চীন-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের অ্যানাপোলিসে শুরু হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের বিশেষ প্রতিনিধি, রাষ্ট্রীয় পরিষদের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ছি শান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশের বিশেষ প্রতিনিধি, অর্থমন্ত্রী হেনরি এম পলসন যৌথভাবে সংলাপটি পরিচালনা করছেন। মার্কিন কারনেগি আন্তর্জাতিক শান্তি তহবিলের সিনিয়র গবেষক আলবার্ট কাইডেল সিআরআই এর ওয়াশিংটন শাখার সংবাদদাতা ওয়াং শান শানের নেয়া বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ দু'দেশের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ হচ্ছে দু'দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ। মার্কিন পক্ষ এ সংলাপের প্রস্তাব করার পর চীন এতে সম্মতি দেয়। দু'পক্ষের আলোচনার পর ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ চালু হয়েছে। দু'পক্ষ প্রধানতঃ দু'দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বা বিশ্বব্যাপী কৌশলগত অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এ সংলাপটি দু'দেশের বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা ও স্বীকৃতি পেয়েছে।
কারনেগি আন্তর্জাতিক শান্তি তহবিল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত থিংকট্যাংক। ডঃআলবার্ট কাইডল এই সংস্থার সিনিয়র গবেষক। তিনি মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ছিলেন। সেই পদে থাকাকালীন তিনি সক্রিয়ভাবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংলাপে অংশগ্রহণ করে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময় আমাদের চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংলাপকে এগিয়ে নেওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। এ জন্য আমরা বহু বছর ধরে চেষ্টা করেছিলাম। চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ এ বছর নিয়ে চার বার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের প্রতিটি সংলাপ দু'দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রের আলোচনা ত্বরান্বিত করেছে। আমি লক্ষ্য করেছি, এ সংলাপের মাধ্যমে দু'দেশের সম্পর্ক আরো নিবিড় হচ্ছে। এটি দু'দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যোগাযোগের একটি স্বতন্ত্র পদ্ধতি।'
কাইডেল উল্লেখ করেন, এই সংলাপ কেবল দু'পক্ষের পরস্পরের সমঝোতা বাড়ানোর জন্য সহায়ক হয়েছে তাই নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছে।তিনি বলেন, 'সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপে বিশেষ সুপ্ত সম্ভাবনাও উন্মোচিত হয়েছে। পণ্যের নিরাপত্তা সমস্যা কেবল চীনের নয়। আমাদের অন্য দেশ থেকে আমদানী পণ্যেরও নিরাপত্তা সমস্যা আছে। কিছু কিছু দেশের পণ্যের নিরাপত্তা সমস্যা চীনের চেয়েও গুরুতর। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চীনের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী উ ই ও মার্কিন অর্থমন্ত্রী পলসন দ্রুতগতিতে এই সমস্যা সমাধান করেছেন। দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে আবার নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা একটি খুব ভালো উদাহরণ। এ থেকে আমরা দেখতে পাই, উচ্চ পর্যায়ের সংলাপের সরাসরি ফলাফল।'
কাইডেল আরো উল্লেখ করেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ হচ্ছে এক দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা। অনেক সমস্যা স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করা যায় না। তবে তিনি লক্ষ্য করেছেন, ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে দু'পক্ষের মতভেদ কমে গেছে। তিনি মনে করেন, এটা ইতিবাচক ইঙ্গিত। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, দু'দেশের সম্পর্ক দিন দিন পরিণত হচ্ছে। তিনি বলেন, 'সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী উ ই ও অর্থমন্ত্রী পলসন সংলাপের মাধ্যমে পরস্পরের কাজের পদ্ধতি ভালোভাবে জেনেছেন। আলোচনার বিষয় দু'পক্ষের প্রতিনিধি দলের কাছেও পরিচিত হয়েছে। তারা সক্রিয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।'
কাইডেল বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ কেবল দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে তা নয়, বরং সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যও কিছু প্রস্তাব দিতে পারে। তিনি আশা এবং একই সঙ্গে বিশ্বাস করেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দু'দেশের সম্পর্কের উভয়ের কল্যাণ অর্জনের দিকে যাওয়া এবং পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|