নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইউর একজন কর্মকর্তা ২৩ জুন বলেছেন, এ দিন লুক্মেমবার্গে অনুষ্ঠিত ইইউর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ইরানের ওপর নতুন অবরোধ আরোপে সম্মতি দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পুঁজি জব্দ করা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে ইইউর দেশগুলোতে প্রবেশে বা কোন বাণিজ্যিক তত্পরতায় নিষিদ্ধ করা এ নতুন অবরোধের প্রধান বিষয়।
ইইউর এ কর্মকর্তা বলেন, এ নতুন অবরোধে ব্রিটেনের লন্ডন, জার্মানীর হামবুর্গে ও ফ্রান্সের প্যারিসে ইরানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের শাখাগুলোর ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হবে । এর পাশাপাশি ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২০জন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞকে ইইউর দেশগুলোতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে এবং এ সব দেশে পরমাণু কর্মসূচীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৫টি সংস্থার পুঁজি জব্দ করা হবে। ২৪ জুন এ নতুন অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হওয়ার পর এ সব শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম প্রকাশিত হবে । এ কর্মকর্তা আরও বলেন, যেহেতু কিছু দিন আগে স্লোভেনিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউরোপ-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলনে এই নতুন শাস্তির পদক্ষেপ নির্দিষ্ট হয়েছে সেহেতু এবারের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বিষয়টি আলোচনা ছাড়াই অনুমোদিত হয়েছে। তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, আলোচনার দরজা এখনও খোলা ।
ইরানের ওপর আরোপিত নতুন এ অবরোধ অপ্রত্যাশিত ব্যাপার নয়। এর আগের ইউরোপ-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলনে ইইউর নেতারা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আর্থিক শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ইরানের পরমাণু কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য ইইউর তিন বছর স্থায়ী কূটনৈতিক চেষ্টা বন্ধ হয়নি। ১৪ জুন ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি হ্যাভিয়ের সোলানা ইরানের কাছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন , ফ্রান্স ও জার্মানীর পুনরায়আলোচনার নতুন কর্মসূচী পেশ করেছেন। নতুন কর্মসূচীতে ইরানের প্রতি উত্সাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ যুক্ত করা হয়েছে । তবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কর্মসূচী সাময়িকভাবে বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।
জনমত অনুযায়ী, ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ইরানের ওপর আরও কঠোর অবরোধ আরোপের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে কোন কোন দেশ মার্কিন সরকারকে আগের মনোভাব পরিবর্তন করে ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে প্রত্যক্ষ বৈঠক করার আশা প্রকাশ করেছে। কিছু দিন আগে, ইউরোপে প্রেসিডেন্ট বুশের বিদায়ী সফরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচী ছিল একটি বিশেষ আলোচ্য বিষয় । কেবল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গেটসই যুক্তরাষ্ট্রকে তোষামোদ করে ব্রিটেনে ইরানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পুঁজি জব্দ করার কথা বলেছিলেন। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে অস্বীকার জানিয়েছে।
অন্য দিকে ইইউর নতুন কূটনৈতিক প্রয়াসের মুখে ইরানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কমিশনের মহা সচিব ও পরমাণু সংক্রান্ত আলোচনার প্রধান প্রতিনিধি জালিলি ২১ জুন জানিয়েছেন, ইরান পারষ্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক । ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসনি ২৩ জুন তেহরানে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ইরান এই আলোচনার জন্য প্রস্তুত । তিনি বলেন, এই আলোচনা ইরান ও ছ'টি দেশের জন্য সহযোগিতা চালানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে।
বিশ্লেষকদের ধারণায় ইরানের জটিল পরমাণু কর্মসূচী সমাধানের জন্য আরও কার্যকর শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পদ্ধতি নেওয়া অধিকাংশ দেশের অভিন্ন আকাংক্ষা। কারণ ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত অবরোধের হুঁমকি মোকাবেলা করতে অভ্যস্ত। ইরানের অর্থ মন্ত্রী হোসেন সামসামি ২২ জুন বলেছেন, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অশোধিত তেল রফতানিকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিম্য দেশগুলোর আরোপিত অর্থনৈতিক শাস্তি ইরানের অথর্নীতির ওপর তেমন কোন প্রভাব হয়নি ।
|