চীনের সমুদ্রতীরবর্তী শহরগুলোর শিল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ চীনের মধ্যবর্তী প্রদেশ চিয়াং সি'র রাজধানী নান ছাং শহরও দেশ বিদেশের ব্যবসায়ী আকর্ষণে পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সুসংহত করছে । আস্তে আস্তে নান ছাং শহর আরো বেশি বিদেশি বন্ধুদের লেখাপড়া , পুঁজি বিনিয়োগ ও কাজের ক্ষেত্রে আকর্ষণ করছে । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের একজন ভারতীয় বন্ধুর পরিচয় করিয়ে দেবো । তার নাম গোপালকৃষ্ণ এইচ কুলকার্নি । তিনি নান ছাং মহরের "ছিয়ান সি ইউয়ান" নামের একটি কমিউনিটিতে থাকেন , তিনি যে ভবনে থাকেন তার নাম "চীন-ভারত মৈত্রী ভবন" ।
"ছিয়ান সি ইউয়ান" কমিউনিটিতে ঢুকলে দেখা যাবে লাল ও সাদা রঙের ভবন , শিশুরা কমিউনিটিতে খেলাধূলা করছে । তাদের বাবা মা পাশেই গল্প-গুজব করছে । এসব ভবনের মধ্যে একটি ভবন একটু আলাদা । কারণ সেখানে আটটি ভারতীয় পরিবার থাকেন । তারা সবাই মহিন্দ্র ট্রাক্টর কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ কর্মী । তাই সবাই এ ভবনটিকে "চীন-ভারত মৈত্রী ভবন" বলে । আজকের অনুষ্ঠানের মুখচরিত্র গোপালকৃষ্ণও এ ভবনে থাকেন । ৩৮ বছর বয়সী গোপালকৃষ্ণ ২০০৫ সালে নান ছাংয়ে এসেছেন । তার জন্মস্থান ভারতের বৃহত্তম শহর মুম্বাইয়ে । পেইচিং ও সাংহাইয়ের তুলনায় নান ছাং শহর ততটা উন্নত নয় , তবে গোপালকৃষ্ণ মনে করেন এ শহরের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে । তিনি বলেন :
যদিও নান ছাং শহর পেইচিং ও সাংহাইয়ের মত বড় নয় । তবে জীবনযাপনের জন্য এ শহর বেশি উপযোগী । কারণ এ শহরে থাকলে স্বজনের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো যায়। এখানে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে । সমস্যা হলে , এ কমিউনিটির বন্ধুরা আমাদেরকে সাহায্য করেন । গোপালকৃষ্ণ প্রথম চীনে একাই এসেছিলেন । আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে আসেন নি । তিনি বলেন :
আমার মনে হয় চীনারা খুব উষ্ণহৃদয় এবং অন্যকে সাহায্য করতে আগ্রহী । যখন আমি চীনা ভাষা বলতে পারতাম না , তখন তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন । যেমন বিমানবন্দরে বা হোটেলে । যদিও হোটেলের কর্মী ইংরেজী বলতে পারে না , তবুও তারা আন্তরিক চেষ্টায় আমাকে সাহায্য করেছে । আমি চীনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পছন্দ করি । ২০০৬ সালে গোপালকৃষ্ণর স্ত্রী ও সন্তান নান ছাংয়ে আসেন । ঠিক এ বছরে নাং ছাংয়ে প্রথমবারের মত চীন ও ইংরেজী ভাষায় মানচিত্র ছাপা হয়েছে । এ মানচিত্রে স্থানীয় দর্শনীয় স্থান এবং রাস্তার ইংরেজী নাম আছে । এ ছাড়া , শিল্প প্রতিষ্ঠান , বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী সংস্থার ইংরেজী নামও আছে । গোপালকৃষ্ণর স্ত্রীর একটি সুন্দর চীনা নাম আছে , তা হল লি ইয়ুয়ে । তিনি এখন নান ছাংয়ের একটি ব্রিটিশ কোম্পানীতে কাজ করেন । প্রতি সপ্তাহে তিনি গোপালকৃষ্ণর সঙ্গে নান ছাং বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শেখেন । কাজ ছাড়া কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন লি ইয়ুয়ে । তিনি বলেন :
নান ছাং শহর খুব ভাল । থাকার জন্য বেশ উপযোগী । এ শহরের সুবজায়ন অবস্থাও খুব ভালো । আমরা সবসময় নিজেরা রান্না করি এবং সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করি । আমি কিছু চীনা ভাষা বলতে পারি , তাই ভাষার অসুবিধা নেই ।
চিয়াং সি প্রদেশের লোকেরা ঝাল খাবার পছন্দ করে । অনেক পর্যটক চিয়াং সি প্রদেশে আসলে সেখানকার খাবারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না । তবে গোপালকৃষ্ণর পরিবারের জন্য এটা কোনো সমস্যা না । গোপালকৃষ্ণ বলেন :
নান ছাংয়ের কিছু কিছু খাবার বেশ ঝাল । তবে আমাদের ভারতীয় মানুষের জন্য কোনো সমস্যা নেই । আমি এখন মোটামুটি চীনা খাবার খেতে পারি । মাঝে মাঝে আমরাও রেস্তরাঁয় খাই । কারণ আমরা এখন চীনা ভাষা শিখছি , তাই চীনাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারি ।
কোম্পানীর কর্মী শুয়েই ইয়ুন খুন গোপালকৃষ্ণর সঙ্গে কাজ করতেন । তিনি টেলিফোনে সংবাদদাতাকে বলেন , গোপালকৃষ্ণর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব স্মরণীয় । তিনি বলেন :
তিনি আমার প্রথম ম্যানেজার । আমার ওপরে তার প্রভাব বিরাট । তিনি খুব ভালো একজন বন্ধুও ।
নিজের কোম্পানী মহিন্দ্র সম্পর্কে গোপালকৃষ্ণ বলেন :
ভারতীয় ও চীনাদের অনেক মিল আছে । ভারতের জনসংখ্যা অনেক বেশি , ভারতের ইতিহাসও সুদীর্ঘ । চীনও একটি বড় দেশ । চীন ও ভারত উভয়ই কৃষিপ্রধান দেশ । নিঃসন্দেহে , মহিন্দ্র চীনে সফল হবে ।
"চীন-ভারত মৈত্রী ভবনে" থেকে গোপালকৃষ্ণর পরিবার খুব সন্তুষ্ট । যদিও দু'বছর পর কোম্পানীর সঙ্গে গোপালকৃষ্ণর কর্মমেয়াদ শেষ হবে । তবে তিনি বলেন , চীনে থাকার অভিজ্ঞতা কখনোই তিনি ভুলে যাবেন না ।
(শুয়েই ফেই ফেই)
|