পেইচিংয়ে "তিব্বতের বর্তমান ও অতীত" প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে । কিছু দিন আগে দক্ষিণ কোরিয়া , ফ্রান্স, জার্মানী , যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান , ইন্দোনেশিয়া ও কাজাখস্তান সহ বিভিন্নদেশের শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই প্রদর্শনীপরিদর্শন করেছে । তাদের অনেকেই মন্তব্য করেন , প্রদর্শনীটির মাধ্যমে তারা তিব্বতের ইতিহাস, বর্তমান এবং আসল তিব্বত সম্পর্কেজানতে পেরেছে ।
" তিব্বতের বর্তমান ও অতীত" প্রদর্শনীটি এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে পেইচিংয়ে শুরু হয়েছে । বিপুল পরিমাণের ঐতিহাসিক তথ্য, পুরাকীর্তি, ছবি ও তালিকার মাধ্যমে প্রদর্শনীটিতে ১৯৫৯ সালের আগের তিব্বতের রাজনীতি ও ধর্মেরসমন্বয়ে সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস ব্যবস্থার অধীনে তিব্বতীদের জীবনযাত্রার অবস্থা এবং তিব্বতের বর্তমানসামাজিক উন্নয়ন তুলে ধরা হয়েছে । দক্ষিন কোরিয়ার ছাত্রী চো ইয়ু বলেন, ঐ সব জিনিসপত্র ও ছবি থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, পুরানো তিব্বতের শাসকরা ভূমিদাসদের চোখ ও কান কাটা এবং হাত ও পা ভেঙ্গে দেওয়া সহ নানা নিষ্ঠুর নিপীড়নের র মাধ্যমে শাসন চালাতো । তিনি বলেন , আমি মানুষের চামড়া দেখেছি । শাসকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভূমিদাসের দুই চোখ তুলে নিতো , তাদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করত । তখন সর্বত্রই ভিক্ষুক দেখা যেত । ভূমিদাসদের কোনো খাবার ছিল না , বাড়ি ঘরও ছিল না । আমি মনে করি , পশ্চাদপদসামাজিক ব্যবস্থার কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে । আমরা কেউ এ ধরণের পশ্চাদপদ সামাজিক ব্যবস্থাদেখতে চাই না ।
প্রদর্শনী দেখার সময় বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলেন, কেউ নিজের ডাইরীতে নোট রাখেন আবার কেউ কেউ সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস প্রথায়ভূমিদাসের দুঃখ ও কষ্টের জীবন অনুভব করে কেঁদে ফেলেন । তারা বলেন , এ সব ছবি ও অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে তারা আসল তিব্বতকে জানতে পেরেছেন । তারা সবাইকে আসল তিব্বত সম্পর্কেজানাবেন । ফ্রান্সের একজন ছাত্র বলেন , আমি আগে তিব্বতের ইতিহাস জানতাম না । এবারের প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমি অনেক শিখেছি , অনেক জেনেছি । এই সব ছবি দেখে আমি মনে করি , দালাই ভূমিদাস ব্যবস্থা রক্ষার অপচেষ্টা করছে , সে জন্যই সে ভাল নয় । আমি অতীতে ভূমিদাসদের শোচনীয় জীবনের জন্য দুঃখিত । প্রদর্শনীটি দেখে সবাই না কেঁদে পারে না ।
তিব্বতের ইতিহাস ছাড়া ১৯৫৯ সালে চীন সরকার তিব্বতে সামন্ততান্ত্রিক ভূমিদাস মালিকের জমির মালিকানা ব্যবস্থা বাতিল করে কৃষকের জন্য জমির মালিকানা ব্যবস্থা চালু করার পর বিশেষ করে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছর পর তিব্বতের সমাজে যে পরিবর্তন হয়েছে প্রদর্শনীটিতে তা তুলে ধরা হয়েছে । প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে তিব্বতে মহাসড়ক , রেলপথ ও বিমান বন্দর নির্মাণ এবং তিব্বতের শিক্ষা ,চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ধর্ম ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকশ বিলিয়ন রেন মিনপি বরাদ্দ করেছে । এর ফলে তিব্বতের লাখ লাখ কৃষক ও পশুপালকের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে । এ সম্পর্কে ইন্দোনেশিয়ার ছাত্র ফিফান বলেন , ১৯৫৯ সালের আগে ভূমিদাসরা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় দিন কাটাতেন । ১৯৫৯ সালের পর তিব্বতী জনগণের জীবনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আগের চাইতে অনেক উন্নতি হয়েছে । এখন বাসে করে বা রেলগাড়িতে অথবা বিমানযোগে খুব সহজে তিব্বতে যাওয়া যায় ।
পরিসংখ্যানে জানা গেছে , ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটানা সাত বছর ধরে গোটা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্পাদনের মোট মূল্য ১২ শতাংশ বেড়েছে । ১৯৫৯ সালের তুলনায় এটা ৫৯ গুণ বেশি । সুদানের ছাত্র আহমেদ ২০০৫ সালে তিব্বতে গিয়েছিলেন । তিনি বলেন , ২০০৫ সালে আমি লাসায় গিয়েছিলাম । সে বারের ভ্রমণে আমি লক্ষ্য করেছিলাম , তিব্বতী জনগণ অত্যন্তআরামে দিন কাটাচ্ছেন। মোট কথা , সেখানকার বিভিন্ন জাতির জনগণ আনন্দময় ও সুষম জীবনযাপন করছেন ।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে , গত দু মাসে প্রায় এক লাখ দর্শক প্রদর্শনীটি দেখেছেন । বিদেশী দর্শকরা ভিন্ন অক্ষর দিয়ে লিখেছেন , "তিব্বতের বর্তমানও অতীত" প্রদর্শনীটি আমাদেরকে আসল তিব্বত জানার জন্য একটি চমত্কার সুযোগ করে দিয়েছে । চুং শাওলি
|