প্রতি বছর জুন মাসের ৭ ও ৮ তারিখ চীনের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য সারা দেশে একই সময়ে জাতীয় ভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এটাই চীনের চিরায়ত সাধারণ প্রথা। ১২ মে সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্প এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া দুর্গত এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষা গ্রহণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। বর্তমানে দুর্গত এলাকার টানা ভূমিকম্পোত্তর ছোট ছোট কম্পন হচ্ছে। পরীক্ষা যথাসময় অনুষ্ঠিত হলে পরীক্ষার ভ্যেনুতেও ভূমিকম্পোত্তর ছোট ছোট কম্পনের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুতরাং চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্গত এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিছুয়ান প্রদেশ ও কান সু প্রদেশের ৫৭টি দুর্যোগ কবলিত জেলার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভূমিকম্পের কারণে সারা দেশের অন্যান্য প্রদেশের এক কোটিরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে একই সময়ে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য এবং চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে স্থানীয় সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দুর্যোগ কবলিত এলাকার পরীক্ষার্থীরা সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরীক্ষা স্থগিত রাখার এক মাস পর স্কুলের ভবন ও পরীক্ষার ভ্যেনুসহ বিভিন্ন স্থাপনা পুনর্গঠনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সুষ্ঠুভাবে যোগ দিতে পারবে।
ওয়েন ছুয়ান জেলা হচ্ছে সিছুয়ান প্রদেশের সাধারণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত থাকা একটি অঞ্চল। আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন যে, স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলের ভবন ভমিকম্পের কারণে বিপদজনক ভবনে পরিণত হয়েছে। স্কুলের আট শো পরীক্ষার্থীরা স্কুলের উদ্যানে তাঁবুতে অস্থায়ী ক্লাসরুমে লেখাপড়া করছে। এ মাধ্যমিক স্কুলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থিয়েন ইয়াং সোং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, সরকার এখানকার কাছাকাছি এলাকায় বেশ কিছু অস্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা এসব অস্থায়ী বাড়িতে আবার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। (১) থিয়ান ইয়াং সুং বলে,
ভূমিকম্পের পর শিক্ষকদের সংগঠনে আমরা নিজেরাই নিজেদের ত্রাণ কাজ চালাচ্ছি এবং নিয়মিত লেখাপড়া করছি। তাঁবু গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা কেবল বসবাস করতে পারি তাই নয়, বরং লেখাপড়ার স্থান হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। আমরা সন্তোষ বোধ করি।
আরেকজন পরীক্ষার্থী কাও সি ইউয়ান বলেছেন, যদিও বর্তমানে লেখাপড়ার পরিবেশ ভালো নয়, তবুও সে এক মাস পর পরীক্ষায় আরো ভালো সাফল্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।(২) সে বলেছে,
সাধারণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সময় প্রতিটি পরীক্ষার্থীর ওপরই চাপ থাকে। তবে এ পরিস্থিতিতে একজনের একটি লক্ষ্য থাকলে তার ইচ্ছাশক্তি আরো দৃঢ় হবে। তিনি সফল হবেন।
জানা গেছে, সিছুয়ান ও কানসু দুটি প্রদেশের দুর্যোগ কবলিত অঞ্চল ছাড়াও, অন্যান্য অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা পূর্ব-নির্ধারিত সময়ে সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। দুর্গত এলাকার সাধারণ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে চালানো ও সুরক্ষার জন্য চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ইউয়ান দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও নিজেরাই নিজেদের ত্রাণ কাজ এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়া ও পরীক্ষার প্রয়োজনীয় সব রকম অনুকুল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় শিক্ষা বিভাগও পরীক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে সাহায্য দিচ্ছে। কিছু কিছু এলাকার পরীক্ষার্থীদের দুর্গত এলাকার বাইরে স্থানান্তর করে তাদের লেখাপড়ার ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকা অস্থায়ী ভবন নির্মাণ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যথাশীঘ্রই ক্লাসে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করছে। কিছু কিছু এলাকা পেশাগত ব্যক্তিদের সংগঠন করে পরীক্ষার্থীদেরকে মনস্তত্ত্ব-সন্বন্ধীয় পরামর্শ দিচ্ছে।
এর পাশাপাশি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির উপায়ের সুবিন্যস্ত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সিছুয়ান প্রদেশের পরীক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা বাড়াতে তাগিদ দিয়েছে। আগের ভর্তির পরিকল্পনার ভিত্তিতে আরো দুই শতাংশ পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি করা হবে। তাছাড়া, ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণ কাজে ভালো অবদান রাখা পরীক্ষার্থীদেরকেও বিশেষ সুযোগ দেয়া হবে।
সম্প্রতি সিছুয়ান প্রদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য প্রায় এক হাজার চার শোটি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গত এলাকার পরীক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি কাজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মেং ছিয়ান বলেছেন,(৩)
ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিছুয়ান প্রদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে দুর্গত এলাকার পরীক্ষার্থীর ভর্তি সংখ্যা বাড়ানো হবে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি দুর্গত এলাকার পরীক্ষার্থীদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যাতে দুর্গত এলাকার পরীক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারে।(লিলু)
|