ভিয়েতনামের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নং দুক মান ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত চীন সফর করেছেন। চীন ও ভিয়েতনামের সম্পর্কের মান উন্নত করার জন্য তাঁর এবারের সফরের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা ও বিনিময় অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভিয়েতনামের আরো বেশি ছাত্র-ছাত্রী চীনে লেখাপড়া করতে আগ্রহী। বর্তমানে চীনে অধ্যয়নরত ভিয়েতনামের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। এর মধ্যে পেইচিংয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। চীনে থাকার সময় তাদের জীবনযাত্রা কেমন? আজকের অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদেরকে কিছু জানাবো।(১)
আমার নাম নগুয়েন থাই নগা। আমি ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর থেকে এসেছি।
তিনি চীনের বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রথমে তিনি এক বছর চীনা ভাষা শিখেছেন। তিনি চার বছর ধরে পেইচিংয়ে বসবাস করছেন। তাঁর মা হো চি মিন শহরে একটি বড় বাতি আমদানি - রপ্তানি কোম্পানি চালাচ্ছেন। নিয়মিত তাঁর মা চীনের নিং বো শহর থেকে কিছু জিনিস আমদানি করেন। এ জন্যই তাঁর মা তাঁকে চীনা ভাষা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য নগাকে চীনে পাঠিয়েছেন। পেইচিংয়ে আসার আগে নগুয়েন থাই নগা চীনা ভাষা বলতে পারতেন না।(২) তিনি বলেন,
আগে আমি চীনা ভাষা কিছুই বুঝতে পারতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় ট্যাক্সি চালককে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বই বা অন্য কোনো কাগজ দেখিয়ে তবে আসতে হতো।
চীনা ভাষা ভালোভাবে শেখার জন্য নগুয়েন থাই নগা প্রতিদিন শোনা প্রতিটি চীনা শব্দ জানার ও বোঝার চেষ্টা করতেন। এক বছরের চেষ্টায় তিনি চীনা ভাষা যোগ্যতা পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্য বিভাগে লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি বলেন, চীনা ভাষা শেখা বা পেশাগত বিভাগে লেখাপড়ায় চীনা ছাত্র-ছাত্রীরা ও শিক্ষকগণ আমাদেরকে অনেক সাহায্য করেছেন।(৩)
কোনো বাক্য না বুঝলে তা বুঝতে আমার সহপাঠীরা আমাকে সাহায্য করেছেন। তারা খুব বৈর্যশীল। চীনা ভাষা কোর্সে কিছু কিছু বিষয় আমি বুঝতে না পারলে তারা অঙ্গভংগী করে বা অন্য পদ্ধতিতে তা ব্যাখ্যা করেছে। শিক্ষকরাও খুব সহিষ্ণু।
বর্তমানে নগুয়েন থাই নগা পেইচিংয়ের জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ক্লাস হয়। শনিবার ও রবিবার বন্ধুদের সঙ্গে পেইচিং নগরে বেড়াতে যান। তাঁর জীবন খুই আনন্দময়। এর পাশাপাশি তিনি পেইচিং নগরের উন্নয়ন নিজের চোখে দেখেছেন।(৪) তিনি বলেন,
আমি পেইচিংয়ে চার বছর লেখাপড়া করছি। আমি পেইচিং আসার পর পেইচিং নগরের বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। আগে মাত্র দুটি সাবওয়ে লাইন ছিল। বর্তমানে চারটি লাইন রয়েছে। চীনারা ইংরেজী শিখে বিদেশীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পেইচিংয়ে বহু নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পেইচিংয়ের উন্নয়নের গতি খুবই দ্রুত ।
আরো এক বছর পর, নগুয়েন থাই নগা স্নাতক হবেন। তিনি তাঁর মার কোম্পানিতে কাজ করবেন। তিনি বলেন, চীন একটি বৃহত্ বাণিজ্যিক শক্তি। চীনের সফল বাণিজ্যিক দৃষ্টান্ত অনেক। আমি বিশ্বাস করি, চীনে লেখাপড়ার জ্ঞান আমার মাকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতায় সাহায্য করতে পারবে।(৫)
নগুয়েন থাই নগার মত ট্রান পাম পুয়োং থাও হো চি মিন শহর থেকে এসেছেন। তিনি নগায়েন থাই নগার সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। পেইচিংয়ে অবস্থানের দু'বছরে তিনিও পেইচিংয়ের ব্যাপক পরিবর্তন দেখেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এক ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন পুয়োং থাও বাসে করে ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারেন। পেইচিং নগরের পরিবহন খুব সুবিধাজনক এবং খুব সস্তা।
তাঁর ভাড়া বাড়ি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রধান স্টেডিয়ামের খুব কাছে। তিনি বলেন,(৬)
প্রতিদিন আমি পেইচিং নগরের পরিবর্তন দেখি। যেমন গতকাল সড়কের কাছাকাছি কোন সবুজ উদ্ভিদ ছিল না। আজ গাছে গাছে ভরে গেছে। আমি পেইচিং নগর উন্নয়নের গতি দেখে মুগ্ধ ।
পেইচিংয়ে লেখাপড়ার সময় ট্রান পাম পুয়োং থাওয়ের অনেক চীনা বন্ধু হয়েছে শুধু তাই নয়, বরং তিনি মনের মানুষও খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর প্রেমিক চীনের শান তোং প্রদেশের একজন তরুণ। প্রান পাম পুয়োং থাও সবসময় তাঁর বন্ধুর কাছে নিজের দেশের কথা বলেন। তাঁর বন্ধুও ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট বইয়ের মাধ্যমে ভিয়েতনাম সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করেন এবং ভিয়েতনামিজ শেখেন। তারা হচ্ছেন চীন ও ভিয়েতনামের বিনিময়ের এক সেতুবন্ধ। দু'পক্ষের বোঝাপড়া ক্রমশ গভীর হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে হয়তো দু'দেশের আরো বেশি তরুণ তরুণীর বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় বাড়বে।
|