উত্তর চীনের হোনান প্রদেশের চুমাতিয়েন শহরে একজন শত বছর বয়সী বৃদ্ধা আছেন । এক দিন সংবাদদাতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার সাক্ষাত্কার নিতে গিয়েছেন ।
যখন সংবাদদাতা বৃদ্ধার বাসার সামনে গিয়ে পৌঁছলেন , তখন ছিল দুপুর বেলা । সংবাদদাতা দরজা খুলেই দেখলেন , একজন বুড়ি মা বাটি তুলে নূডলস্ খাচ্ছিলেন । তিনি কি ঐ শতায়ু বৃদ্ধা ? আমার মতে শত বছর বয়সী বৃদ্ধ বৃদ্ধা তো ভয়ানক বয়স্ক । তবু সামনের বৃদ্ধাকে দেখে মনে হয় বয়স শুধু আশির একটু বেশী । তিনি শান্ত আর তার অতীব মমতাময়ী।
বৃদ্ধার নাম আন হোন মেই । ১৯০৩ সালের ১৩ই মে হোনান প্রদেশের চুমাতিয়েন শহরের রাওজেতে তার জন্ম । তার বাবা মা অকালে মারা গেছেন । তিনি ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেন , তাঁর তিন মেয়ে এক ছেলে । তারা সবাই সুস্থ আছেন ।
আন হোন মেই বলেছেন , জীবনে দুই ব্যাপার তার মনে গভীর রেখাপাত করেছে । একটা ব্যাপার তার বিয়ের আগের কথা । তিনি তখন যে লাওজেতে বাস করতেন , তখন জাঁকজমক , যাতায়াত ও লোকদের ভীড় ছিল । হাট ও পথে লোক শিল্পীরা স্থানীয় অপেরাও পরিবেশন করতেন । যেহেতু তিনি একজন মেয়ে , সেহেতু তিনি শুধু বাসায় রান্না বান্না করতেন , সূচী কর্ম করতেন । তিনি স্কুলে যেতে পারতেন না , বাইরে যা খুশি চলাফেলা তো আরো দূরের কথা । একদিন বয়স্ক আর অভিভাবকদের সাহায্যেই তিনি বাইরে ঘুরে ঘুরে দেখার সুযোগ পেলেন ।
বিয়ের পর তার স্বামীর শরীর ভাল ছিল না , পরিশ্রম করতে পারতেন না । সুতরাং তিনি বাসার প্রায় সকল কাজ করার বোঝা তিনিই বহন করতেন । তখন বাড়ির দুই ভাগ কৃষি জমি গ্রামের বাইরে ছিল । এক ভাগ পূর্বে আর আরেক ভাগ পশ্চিমে । দুই ভাগ কৃষি জমির মধ্যে সমাধিস্থল । সে সময় দুস্কৃতকারী বেশী আর নিরাপত্তা কম । কৃষি জমিতে কাজ করার সময় তার স্বামী ফসল রক্ষনাবেক্ষণ করতেন । নিজের সাহস বাড়াবার জন্য তিনি এক দিকে কাজ করতেন , অন্য দিকে চড়া কন্ঠে তার স্বামীর নাম ডাকলেন । অন্ধকার হয় , তখন বাইরে শুধু এই দম্পতির আওয়াজ আর তাদের কথাবার্তার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল ।
১৯৯০ সালে ৮৭ বছর বয়সী আন হোন মেই আকস্মিকভাবে মস্তিষ্কের রক্তশীলার রোগে আক্রান্ত হন । এক মাসের বেশী সময় ধরে চিকিত্সা গ্রহনের পর তার সুস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং তার রোগের কোনো ক্ষতির চিহ্ন হয নি । পরিবার পরিজন তাকে আর কৃষি কর্ম করতে দেন না । তবু তিনি বাড়ির প্রাঙ্গনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতারক্ষার কাজ করেন । তিনি কখনো কখনো সন্তান সন্ততীর জন্য পোষাক সেলাই আর জুতা মেরামতের কাজ করেন । বৃদ্ধ কথাবার্তার জন্য অন্যদের বাসায় যেতে চান না আর তাস খেলা পছন্দ করেন না ।
বৃদ্ধের শরীর খুব ভাল । অসুখ কম , চোখের সমস্যা আছে , কানের কোনো অসুবিধা নেই । বৃদ্ধের ছেলে বলেছেন , বৃদ্ধের যে দীর্ঘায়ু হয়েছে , তার মূলে রয়েছে শাক সবজি বেশি খাওয়া । দীর্ঘায়ুর অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তরে বৃদ্ধা বলেছেন , তিনি নিরক্ষর , সাদাসিধা জীবনযাপন করেন , যা আছে , তা খান । সময় সময় বাইরে ঘুরে ঘুরে বেড়ান ।
এখন হংকংয়ের একজন দীর্ঘায়ু বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান শাও ই ফুর বয়স ৯৫ । তিনি বলেছেন , হাসি এক ধরনের সংযম ও নমনীয়তা এবং এটা একটা সুস্বাস্থ্যের চাবি । একজনের ভদ্র আচার ব্যবহার আর অন্যদের সংগে আদান প্রদানের মমতা সুখী জীবনের একটি ভাল ঔষধ । সংযম আর নমনীয়তা অবলম্বন করা অন্যদের জন্য বসন্তের উষ্ণ বাতাস বয়ে আনে । অন্যদের প্রতি সংযম আর নমনীয়তা পোষণ না করা নিজের জন্যও দুঃখ দুর্দশা ডেকে আনে । অন্যদের উপকার করলে জীবনযাপনে নিজের ভবিষ্যত সম্ভাবনাও ব্যাপক হবে। সুতরাং মানুষে মানুষে পারস্পরিক আস্থা আর ভালবাসা দরকার । এটা আপনার মনের জন্য শান্তি আর নিরাপত্তা বয়ে আনে ।
|