১২ মে ওয়েনছুয়ান ভয়াবহ ভূমিকম্প চীনের সকল মানুষের মনকে শোকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। তখন থেকে আমরা সংগীতানুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। দুর্গত অঞ্চলের জনসাধারণকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুর্দশা থেকে বের করে আনার জন্য চীন সারা দেশের শক্তি কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে আসছে। এখন দুর্গত অঞ্চলের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজ সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। চীনের সংগীতাঙ্গনের শিল্পীরা দুর্গত অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য বিশেষ গান রচনা করেছেন এবং বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
২২ মে 'মা ও শিশুর জন্য' শীর্ষক ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ সংক্রান্ত দাতব্য সিমফনি পেইচিংয়ের শতাব্দী থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের এই সংগীতানুষ্ঠানের অংশ বিশেষ শোনাবো।
চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর পুলিট বিভাগের সমবেত পুরুষ দল ও পেইচিংয়ের হেইচিমাহু হোথোং প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের দরদী কন্ঠে গাওয়া 'ভালোবাসায় বিশ্ব পূর্ণ করা' গান দিয়ে সংগীতানুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে।
'তোমার মুখে হাতে ধরি, তোমার চোখের জল মুঝে ফেলি। আমার মন চিরকাল তোমার কাছে আছে। আমাকে বলো, তুমি আর একাকী হবে না।'
চীনের জাতীয় জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা কমিটি, সিমফনি উন্নয়ন তহবিল আর জনসংখ্যা কল্যাণ তহবিল যৌথভাবে 'মা ও শিশুর জন্য' শীর্ষক ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ সংক্রান্ত দাতব্য সিমফনি আয়োজন করে। চীনের সিমফনি উন্নয়ন তহবিলের চেয়ারম্যান ম্যাডাম কুও শান জানিয়েছেন, 'আমরা সিছুয়ান দুর্গত অঞ্চলের বাচ্চাদের জন্য উদ্বিগ্ন। এতো বেশি নবীন প্রাণ হঠাত্ হারিয়ে গেলো। সত্যি মর্মাহত। টেলিভিশনে আমরা দেখেছি, কিছু মা সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন। দুর্গত অঞ্চলের বাচ্চাদের পবিত্র চোখ আমাদের মন গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। আমি মনে করি, এমন দৃশ্যে মানুষের মনের ভিতরের প্রেম জেগে ওঠে।'
সংগীতানুষ্ঠানের পরিচালক হুয়াং ইয়োং আশা করেন, দাতব্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলের জনসাধারণ, বিশেষ করে মা ও শিশুদের প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারি। তিনি বলেন, 'এবার দাতব্য সংগীতানুষ্ঠানের প্রসঙ্গ হচ্ছে 'মা ও শিশুর জন্য'। সিমফনি ও গানের মধ্য দিয়ে আমরা ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলের জনসাধারণ, বিশেষ করে মা ও শিশুদের প্রতি আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করি। দুর্গত অঞ্চলের জনগণের পুনর্বাসনের জন্য সারা দেশের মানুষ এক মন হয়ে দৃঢ় মানসিক শক্তি দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।'
এখন আপনারা চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর পলিট বিভাগের সিমফনি দলের বাজানো 'লাল পতাকার প্র্রশংসার গান' নামের সিমফনি শুনছেন। ১৯৬৫ সালে সুরকার লিউ ছি মিং 'লাল পতাকার প্র্রশংসার গান' রচনা করেন। সংগীতটিতে মাতৃভূমির প্রতি চীনা জনগণের প্রেম ও আন্তরিকতা ফুটে উঠেছে।
সংগীতানুষ্ঠানে বিখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী ফান চিং মা 'মোমবাতির আলোয় মা' নামের গানটি গেয়েছেন। গানের মধ্য দিয়ে দুর্গত অঞ্চলের মা ও শিশুদের প্রতি আমাদের গভীর আবেগ প্রকাশিত হয়েছে। গানটি সকল দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
দাতব্য অনুষ্ঠানে চীনের পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও জনগণ পৃথক পৃথকভাবে দুর্গত অঞ্চলকে মোট ৪ কোটিরও বেশি ইউয়ান চাঁদা দিয়েছে। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান গু সিউ লিয়ান সংগীতানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সারা দেশের মায়েদের উদ্দেশ্যে ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ, দুর্যোগোত্তর পুনর্বাসন ও মানসিক সাহায্যসহ নানা কাজে দুর্গত অঞ্চলের মা ও শিশুদের জন্য যথাসাধ্য সাহায্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সিছুয়ান ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সারা দেশের জনগণের শোকার্ত মন দুর্গত অঞ্চলে পড়ে আছে। ভূমিকম্পে অনেক মা সন্তান হারিয়েছেন। অনেক বাচ্চা মাকে হারিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমি অনুভব করতে পারি যে, তারা কতটা দুঃখ পেয়েছেন। আমাদের সাহায্য তাদের লাগবে। আজকের দাতব্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্গত অঞ্চলের মা ও শিশুদের কাছে আমাদের ভালোবাসা পৌঁছে দিচ্ছি।'
এখন আপনারা কন্ঠ শিল্পী চাং ইয়োর গাওয়া 'আমি আর আমার স্বদেশ' গানটি শুনছেন। চাং ইয়ো সংবাদদাতাকে বলেন, 'এ গানের কথা খুব ভালো। আমি গানটি খুব পছন্দ করি। আমি মনে করি, দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এ গান দিয়ে আমাদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারি। স্বদেশের সঙ্গে এবং মায়ের সঙ্গে থাকলে আমরা অবশ্যই দুর্যোগকে জয় করতে পারি। দুর্গত অঞ্চলের ভাই বোনেরা, আমি আশা করি, তোমরা আমাদের দেশের জনগণের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এ বিপদ অতিক্রম করবে।'
সংগীতানুষ্ঠানটি 'প্রেমের অবদান' গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। গানের কথা এমন, 'এটা মনের ডাক। এটা প্রেমের অবদান। এটা মানবজাতির বসন্তকালের বাতাস। এটা প্রাণের উত্স। কেবল সবাই প্রেম দিয়ে অবদান রাখেন, পৃথিবী অনেক সুন্দর হবে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|