সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ান ভয়াবহ ভুমিকম্পে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ হতাহতের কারণে দুর্গত অঞ্চলে জরুরি ওষুধের চাহিদা বিশাল। উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশ হচ্ছে চীনের প্রধান ঔষধ শিল্প কেন্দ্র। আজকের অনুষ্ঠানে আমি চিলিনের বহু ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের তত্পরতার সঙ্গে দুর্গত অঞ্চলে ওষুধ ও চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করার তথ্য জানাবো।
চাংছুন ইনস্টিটিউট অফ বায়োলোজিক্যাল গ্রোডাকটস হচ্ছে চীনের টিকা গবেষণা ও উত্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্র থেকেই চীনে প্রথম হেপাটাইটিস-এ টিকা তৈরি হয়েছে। ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পের পর তারা অবিলম্বে উত্পাদন ও বিক্রয় প্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাস করেছে। দক্ষিণ চীনের কোন এলাকার জন্য নির্ধারিত টিকা প্রথমেই তারা সিছুয়ানকে দিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্গত অঞ্চলের জরুরী প্রয়োজনীয় এক লাখ হেপাটাইটিস-এ টিকা ও এক লাখ এইচ.এফ.আর.এস টিকা দুর্গত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। এ ইনস্টিটিউটের উপ-মহাপরিচালক লি ওয়েন হুয়াং বলেন, 'দুর্গত অঞ্চলের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা অন্য অর্ডার বাতিল করেছি। এখন আমরা দিন রাত হেপাটাইটিস-এ টিকা তৈরি করছি। যাতে দরকার হলে আমরা সময় মতো সরবরাহ করতে পারি।'
লি ওয়েন হুয়াং বলেন, যদিও এভাবে উত্পাদন করলে কোম্পানির কিছু লোকসান হবে, তারপরও বিশেষ করে মানুষের প্রাণ বাঁচানো ও জরুরি চিকিত্সার ঔষধ প্রস্তুতকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদেরকে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতেই হবে।
সিউচাং ঔষধ গ্রুপ হচ্ছে চিলিনের আরেকটি বড় আকারের ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপের কর্মীরাও সারা রাত ধরে দুর্গত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিইনফেকটিভ, অ্যানালজেসিকস ও প্যাটুলিন উত্পাদন করছে। চাংছুন ও থোংহুয়া শহরে অবস্থিত এই কোম্পানির দুটি উত্পাদন কেন্দ্রে উত্পাদন দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। ১২ মের ভূমিকম্পের পর থেকে চিলিন প্রদেশের চাংইউয়ান ঔষধ কোঃ লিমিটেডের সকল কর্মী অতিরিক্ত সময় কাজ করে আসছেন। চাংইউয়ান ঔষধ কোঃ লিমিটেড সাকসিনাইলেটেড গেলাটিন ইনজেকটিম নামে জরুরী চিকিত্সা ও অস্ত্রোপচারের সময় আবশ্যকীয় একটি ঔষধ উত্পাদন করে। এখন চীনে কেবল দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এ রকম ঔষধ উত্পাদন করতে পারে। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানের চল্লিশ জনেরও বেশি কর্মী পালাক্রমে কাজ করছেন। কিছু কর্মী দিনে দশ ঘন্টার বেশি সময়ে কাজ করলেও কোন আপত্তি বা অভিযোগ তুলছেন না। কেউ কেউ কর্ম ক্ষেত্রেই খাচ্ছেন ও থাকছেন।
দিরুই ঔষধ কোঃ লিমিটেড অ্যান্টিবায়োটিক উত্পাদন করে। তারা দুর্গত অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী নিজের বিক্রয় নীতি পরিবর্তন করেছে। এই কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক সোং ছিয়াং বলেন, 'সিছুয়ান ও কানসুসহ দুর্যোগ কবলিত প্রদেশের সমস্যা মোকাবিলায় আমরা বিক্রয় নীতির পুনর্বিন্যাস করেছি। আমাদের কোম্পানি আগে সবসময় নগদ টাকার বিনিময়ে ঔষধ সরবরাহ করতো। কিন্তু দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে আমরা জরুরী অবস্থায় টাকা দেয়ার আগে ঔষধও পাঠিয়েছি।'
বিভিন্ন ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরোদমে ওষুধ উত্পাদন করার পাশাপাশি সাহায্য হিসেবে দুর্গত অঞ্চলকে ঔষধ ও চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করছে। যেমন সিউচাং ঔষধ গ্রুপ দুর্গত অঞ্চলকে প্রায় ৪ কোটি ইউয়ান মূল্যের ওষুধ দিয়েছে। দুর্যোগ হওয়ার পর দিরুই ঔষধ কোঃ লিমিটেড প্রথমে ১৬ লাখ ইউয়ানের অ্যান্টিবায়োটিক দুর্গত অঞ্চলকে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত চিলিন প্রদেশের ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্গত অঞ্চলকে মোট ১১ কোটি ইউয়ানের ওষুধ ও চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম সাহায্য দিয়েছে।
চিলিন প্রাদেশিক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন ও পরিবহনের জন্য নিজেরাও কাজ করছেন। ১৬ মে চিলিনের প্রথম দফা ঔষধ দুর্গত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। ঔষধ সময় মতো পাঠানোর জন্য চিলিন প্রদেশের ঔষধ ও চিকিত্সা ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর কর্মকর্তারা এবং ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা একসাথে সারা রাত কাজ করেছেন। চিলিন প্রদেশের ঔষধ ও চিকিত্সা ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহাপরিচালক সুই দিয়ান জুন বলেন, 'কিছু কিছু ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের আস্থান চিলিনের রাজধানী চাংছুন থেকে অনেক দূরে। কয়েক শত কিলোমিটারের দূরত্ব সত্বেও তারা রাতে সব ওষুধ গাড়িতে ভরে চাংছুনে আসেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুর্গত অঞ্চলকে ওষুধ পাঠানোর জন্য চাংছুনে গাড়ি থেকে ওষুধ নামানোর পর ভোর তিনটা বেজে যায়।'
চিলিন প্রদেশের চিকিত্সা ও ঔষধ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো সাহায্যের ওষুধের ব্যবস্থাপনা কঠোর করেছে। বিশেষ করে ওষুধের মানের তত্ত্বাবধান কাজ জোরদার করা হয়েছে। মহাপরিচালক সুই দিয়ান জুন বলেন, 'যদি কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান দুর্গত অঞ্চলকে সাহায্য দেয়ার অজুহাতে নিজেদের মজুদ ওষুধ শেষ করতে চাইলে অথবা বিক্রি যোগ্য নয় এমন ওষুধ দিতে চাইলে আমরা কোন মতেই অনুমোদন দেবো না। চীন সরকার উদ্ধার ও ত্রাণের জরুরী ঔষধের নামের তালিকা প্রকাশের আগে আমরা নির্ধারণ করেছি যে, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্গত অঞ্চলকে দেয়া ওষুধ অবশ্যই ত্রাণ কাজে ব্যবহারযোগ্য ও মানসম্পন্ন ওষুধ হতে হবে। আমরা সাহায্য হিসেবে কি পরিমাণ ওষুধ পাচ্ছি তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি না, বরং ওষুধের মান নিশ্চিত করছি।'
চীনের জাতীয় খাদ্য ও ঔষধ তত্ত্বাবধান ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর তথ্য মুখপাত্র ইয়েন চিয়াং ইং বলেন, সিছুয়ান দুর্গত অঞ্চলে অ্যান্টিবায়োটিক ও কিছু চিকিত্সা সাজসরঞ্জামের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দুর্গত অঞ্চলে মজুদ ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ওষুধের কারণে জরুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|