জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার জাপান সফর শেষে ১ জুলাই থেকে চীন সফর শুরু করবেন। এরপর তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন এবং জাপানের হোক্কাইডোতে অনুষ্ঠিত জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
এবারের পূর্ব এশিয়া সফরের আগে বান কি মুন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চীনের তথ্য মাধ্যমগুলোকে যৌথ সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীন সফরে তার প্রত্যাশা অনেক। তিনি বিশ্বাস করেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস অবশ্যই সফল হবে এবং আশা করেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীন আরো বড় ভূমিকা পালন করবে।
২০০৬ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব হওয়ার পর পরই বান কি মুন চীন সফর করেন এবং কিছু দিন আগে তিনি বিশেষ করে চীনের সিছুয়ান ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তবে তিনি এই প্রথম বারের মতো জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে চীনে আনুষ্ঠানিক সফর করছেন। এ জন্যই তিনি এবারের সফর নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী। সফরকালে তিনি চীনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিশ্ব সমস্যা নিয়ে ব্যাপক মত বিনিময় করবেন। তিনি বলেন, 'চীন হচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থানী সদস্য দেশের অন্যতম। বিশ্বের একটি প্রভাবশালী ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে জাতিসংঘ তথা সারা বিশ্বে চীনের নেতৃত্বের মর্যাদা আছে। আমি নিঃসন্দেহে চীনের নেতাদের সঙ্গে মানবজাতির কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।'
সাক্ষাত্কারে বান কি মুন আবারো ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি এবারের ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে চীন সরকারের কার্যকর উদ্যোগ ও সামর্থ্যের প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের আদর্শে পরিণত হওয়া উচিত চীনের।
'ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলে আমি যে দৃশ্য দেখেছি, তার জন্য বিস্ময় ও দুঃখ বোধ করি। এর পাশাপাশি চীন সরকারের ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণের অতি কার্যকারিতা ও সুশৃঙ্খল কর্মকান্ড আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। এটা সকল দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিছু দিন আগে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই তিন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এ তিনটি দেশের মধ্যে 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সহযোগিতা ব্যবস্থা' গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটাও একটি উত্সাহব্যঞ্জক সুখবর।'
বান কি মুন বলেন, জাতিসংঘ অব্যাহতভাবে চীন সরকারের দুর্যোগোত্তর পুনর্গঠন কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করবে। 'চীন সরকার ও জনগণকে সহায়তা ও সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ শক্তি সঞ্চয় করেছে। আমরা দুর্গত অঞ্চলকে 'কেন্দ্রীয় জরুরী অবস্থা মোকাবিলা তহবিল' এর ৮০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছি। আমরা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে ভবিষ্যত সহায়তার কাজ সম্পন্ন করবো। আমি বিশ্বাস করি, এমন গুরুতর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ার পরও চীন সরকার কঠিন অবস্থা অতিক্রম করতে সক্ষম।'
পেইচিংয়ে অনুষ্ঠেয় ২৯তম অলিম্পিক গেমস প্রসঙ্গে বান কি মুন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, চীনে আয়োজিত এবারের অলিম্পিক গেমস ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম একটি অলিম্পিক গেমস হবে। 'আমি মনে করি, সকল চীনা জনগণের অলিম্পিক গেমস আয়োজনে ধারাবাহিক প্রয়াসের জন্য আন্তরিকভাবে গর্ব বোধ করা উচিত। অলিম্পিক গেমস তৃতীয় বার এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের সম্মিলন স্থানে পরিণত হবে।'
চীন সফরকালে বান কি মুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিনিময় করবেন এবং বক্তৃতা দেবেন। তিনি বলেন, বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি চীনের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে চান যে, বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চীনের আরো বড় ভূমিকা পালন করা উচিত। 'আমি চীনের তরুণতরুণীদেরকে বলতে চাই, তারা হচ্ছে চীনের ভবিষ্যত। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ও দ্রুত অগ্রগতির দেশ হিসেবে চীন সারা বিশ্বে প্রভাব রাখতে পারছে এবং দায়িত্ববান দেশে পরিণত হয়েছে। এখন জাতিসংঘ অনেক বিশ্ব সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশের অন্যতম হিসেবে জাতিসংঘের সঙ্গে অব্যাহত ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখে এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালাবে।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|