দু'দিনব্যাপী ১৭তম বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের পূর্ব এশিয়া সম্মেলন ১৬ জুন মালয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শেষ হয়েছে । সম্মেলনের আলোচ্যবিষয় ছিল "নতুন অনিশ্চয়তা মোকাবিলা" । সম্মেলনে অংশগ্রণকারীরা নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি , সমাজ ও রাজনীতির পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন ।
২০টিরও বেশি দেশের সরকারী কর্মকর্তা , অর্থনীতিবিদ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সম্মেলনে অংশ নেন । বিশ্বের অর্থনীতির হ্রাস , যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সংকট , মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ও জ্বালানীর দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা অংশ্রগণকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । যদিও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিজ দেশ ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছে । তবুও পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি যৌথ পরিকল্পনা দরকার । তাই অংশগ্রহণকারীরা কিভাবে বিভিন্ন দেশ যৌথভাবে আঞ্চলিক ও বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য উপ মন্ত্রী আন হো ইয়ুং সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় বলেছেন , খাদ্য ও জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী উত্কন্ঠায় এশীয় দেশগুলোর নতি স্বীকার করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং অর্থনীতির দৃঢ় ভিত্তি বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে ।
খাদ্য ও জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি ছিল সম্মেলনের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় । জানা গেছে , ২০০০ সাল থেকে খাদ্যের দাম ৭৫ শতাংশ বেড়েছে , তেলের দাম এখন ব্যরেল প্রতি ১৪০ মার্কিন ডলারে উঠেছে । বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যা হুমকি সৃষ্টি করেছে । মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ বাদাভি সম্মেলনে পূর্ব এশিয়া দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যৌথভাবে শক্তিশালি ব্যবস্থা নিয়ে খাদ্য ও জ্বালানীর দামের বৃদ্ধি জনিত নতুন সংকট মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন , যাতে বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী গতি ও কিছু দেশের সামাজিক অস্থিতিশীলতা এড়ানো যায় । বাদাভি বলেন , খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিশ্বে দশ কোটিরও বেশি লোক দরিদ্র অবস্থায় পড়েছে । কিছু কিছু দেশে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ব্যাপক বিক্ষেভেও মিছিলও হয়েছে। যদি এ সমস্যার সমাধান না হয় , তাহলে এসব দেশের পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে ।
মুদ্রাস্ফীতি ছিল আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় । এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাহী মহাপরিচালক রজত নাগ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, খাদ্য ও তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরে এশীয় অঞ্চলের মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.১ শতাংশে দাঁড়াবে এবং দশ বছরের মধ্যে তা সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করবে এবং গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । জানা গেছে , এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থা সবচেয়ে গুরুতর । সে দেশের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে । তবে সিংগাপুর , থাইল্যান্ড , ভারত , ফিলিপাইন্স ও ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার ৭.৫ থেকে ১১ শতাংশে দাঁড়াবে । নাগ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও অর্থ বিভাগকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন । তিনি এশিয়ার অর্থনৈতিক গোষ্ঠীগুলোকে দরিদ্রদেরকে নগদ টাকা ভর্তুকি দেয়ার পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তাবও দিয়েছেন ।
কিভাবে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আরো বাড়ানো যায় এবং দুর্নীতি কমানো যায় সেটি ছিল সম্মেলনের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় । সম্মেলনে অংশগ্রণকারীরা মনে করেন , দুর্নীতি দমন করতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়ানো দরকার। চীনের থিয়ান চিন মহরের মেয়র হুয়াং সিং কুও ফোরামে থিয়ান চিনের প্রশাসনিক অভিজ্ঞাতা বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন , থিয়ান চিন শহর ইন্টারনেটে সরকার অনুমোদিত প্রকল্প প্রকাশ করে । যাতে জনগণ প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে পারে । তিনি বলেন , প্রতিটি কাজের অগ্রগতি ও ফলাফল জনগণকে জানার কাজের দক্ষতা বেড়েছে । দুর্নীতিও অনেক কমেছে । জাপানের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী কাওয়াগুচি ইয়োরিকো বলেছেন , সরকারী প্রশাসনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হল দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং জনগণকে ব্যাপক তথ্য জানানো। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজও উদাহরণ দিয়ে বলেন , পাকিস্তানের রাজস্ব কর্মর্তারা নাগরিকদের আয় করের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত । সেজন্য অনেক দুর্নীতি দেখা যেত । তিনি অর্থ মন্ত্রী হওয়ার পর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কর আদায়কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন । এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার ৫ বছর পর পাকিস্তানে শুধু দুর্নীতি কমেছে তাই নয় , বরং কর আদায় থেকে দেশের রাজস্ব আয়ও দ্বিগুণ বেড়েছে । (শুয়েই ফেই ফেই)
|