v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-06-17 16:35:50    
দু' নারী পুলিশের কাহিনী

cri
    সিছুয়ান প্রদেশের ফোংচৌ শহরে চিয়াং মিন নামে এক জন সাধারণ নারী পুলিশ আছেন । তিনি চীনের সংখ্যালঘু ছিয়াং জাতির মানুষ । এবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাঁর বাবা-মা ও দু'বছর বয়সী একটি মেয়ে মারা গেছে । এই অবস্থায় তিনি নিজের শোক ও বেদনা মনে চেপে রেখে সম্মুখফ্রন্টে ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ভূমিকম্পেবাড়ি ধসে পড়েছে , সব কিছুই শেষ।

    ভূমিকম্প হওয়ার পর থেকে চিয়াং মিন ফোংচৌ শহরের থিয়েনফোং মাধ্যমিক স্কুলে কর্মরত আছেন । এখানে গৃহহারা ১৪০০জন কৃষকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ১৮ মে ভোরবেলায় আরেকটি দুর্গত পরিবার এখানে আসে । চিয়াং মিন তাদের জন্য তাবুর ব্যবস্থা করেন । তাবু বসানোর পর চিয়াং মিন ঘুমন্ত একটি বাচ্চাকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে মায়ের আদরে তার গায়ে লেপ জড়িয়ে দেন । বাচ্চাটির চেহারার দিকে তাকিয়ে চিয়াং মিন বলেন , মেয়ের কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে । বিশেষ করে আমার মেয়ের সমবয়সী বাচ্চাকে দেখলেই নিজের মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে । মা হিসেবে আমি সবসময় মেয়ের কথা মনে করি । ভূমিকম্প হওয়া থেকে এপর্যন্ত চিয়াং মিন একটানা ৫ দিন ধরে ত্রাণকাজে নিয়োজিত আছেন ।

    উল্লেখ্য , ভূমিকম্প হওয়ার সময় চিয়াং মিন অফিসে দায়িত্ব পালন করছিলেন । ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তিনি ত্রাণকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পরিবারের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, টেলিফোনেও আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি । কিন্তু আমি আশা ধরে রেখেছিলাম হয়তো তারা সবাই জীবিত আছেন । ভূমিকম্পের দ্বিতীয় দিন বাবা-মা ও মেয়ে নিহত হওয়ার খবর শুনে চিয়াং মিন মনের শোক ও বেদনা চেপে সংযম বজায় রেখে নিজের কর্মস্থানে থেকে যান । অবশেষে ক্লান্তির কারণে তিনি কর্মস্থলে পড়ে যান । চিয়াং মিনের সহকর্মী বলেন, বাবা-মা ও মেয়ের নিহত হওয়ার দুঃখে তিনি খান না , বাসায় ফিরে যান না । তিনি নিজের দুঃখ চেপে রেখে কাজ করতে অটল । বাবা-মা হারানো সন্তান এবং সন্তান হারানো মা হিসেবে চিয়াং মিন নিজের ভালবাসা ও স্মৃতি দুর্গত জনসাধারণের সেবার জন্য নিবেদন করেন । তিনি তাদেরকে সান্ত্বনা দেন, তাদেরকে সাহায্য করেন । যাতে তারা মহাবিপদেও প্রাণের ছোঁয়া অনুভব করতে পারেন । তিনি বলেন, যাতে দুর্গত লোকেরা সান্ত্বনা খুঁজে পান তার জন্য তিনি সর্বান্তকরণে চেষ্টা চালাবেন । তিনি বলেন , আমি মনে করি, এমন সময়ে আমি তুমি নির্বিশেষে আমরা সবাই এক পরিবারের লোক । যদি আমার বাবা-মা ও মেয়ে নিহত না হতো তাহলেও আমার বিশ্বাস , এখন তারা নিশ্চয় অন্য মানুষের কাছ থেকে এভাবেই সাহায্য পেতো ।

    সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের দুর্গত এলাকায় চিয়াং মিনের মতো সাধারণ ও মহান নারী পুলিশের সংখ্যা কম নয় । সিছুয়ান প্রদেশের চিয়াং ইউ শহরে চিয়াং সিয়াওচুয়েন নামে আরেকজন বিশেষ পুলিশ নারী আছেন । তিনি একজন তরুণী মা । তার ছেলের বয়স মাত্র ৬ মাস ।তার মায়ের বুকের দুধের ওপরেই তার জীবন । অথচ ছেলেকে বাবা-মার কাছে রেখে চিয়াং সিয়াওচুয়েন ভূমিকম্পে বেঁচে থাকা বাচ্চাদের মা হয়ে তাদেরকে নিজের দুধ খাওয়ান ।

    ভূমিকম্প হওয়ার পর চিয়াং ইউ শহর দুর্গত এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে গ্রহণ করেছে । বাড়তি বিপুল মানুষের চাপে চিয়াং ইউ শহরে খাদ্য ও পানিসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে । পক্ষান্তরে মায়ের দুধ পানের জন্য অপেক্ষারত বাচ্চাদের মধ্যে কেউ কেউ মা হারিয়েছে । কারও কারও মা আহত হয়েছে অথবা আতঙ্কে কারও কারও মায়ের দুধ শুকিয়ে গেছে । ঠিক এমন জরুরী মূহুর্তে চিয়াং সিয়াওচুয়েন তাদের কাছে এসে মায়ের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন ।

    ১৪ মে থেকে এ পর্যন্ত চিয়াং সিয়াওচুয়েন দুর্গত এলাকার মোট ৮টি বাচ্চাকে নিজের দুধ খাইয়েছেন । তিনি তাদেরকে নিজের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেন, তাদেরকে নিজের দুধ খাওয়ালে নিজের ছেলের কথা আরও বেশি করে তাঁর মনে পড়ে । তিন বলেন, আমার ছেলে মায়ের দুধের পরিবর্তে এখন শুধু গুড়া দুধ খেতে পারে । দুর্গত এলাকার বাচ্চাদের তুলনায় সে সত্যি অনেক ভাগ্যবান ।

    চিয়াং মিন ও চিয়াং সিয়াওচুয়েন এখনো তাদের অজস্র সহকর্মীর সঙ্গে ত্রাণকাজের সম্মুখফ্রন্টে কর্মরত আছেন । গণ মুক্তি ফৌজ ও পুলিশের সাহায্যে দুর্গত এলাকার জনসাধারণ ধাপেধাপে সুষ্ঠু ও সুশৃংখল জীবনযাপন শুরু করছেন ।