে সারাত্মক খাদ্যশস্য সংকট দেখা দিয়েছে। ২ কোটি ৩০ লাখ কোরিয়ার মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ খাদ্যশস্য অভাবে পড়েছে বলে জাতিসংঘ ধারণা করছে। উত্তর কোরিয়ার জরুরিভিত্তিতে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য দরকার। উত্তর কোরিয়ার " রোদোং সিনমুন" পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জুন সেদেশের সর্বোচ্চ নেতা কিম জং ইল জোর দিয়ে বলেন, খাদ্যশস্য সমস্যার সমাধান করা বর্তমানে দেশটির সবচে' জরুরি দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে পরমাণু ঘোষণার সমস্যা নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ সময়। পরমাণু ঘোষণা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ কোরিয়া বিভাগের প্রধান কিম সুং ৮ মে উত্তর কোরিয়া সফর করেন । ১০ জুন তিনি মোট ১৮ হাজার পৃষ্ঠার পরমাণু পরিকল্পনার দলিলপত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করেন। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়া মার্কিন খাদ্যশস্য পরামর্শ বিষয়ক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পিয়ং ইয়ংয়ে খাদ্যশস্য সহায়তা সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দেয়। কয়েক দিন পর দু'পক্ষ আগামি এক বছরে ৫ লাখ টনের খাদ্যশস্য সহায়তা বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছে। এর পরই খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ "বাল্টিমোর" উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
২৬ জুন উত্তর কোরিয়া ছ'পক্ষীয় বৈঠকের চেয়ারম্যান দেশ চীনকে পরমাণু ঘোষণা দাখিল করে। এদিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক দেশের তালিকা থেকে উত্তর কোরিয়ার নাম বাদ দেয় এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কিছু কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৭ জুন উত্তর কোরিয়া ইয়ং বিয়ংয়ের একটি পরমাণু স্থাপনার কুলিং ধ্বংস করে দেয় । উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য সহায়তা দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করে উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী ২৯ জুন মার্কিন খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছায়। এ থেকে বোঝা যায় যে, মার্কিন খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
জনমত অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যশস্য সহায়তা নিঃসন্দেহে ছ'পক্ষীয় বৈঠক ত্বরান্বিতকরণ এবং কোরিয় উপদ্বীপের পরমাণু অস্ত্রমুক্তকরণ প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। উত্তর কোরিয়া খাদ্যশস্য সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং বলেছে যে এটি দু'দেশের সমঝোতা ও আস্থা এগিয়ে নেয়ার জন্য সহায়ক হবে। সুতরাং উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক ইতিবাচক তত্পরতা যেমন কোরিয় পরমাণু সমস্যা সমাধানকে এগিয়ে নেবে তেমনি দু'পক্ষের সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটবে। --ওয়াং হাইমান
|