জুন মাস থেকে পরিবেশ রক্ষায় সারা চীনে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তা হচ্ছে চীনের সুপারমার্কেট, দোকান ও বাজারসহ যাবতীয় কেনাকাটার জায়গায় আর বিনা মূল্যে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ সরবরাহ না করা অর্থাত্ জিনিস কেনার পর শপিং ব্যাগ দরকার হলে ক্রেতাকেই তা কিনতে হবে। এই নতুন ব্যবস্থা চীনের অধিকাংশ মানুষ ও বিক্রেতার সাড়া ও সমর্থন পেয়েছে। অনেক মানুষ এখন বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে দোকানে কেনাকাটা করতে যান। ধারনা করা হচ্ছে, বিনামূল্যে প্লাস্টিক ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর চীনে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের পরিমাণ আগের চেয়ে তিন ভাগের দুই ভাগ কমে যাবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কোটি নানা ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিক ব্যাগ পচনশীল নয়, ফলে তা মাটির সাথে মিশে যায় না। নিষ্কাশিত হওয়ার পর তা নদী বা সমুদ্রে গিয়ে অক্ষত অবস্থায় থাকে। এতে পরিবেশ গুরুতরভাবে দূষিত হয়। জনগণকে যুক্তিসংগতভাবে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, সম্পদের সার্বিক প্রয়োগ ত্বরান্বিত করা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য এ বছরের প্রথম দিকে চীন সরকার খুচরা বিক্রয় স্থানগুলোতে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ টাকা দিয়ে কেনার ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেয়। প্রায় পাঁচ মাস ধরে প্রচার ও প্রস্তুতি নেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত ১ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
১ জুন সংবাদদাতা পেইচিংয়ের বিভিন্ন দোকান ও সুপারমার্কেটে দেখেছেন, দোকানগুলোতে ঢুকেই চোখে পড়ে এমন সব জায়গায় প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ কেনার জন্য বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক শহরবাসী নিজেই বাস্কেট বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে দোকানে যাচ্ছেন। তারা এই ব্যবস্থার প্রতি এভাবেই সাড়া দিচ্ছেন। তারা মনে করেন, প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু তা এমন বড় কিছু নয়। একজন শহরবাসী নারী বলেন, 'আমি সাথে করে নিজের ব্যাগ নিয়ে এসেছি। আগে আমরাও বাস্কেট বা ব্যাগ হাতে নিয়ে শপিং করতাম। পরে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার শুরু হয়। এখন জেনেছি যে, প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশ দূষিত করে, সুতরাং আমরা তা ব্যবহার করবো না। বাস্কেট নিয়ে বাজার করতেও কোনো অসুবিধা নেই।"
একজন শহরবাসী পুরুষ বলেন, 'যখন সবুজ অলিম্পিকের স্লোগান তোলা হয়েছে তখন। আমরা নিজেদের কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার না করলে অসুবিধা নেই। পরিবেশ দূষিত হলে রাজধানীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।'
এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে আমরা ভেবেছিলাম কৃষিজাত পণ্যের বাজারে তা কার্যকর করা একটু কঠিন হবে। সংবাদদাতা ঐ সব বাজারে গিয়ে সেখানকার কিছু দোকানদারের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। তারা বলেন, যদিও নতুন ব্যবস্থা তাঁদের ব্যবসার ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তারপরও বিনা খরচে প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ না দিলে উত্পাদন ব্যয়ও কিছুটা সাশ্রয় হবে। তারা বলেন, 'প্রথম দিকে একটু অসুবিধাজনক বলে মনে করতাম। পরে আস্তে আস্তে ক্রেতারা সবাই বুঝতে পেরেছেন। তারা নিজেই ব্যাগ নিয়ে আসেন। এটা আমাদের জন্যও ভালো।'
অন্যান্য দেশ ও অঞ্চল একবারে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ না করে চীন কেবল বহু বার ব্যবহার যোগ্য নয় এমন প্লাস্টিক ব্যাগের উত্পাদন নিষিদ্ধ করেছে এবং টাকা খরচ করে প্লাস্টিক ব্যাগ কেনার ব্যবস্থা চালু করায় ব্যাগ ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
পেইচিং শহরের বাণিজ্য ব্যুরোর শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান চাং ছিয়াং জানিয়েছেন, 'উপযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগের পুরুত্ব ০.০২৫ মিলিমিটারের কম হলে চলবে না। দেশের বাধ্যতামূলক মানদন্ড অনুসারে প্লাস্টিক ব্যাগ উত্পাদিত হতে হবে। তা ছাড়া প্লাস্টিক ব্যাগের ওপরে প্রস্তুতকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের টেলিফোন নম্বরও ছাপা থাকতে হবে। তাহলে সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধান বিভাগ তদারকি করতে পারবে।'
বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব করেছেন, প্লাস্টিক ব্যাগ কেনার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পাশাপাশি চীনের উচিত্ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প কিছু উত্পাদন করা। এই বিকল্প অবশ্যই বহুবার ব্যবহার যোগ্য হতে হবে। তাহলে পরিবেশ সুরক্ষা ও সম্পদ সাশ্রয়ের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|