চট্টগ্রামের শ্রোতা গোলাম মোর্তোজা তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কতগুলি বিখ্যাত নাটক? চীনদের লোকেরা কি কি ধরনের নাটক দেখতে ভালবাসে?
শ্রোতা বন্ধু আপনার এ দু'টো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্যিই একটু কঠিন। চীন তো একটি বিশাল দেশ। অজস্র সংস্কৃতি দল আছে। বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের সংস্কৃতি দল নাটক পরিবেশন করে। সুতরাং চীনে কতগুলি বিখ্যাত নাটক আছে তা বলা মশকিল। সত্যি কথা বলতে কি, আজকাল অনেক চীনা লোক বিশেষ করে তরুণতরুণীরা নাটক দেখতে পছন্দ করে না। তারা টিভিতে পরিবেশিত ধারাবাহিক টিভি নাটক দেখতে পছন্দ করে। অবশ্যই এখন আস্তে আস্তে অধিক থেকে অধিকতর বেশী লোক সিয়াটারে নাটক দেখা যাচ্ছে। এখন নাটক ক্রমেই জনতার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কুমিলা জেলার শ্রোতা মামুন রহমান তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের সরকারী বার্তার সংস্থার নাম কি?
উত্তরে বলছি, সিনহুয়া বার্তাসংস্থা চীনের সরকারী বার্তাসংস্থা। ১৯৩৭ সালের জানুয়ারী মাসে ইয়ানআনে সিনহুয়া বার্তাসংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এই সংস্থা থেকে বহিবির্শ্বের জন্য ইংরেজিতে সংবাদ প্রচার শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের শেষ দিকে এই সংস্থার প্রথম বিদেশস্থ শাখা চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগে খোলা হয়। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে গণ প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিনহুয়া বার্তাসংস্থা দেশের সরকারী বাতার্সংস্থায় পরিণত হয়। থাইওয়ান প্রদেশ ছাড়া চীনের অন্য যাবতীয় প্রদেশে, কেন্দ্রশাসিত মহানগরে ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সিনহুয়ার শাখা আছে। ৮৭টি দেশ ও অঞ্চলেও সিনহুয়ার শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেক শাখায় কয়েকজন করে সংবাদদাতা কাজ করছেন। তা ছাড়া, সিনহুয়া বাতার্সংস্থা চীনের জাতীয় সংবাদপত্রগুলোকে ও রেডিও ও টেলিভিশনগুলোকে প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিবেশন করে। সিনহুয়া বাতার্সংস্স্থা বিদেশে প্রধানত ইংরেজি ভাষায় খবরাখবর পাঠায়, তবে সেই সঙ্গে সঙ্গে ফরাসী, স্প্যানিশ, আরবী ও রুশ ভাষায়ও সিনহুয়া খবরাখবর পাঠিয়ে থাকে।
রাজশাহি জেলার শ্রোতা আনু মুহাম্মদ তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি ঋতু আছে? শীতকালে কি খুব ঠান্ডা?
উত্তরে বরছি, চীনে মোট চাঁরটি ঋতু আছে। বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল, শরত্কাল এবং শীতকাল। আপনি জানেন যে, চীন একটি বিশাল দেশ। সুতারাং, একই ঋতুতে তলেও দক্ষিণ ও উত্তর চীনের মধ্যে তাপমাত্রায় বেশ পাথর্ক্য আছে। শীতকালে উত্তর চীনে শীত বেশী পড়ে। তবু বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা উঠার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর চীনে অতীতের চাইতে কম শীত পড়ে। যেমন ধুরন. গত বিশ ত্রিশ বছর আগে চীনের হেইলোংচিয়াং অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪০ ডিগ্রি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে তাপমাত্রা মাত্র মাইনাস বিশের কাছাকাছি। কিন্তু এখানে উল্লেখ করতে হবে। উত্তর চীনে শীতকালে ঠান্ডা হলেও ঘরে গরম, কারণ ঘরে হিতার ব্যবস্থা আছে। আবার দক্ষিণ চীনে শীতকালে বেশী শীত না পড়লেও ঘরে খুব ঠান্ডা লাগে, কারণ ঘরে হিতার ব্যবস্থা নেই।উত্তর চীনের অধিবাসিরা যদি শীতকালে ঘরে থাকে তাহলে খুব আরাম লাগে। বাংলা বিভাগের বতর্মান দু'জন বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এবং ইলিয়াসখান সাহেবের কথা ধরা যাক। তারা দুজনই প্রথম বার পেইচিংএ শীতের দিন কাটান। গত বছর যখন শীত আসেনি তখন তাঁদের মনে মনে ভয় পেল। মাঝে মাঝে তাঁরা এভাবে বলতেন, ' শীতের দিনে পেইচিংএ এত ঠান্ডা, কি বাঁচবো?' শীত আসার পর তাঁরা টের পেলেন চীনের শীতকাল খুব ভয়ংকর নয়। প্রথম কয়েক দিন মনে হয় একটু তাঁদের পক্ষে কিছু অসুবিধায় হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁরা এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়েছেন। সালাউদ্দিন সাহেব মাঝে মাঝে বলেন, পেইচিংএর শীতকাল তাঁর খুব ভাল লাগে। তিনি শীতের দিনে বাইরে হাঁটতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি বরফের উপর দিয়ে হাঁটেন তখন খুব মজা লাগে। দক্ষিণ চীনের কয়েকটি জায়গায় শীতকালে তাপমাত্রা প্রায় বাংলাদেশের মত। যেমন গুয়াংডোং ও গুয়াংসী অঞ্চল। বাংলাদেশে যে সব ফুলমুল পাওয়া যায় সে সব ফুলমুল এ দু'টো অঞ্চলেও পাওয়া যায়।
বগুড়া জেলার শ্রোতা মোস্তাফা জব্বার তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮ সালের কোন মাসে অনুষ্ঠিত হবে? বতর্মানে প্রস্তুতিমূলক কাজ কেমন চলছে?
উত্তরে বলছি, পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮ সালের ৮ অ্যাগস্ট মাসে আয়োজন করা হবে।চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী ৮ নম্বর শুভ নম্বর। সুতরাং পেইচিং অলিম্পিক গেমসে এই মাসের এই তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। বতর্মানে পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮-এর বিভিন্ন প্রস্তুতমূলক কাজ পুরোদ্যমে চলছে। অনেক জ্যামনেজিয়ামের নির্মান কাজ চলতি বছরের শেষ দিকে শেষ হয়ে যাবে। তা ছাড়া পেইচিংএর বেশ কয়েকটি পুরাতন স্ট্যাডিয়াম ও জ্যামনেজিয়ামের সংস্কার কাজও পুরোদ্যমে চলছে। গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা পেইচিং পরিদর্শন করেছেন। তারা পেইচিংএর প্রস্তুতিমূলক কাজে সন্তোষজনক। পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানানোর জন্যে পেইচিং পৌ সরকার বিভিন্ন তাত্পযর্সম্পন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। পেইচিং বাসীদের মধ্যে অলিম্পিক্ম সম্পর্কে জ্ঞানও প্রচারিত হচ্ছে। এক কথায়, পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮ যাতে অলিম্পিক ইতিহাসে আড়ম্বরপূর্ণ একটি অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়, সেই জন্য চীন সরকার এবং পেইচিং পৌ সরকার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮-এর উদ্বোধন থেকে মাত্র পাঁচ শোরের কম দিন বাকী আছে।বিশ্বের দৃষ্টি আগামি বছর অগ্যাষ্ট মাসের ৮ তারিখের উপর নিবিষ্ট হয়ে পড়বে। তখন মহা চীন তার সুষ্ঠু ভাবমূর্তি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে প্রকাশ পাবে।
রাজশাহী জেলার শ্রোতা মাইন উদ্দিন তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনদেশে পড়াশুনা করতে চাইলে স্কল্যাশীপ পাওয়া যায়? প্রত্যেক বছর কয়েকজন বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীকে আনা হয়?
উত্তরে বলছি, চীন সরকার বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কল্যাশীপ দেয়। বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীর কোন ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতি বছরগুলোতে প্রত্যেক বছর দশ-বারো জন বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনের স্কল্যাশীপ পেয়ে থাকেন। তা ছাড়া , নিজের খরচে চীনে পড়াশুনা করতে পারেন। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত। বতর্মানে কয়েক ডজর্ন বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। যদি আপনি চীনে পড়াশুনা করতে চান তাহলে তাহলে প্রথমে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের কাছে আবেদন করেন। অনুমোদন পেলে একটি বিশেষ পরীক্ষা নিতে হবে। এ পরিক্ষীয় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেবল চীনের স্কল্যাশীপ পেতে পারেন।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের আসাম জেলার শ্রোতা যুবায়ের হোসেন তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের সর্বোচ্চ আদালতের নাম কি?
উত্তরে বলছি, সর্বোচ্চ গণ আদালত হচ্ছে চীনের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ। সর্বোচ্চ গণ আদালত বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় গণ আদালত ও বিশেষ গণ আদালতের বিচার বিষয়ক কাজকর্মে তদারক করে, উচ্চতর গণ আদালত নিম্নতর গণ আদালতগুলোর বিচার সংক্রান্ত কাজর্কমের তদারক করে। সর্বোচ্চ গণ আদালত জাতীয় গণকংগ্রেসের নিকট ও জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির নিকট দায়ী থাকে এবং কাযর্বিবরণ দাখিল করে।
পাপনা জেলার শ্রোতা রিফাত তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের কোন জায়গায় নদনদী বেশী ?
উত্তরে বলছি, দক্ষিণ চীনের জিয়াংসু ও যেজিয়াং প্রদেশে নদনদী বেশী হয়। নদীগুলোতে শুধু যে নৌকার চলাচল হয় তাই নয়, নানা ধরনের মাছও চাষ করা হয়। সুতরাং নদনদীগুলো সে সব অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
নরসিংদী জেলার শ্রোতা ফরহাদ খান তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, সি আর আইয়ে কমর্চারীদের সংখ্যা কত? বতর্মানে সি আর আইএর বাংলা বিভাগে কয়েক জন কর্মচারী আছে?
উত্তরে বলছি, বতর্মানে সি আর আইয়ে প্রায় দু হাজার কমর্চারী আছে। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশী ভাষার স্নাতক ছিলেন। তা ছাড়া, এক শোরও বেশী বিদেশী চমর্চারী সি আর আইয়ে কাজ করছেন। বতর্মানে সি আর আইএর বাংলা বিভাগে মোট ১৯জন কমর্চারী আছে। ১৯জনের মধ্যে দু'জন বাংলাদেশী কমর্চারী , ৫জন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কমর্চারী । এখানে উল্লেখ করতে হবে, বতর্মানে বাংলা বিভাগে জনশক্তির অপ্রতুলের কারনে ৫ জন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কমর্চারী বাংলা বিভাগে সাহায্য করছেন। আসলে বতর্মানে বাংলা বিভাগে আনুষ্ঠানিক চীনা কমর্চারীদের সংখ্যা ১২জন।
|