আলাই
চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর চীনের বিভিন্ন মহলের মানুষ দুগর্ত অঞ্চলে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন । সি ছুয়ান প্রদেশের তিব্বতী জাতির লেখক আলাই ও অন্য নয়জন লেখক পেইচিংয়ের বইপত্র ভবনে নিজের বই বিক্রি করেন এবং বই বিক্রি থেকে পাওয়া সব অর্থ দুগর্ত অঞ্চলে সাহায্য হিসেবে পাঠিয়েছেন ।
লেখক আলাই ১৯৫৯ সালে সি ছুয়ান প্রদেশের আপা তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত মা আর খান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ১২ মে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় তিনি সি ছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেন তু শহরের বাসায় ছিলেন । তখনকার কথা স্মরণ করে আলাই বলেন , ১২ মে বিকালে আমি ভূমিকম্প অনুভব করেছি । পরে কুয়াং চৌ শহরের এক বন্ধু আমাকে ইমেল পাঠিয়ে ভূমিকম্পের সময় আমার অনুভবের কথা জিজ্ঞেস করেন , আমি বলেছি আমি যেন একটি জাহাজে ছিলাম । সমুদ্রে প্রবল বাতাসে জাহাজটি তীব্রভাবে দুলছিল । ভূমিকম্পের পর থেকে প্রায় এক মাস পার হয়ে গেছে ,পত্রিকা ও টেলিভিশনে আমি অনেক লোকহর্ষক ঘটনা পড়েছি ও দেখেছি । আমি মনে করি আমাকে দুগর্ত অঞ্চলের ভাইবোনের জন্য কিছু করতে হবে । আমি সি ছুয়ানের আরেকজন লেখক মাই চিয়ার সঙ্গে দুগর্ত অঞ্চলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে কিছু টাকা পাঠিয়েছি , আমি আরো বেশি অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি । আলাই বলেন , ভূমিকম্পে দুগর্ত অঞ্চলের অনেক স্কুল ভবন ধ্বসে পড়েছে । অনেক ছেলেমেয়ে ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকে পড়ে মরেছে । এ সব খবর পেয়ে আমি সত্যিই মর্মাহত। আমি দুগর্ত অঞ্চলের স্কুল ভবন পুনর্নিমানে সাহায্য দিতে চাই । এবারের ভূমিকম্প আমার জন্মস্থানে সংঘটিত হয়েছে ,আমি জন্মভূমির পুননির্মানে কিছু কাজ করতে চাই । আমি ও আমার বন্ধু মাই চিয়া মোট দুই লাখ ইউয়ান দিয়েছি । আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করছি , যাতে তারাও এ অথর্সংগ্রহের কাজে অংশ নিতে পারেন। কুয়াং চৌয়ের এক বন্ধু বলেছেন তিনি কুয়াং চৌয়ে দেড় লাখ ইউয়ান সংগ্রহ করেছেন । আমরা এসব টাকা দুগর্ত অঞ্চলে পাঠাবো এবং স্কুল ভবন পুননির্মানের কাজে এ অর্থ ব্যবহারের কথাও বলবো ।
আলাইয়ের বয়স এ বছর ৫০ হবে । তার মা তিব্বতী , বাবা হু জাতির অধিবাসী । এমন এক পরিবার আলাইয়ের উদারতা ও সহিষ্ণু মনোভাব সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে । আলাই মার খান শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের স্নাতক । তার পাঁচ বছরের গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষকতারঅভিজ্ঞতা আছে । এখন ' বিজ্ঞান ও কাল্পনিক মহল ' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক । তিনি বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন । এর মধ্যে রয়েছে ছোটগল্প ' পুরানো রক্ত চিহৃ ' 'চান্দ্র আলোতে উদ্ভাসিত রৌপ্য অলঙ্কার মিস্ত্রী ' , প্রবন্ধ সংগ্রহ ' ভূমির সিঁড়ি ' ও কবিতা সংগ্রহ ' সো মো নদী '-র নাম উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে তার লেখা উপন্যাস ' ছেন আই লুও তিন '-এ তিব্বতী অধ্যুষিত অঞ্চলে সামন্ত ভুমিদাস ব্যবস্থা আমলের ইতিহাস বণর্না করা হয়েছে । এ উপন্যাসে লেখক আলাই ভূমিদাস মালিক ও ভূমিদাসদের জীবন বণর্না করা হয়েছে । এ উপন্যাসে আলাই প্রথম ব্যক্তির সুরে তার দেখা ও শোনা কাহিনী বণর্না করেছেন । আলাই মনে করেন , একজন তিব্বতী লেখক হিসেবে তিনি কখনও তিব্বতীর মত কথা বলেন না , বরং মানব জাতির কাতারে থেকে সাহিত্য রচনা করেন । তিনি বলেন , আমরা বলি বিভিন্ন মানুষের নিজের অবস্থান আছে । আসলে মানব জাতির একটি অভিন্ন অবস্থান আছে । এই অবস্থানের ভিত্তিতেই শুধু কোনো জাতি বা মানুষের অবস্থান টিকে থাকতে পারে । সব জাতি ও মানুষের অবস্থান মানব জাতির অবস্থানের অধীনে থাকতে হবে । তাই আমি মনে করি ,যদি নিজ জাতি বা দেশের স্বার্থ বা অবস্থানের কথা বেশি বলে , তাহলে অনেক সমস্যার নিষ্পত্তি কঠিন হবে । মানব জাতির অবস্থানগত সমস্যার কথা বিবেচনা করলে অনেক সমস্যার নিরসন সহজ হবে । বিভিন্ন জাতির মধ্যে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে শুধু নিজ জাতির অবস্থানের কথা বললে ভুলবোঝাবুঝি বাড়বে ।
আলাই বলেন , তার সাহিত্য রচনার প্রধান বিষয় হলো তিব্বতীদের জীবন । তিনি তার উপন্যাস ' খালি পাহাড়' চীনের তিব্বতী অধ্যুষিত গ্রামাঞ্চলের ইতিহাস ও শিকারীদের জীবন কথা বণর্না করা হয়েছে । এ উপন্যাসে তিব্বতীদের জীবন ও তিব্বতী অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে । আলাই বলেন , উপন্যাস ' খালি পাহাড়' এর তিনটি খন্ড আছে । এতে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর পঞ্চাশ বছরে , বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর ত্রিশ বছরে চীনের গ্রামাঞ্চলের একটি গ্রামের পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে । আমি একজন তিব্বতী লেখক , তাই আমি একটি তিব্বতী গ্রামের অতীত ও বতর্মান তুলনার মাধ্যমে গোটা চীনের গ্রামাঞ্চলের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করেছি ।
আলাই সি ছুয়ান প্রদেশের ছে তু শহরে থাকেন । তবে তিনি নিজের জন্মস্থান আপা পছন্দ করেন । তিনি প্রায়ই তিব্বতী অধ্যুষিত অঞ্চলে যান । তার কয়েকজন ভাই জন্মস্থান আপায় থাকেন । তাই তিনি প্রতি বছরই জন্মস্থানে যান। আলাই বাসায় কম থাকেন । সময় পেলেই তিনি গাড়ী চালিয়ে তিব্বতী অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান । তা ছাড়া , তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান ও বিদেশ ভ্রমণ করতেও পছন্দ করেন । আলাই বলেন , তিনি তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের পছন্দ করেন ,তাদের জীবন সুখী । আলাই প্রতি বছরই তাদের সঙ্গে কিছু দিন কাটান ।
একজন তিব্বতী লেখক হিসেবে আলাই তিব্বতের আদিবাসীদের জীবন ধারা ও তাদের মানসিক অবস্থার ওপর বেশি মনোযোগ দেন । তিনি বলেন , তার মনের একটি আকাংখা হলো বিগত এবং এ শতাব্দীর তিব্বতী অধ্যুষিত অঞ্চলের সামাজিক পরিবতর্ন সম্পর্কিত একটি বই লিখবেন । (ফাং সিউ ছিয়েন)
|